যে ছয় কারণে ব্যক্তিগত জীবন আড়ালে রাখাই শ্রেয়
অনেকেই ব্যক্তিগত জীবনকে খোলা বই বানিয়ে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এর যেমন সুবিধা আছে, অসুবিধারও কমতি নেই। বেশ কিছু গবেষণার আলোকে উইনার স্পিরিট জানিয়েছে কেন ব্যক্তিগত জীবন আড়ালে রাখা দরকার। জেনে নেওয়া যাক সেগুলো।
১. কিছুদিন আগেই ভারতীয় অভিনেত্রী সামান্থা রুথ প্রভুকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, বিচ্ছেদের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, কীভাবে তিনি তা সামলেছেন? উত্তরে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘যখনই আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পোস্ট করি, তখনই অন্যদের আমাদের সম্পর্কে মন্তব্য করতে আমন্ত্রণ জানাই। তারা আমাদের নিয়ে কথা বলার অধিকার পেয়ে যায়। আর সেখানে “ভালো-মন্দ আর কুৎসিত” সবই থাকবে। আর এটাই স্বাভাবিক।’ আপনি আপনার ব্যক্তিগত জীবন যত কম শেয়ার করবেন, তত কম মানুষ সেখানে নাকগলানোর সুযোগ পাবে। আর আপনার যে বিষয়টি অন্যদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না, অন্যরা সেখানে আগবাড়িয়ে পরামর্শ বা মন্তব্য না করলেই আপনার জন্য সুবিধাজনক। এ জন্যই বলে, ‘গোপনে সুখী জীবন যাপন করুন’।
২. আপনি আপনার কাছের কোনো বন্ধু বা আত্মীয়ের কাছে কোনো একটা মুহূর্তে মনের কথা, রাগ, দুঃখ, অতীত বা অভিযোগ ঢেলে ফেললেন। এরপর আপনি আপনার এই কর্মকাণ্ড নিয়ে আফসোস করেছেন—এমন অনুভব আমাদের অনেকেরই আছে। তাই আমরা খুব রাগের মাথায় বা আবেগীয় মুহূর্তে যে ‘নাটক’ করে ফেলি, সেটাই যথেষ্ট। সেটা একান্তে হলে ভালো। দর্শক থাকলে সেটা আর আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। খানিক সময় বাদে আপনি ওই মুহূর্ত থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ঢুকে পড়বেন। কিন্তু যে আপনার ওই সময়ের সাক্ষী, সে বিষয়টি বয়ে নিয়ে বেড়াবে। আপনাকেও মনে করিয়ে দেবে। অন্যদের কাছেও সেটা হয়ে উঠতে পারে মুখরোচক গল্প। সেটা কি আপনার ভালো লাগবে? তাই ‘নাটক’ করার সময় খুব সাবধান!
৩. আপনার ব্যক্তিগত জীবনের কথা, বিশেষ করে ভুল বা কোনো নেতিবাচক ব্যাপার, অন্য লোকে যত কম জানবে, ততই সেটা আপনার জন্য ভালো। একইভাবে, আপনার ব্যক্তিজীবনে অনেকেই এসে ফাও উপদেশ, পরামর্শ দেবে। অন্যকে অন্যের কাজ করতে দিন। অন্যকে তো আর আপনি থামাতে পারবেন না। তবে সেগুলো গ্রহণ করবেন কি না, সেটা একান্তই আপনার ব্যাপার। নিজের জীবনে যত নিজের বোঝাপড়া দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন, ততই ভালো। আপনার জীবনটা আপনিই সবচেয়ে ভালো বোঝেন।
৪. নিরাপত্তার খাতিরেও ব্যক্তিগত জীবন ব্যক্তিগত রাখাই সমীচীন। আপনি কোথায় আছেন, কোথায় থাকেন, আপনার ঘরে কী আছে, আপনার হাতঘড়িটি কোন মডেলের, কত দাম, এগুলো যত কম অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন, আপনি ততটাই নিরাপদে থাকবেন। আপনার সম্পদও নিরাপদে থাকবে। আপনি কত ধনী আর কত সুখে আছেন, সেটা লোককে দেখানোর চেয়ে আপনার নিরাপত্তা আর সুখ সব সময়ই বড়।
৫. যখন আপনি অন্যের মন্তব্য, লোকে কী বলল, এটাকে বেশি গুরুত্ব দেবেন, এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন, তখন আপনার মানসিক শান্তি অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। আর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, নিজের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক—সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনি ‘ফোকাস’ হারাবেন।
৬. আপনি যত বেশি মানুষের সঙ্গে নিজের জীবন ভাগ করে নেবেন, আপনি ততই কাছের মানুষদের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা হারাবেন। বরং কাছের, বিশ্বস্ত ও আপন মানুষদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করুন।
তার মানে এই না যে আপনি কাউকে কিচ্ছু বলবেন না। অবশ্যই আপনার কাছের ও বিশ্বস্ত মানুষদের সঙ্গে জীবনের খুঁটিনাটি ভাগ করবেন। বিপদে সাহায্য চাইবেন। প্রয়োজনে পরামর্শ চাইবেন। আপনার আনন্দ, দুঃখও ভাগ করে নেবেন। তবে শুধু শুধু ব্যক্তিগত জীবনের এমন কিছু শেয়ার করবেন না, যাতে নিজের নিরাপত্তা আর শান্তি বিঘ্নিত হয়। আর অন্যের আপনার সেই ব্যক্তিগত তথ্য কোনো কাজে লাগে না।