মিহি সুতার বুনন আর সারা শাড়িজুড়ে ঠাঁই পেয়েছে তাঁতির হাতের বহু রঙের দেশীয় নকশা। এ শাড়ির জন্ম হয়েছিল আদি ঢাকাতেই। মোগল আমলের এক বিস্ময়কর সৃষ্টি এই শাড়ি। বলা হচ্ছে বাঙালির হাতে তৈরি জামদানির কথা।
তবুও আবার রজনী আসিল,
জামদানি শাড়িখানি
পেটেরা খুলিয়া সযতনে দুলী
অঙ্গে লইল টানি।’
পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে উল্লেখ করা এই জামদানি শাড়িখানার সঙ্গে বড় যত্ন আর মায়া জড়িয়ে আছে বাঙালি নারীদের। শতভাগ বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তুলতে আদিকাল থেকেই রয়েছে জামদানির কদর।
আধুনিক যুগেও জামদানির টান বদলায়নি সামান্যটুকুও। তাই তো সম্প্রতি কান চলচ্চিত্র উৎসবেও অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনকে দেখা গেছে জামদানির আবহমান রূপে। তবে জামদানি শুধু শাড়ি নয়, এখন, ওড়না, পাঞ্জাবি, পাগড়ি, ব্যাগ, জুতাসহ আরও বহু ধরনের অনুষঙ্গে ব্যবহার হয়।
অনেক বছর ব্যবহারেও জামদানির রূপ থাকে প্রায় একই রকম। তাই যত্নের রকমও কিন্তু হয় আলাদা।
জামদানির বুনন হয় মূলত কার্পাস তুলা দিয়ে। খুব পাতলা ও হালকা জামদানির জন্য সুতা ব্যবহার করা হয় ৭০ থেকে ৮০ কাউন্টের। তাই জামদানি খুব সযত্নে ব্যবহার করতে হবে। শাড়ির রং ও জমিন একই রকম রাখতে খুব সাধারণ কিছু যত্নের বিকল্প নেই।
জামদানির যত্ন
জামদানির প্রধান যত্ন হলো তা ভাঁজ না করে গোল করে পেঁচিয়ে রাখা, এমনটাই বললেন নকশাকার ও ফ্যাশন হাউস বিবিআনার স্বত্বাধিকারী লিপি খন্দকার। তিনি বলেন, খুব গৎবাঁধা পদ্ধতিতে গাদাগাদি অন্য কাপড়ের সঙ্গে জামদানি রাখা যাবে না। লম্বা ও একটু মোটা পাইপ বা কাঠের লাঠির সঙ্গে পেঁচিয়ে রাখলে জামদানির জমিন দীর্ঘদিন একই রকম থাকে। এ ছাড়া জামদানি রোদে মেলে দিতে একেবারেই আলসেমি করা যাবে না। বর্ষার সময়ে আদ্রর্তার কারণে জামদানির জমিনে ফাঙ্গাস পড়ে যায়। এতে সুতা পচে জমিনের রং নষ্ট হয়। তাই রোদে মেলে দিতে হবে। তবে জামদানি সরাসরি খুব কড়া রোদে দেওয়া যাবে না। কড়া রোদ জামদানির জন্য ভালো নয়। বারান্দা বা হালকা ছায়া আছে এমন স্থান জামদানি রাখার জন্য উপযোগী। জামদানির সুতার শক্তি একই রকম রাখতে ও চাকচিক্য বাড়াতে কাটাই করাতে হবে।২ বা ৩ বছর পর তাঁতিদের দিয়ে কাটাই করালে শাড়ির জৌলুশ ফিরে আসবে। যে আলমারিতে শাড়ি রাখা হবে, সেটা পরিষ্কার রাখা জরুরি। এ ছাড়া কিছুদিন পরপর ভেতরের বাতাস যেন দুর্গন্ধ না হয়, খেয়াল রাখবেন সেদিকে।