বাবা, তোমাকে বলা হয়নি
মায়ার অন্য নাম
আজ জুন মাসের তৃতীয় রোববার, বাবা দিবস। বিশেষ এই দিবস উপলক্ষে পাঠকের কাছে লেখা আহ্বান করেছিল গোদরেজ প্রটেক্ট ম্যাজিক হ্যান্ডওয়াশ ও প্রথম আলো অনলাইন। ‘বাবা, তোমাকে বলা হয়নি’ শিরোনামে বিপুলসংখ্যক পাঠক লিখেছেন তাঁদের মনের কথা। নির্বাচিত লেখাগুলোর একটি প্রকাশিত হলো এখানে।
মায়া। একেক জনের কাছে এর উদাহরণ একেক রকম। আমার কাছে মায়া মানে কী জানো বাবা? তোমার মুখে ‘মা’ ডাক শোনা। তুচ্ছ কারণে ভীষণ রেগে গেলে পাশে বসে নানা উপায়ে আমার রাগ ভাঙানো। আমার চশমার কাচ পরম মমতায় তোমার নিজের শার্ট দিয়ে মুছে দেওয়া। উশকোখুশকো চুলে যত্ন করে তেল লাগিয়ে দেওয়া।
কিন্তু এখন আর সারা দিনের ক্লান্তি শেষে বলতে পারি না—বাবা, আমার চুলে তেল দিয়ে দাও। কোনো এক ছুটির বিকেলে বায়না ধরতে পারি না—বাবা, চলো কোথাও ঘুরতে যাই। ক্লাস শেষে হঠাৎ করেই তোমার অফিসে গিয়ে আবদার করতে পারি না—খুব গরমে হেঁটে এলাম, জলদি আমাকে আইসক্রিম খাওয়াও।
জানো বাবা, এখন রাস্তা পার হওয়ার সময় মনের অজান্তেই খুঁজে বেড়াই তোমার দুটি নির্ভরতার হাত। যে হাতের ওপর শতভাগ আস্থা রেখে রাস্তা পার হওয়া যায় খুব সহজেই।
তুমি জানো বাবা, এখনো শীতকালে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়, সেই ছোট্টবেলার মতো। কিন্তু তোমাকে বলতে পারি না, বাবা আমার হাত-পায়ে একটু লোশন মালিশ করে দাও। এই তো, কিছু দিন আগে জ্বরে ভুগছিলাম। তোমাকে খুব করে বলতে ইচ্ছে হয়েছিল, ‘বাবা, আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেবে?’ হয়নি বলা। কেন জানি না।
তোমার মধ্যেই আমি আমাকে খুঁজে পাই। আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা তুমি। আমার ভুলে ভরা জীবনের সঠিক সমাধান তুমি। যেখানে নেই কোনো বাধা-বিপত্তি, নেই কোনো অনুশোচনা, নেই কোনো পিছুটান। আছে শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা আর অফুরন্ত স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা। তোমাকে কখনো বলতে পারিনি, সবাই তো সুখের ভাগই চায়। কিন্তু আমি তোমার কষ্টের ভাগ নিতে চাই। তোমার পাশে থেকে কাটিয়ে দিতে চাই আমার এই ছোট্ট জীবন।
সবাই বলে, কাউকে কখনো অন্ধবিশ্বাস করতে নেই। আর আমি বলি, বাবা ছাড়া কাউকে কখনো অন্ধবিশ্বাস করতে নেই। ইট–পাথরের ব্যস্ত নগরীতে আমার প্রশান্তির উৎস তোমার হাসিমুখ। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মনে হয়, বাবা কখন অফিস থেকে আসবে। আর আমি কলিং বেল বাজার আগেই দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে বাবাকে জড়িয়ে ধরব। তোমাকে কখনো বলিনি, তুমি সামান্য অসুস্থ হলে অস্থির হয়ে যাই আমি। তুমি দুশ্চিন্তায় ভুগলে মাথাব্যথা আমারও হয়। তুমি কষ্ট পেলে বুকের বাঁ পাশে আমিও অনুভব করি চিনচিনে ব্যথা।
‘শোনো না বাবা...’ থেকে ‘তোমাকে বলা হয়নি...’ সময়টুকুর মধে৵ আমি বড় হয়ে গেছি বাবা। কিন্তু আমার অভ্যাসগুলো কি কখনো বড় হবে? কখনো কি বুঝব, মন চাইলেই সারা জীবন বাবার ছায়ায় ভরসা রেখে চলা যায় না? নিজেকে স্বাবলম্বী বানানোর নানা উপায় তুমি আমাকে শিখিয়েছ। কিন্তু বলতে পারো, আমার এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো কী করে স্বাবলম্বী হবে?
সন্তানেরা কেন বড় হয় বাবা? জীবনের প্রয়োজনেই কি সন্তানের কাছ থেকে ধীরে ধীরে বাবার ছায়া দূরে সরতে থাকে?
কিন্তু আমি চাই, আমার মাথার ওপর থাকা আকাশটার অন্য নাম হোক তোমার ছায়া। আমার জীবন জড়িয়ে থাকা প্রাপ্তির অন্য নাম হোক তোমার মায়া।
বাবা, তুমি ভালো থাকো। তোমার ভালো থাকাতেই আমার সুখ।