‘মা, বাবা, ভাইয়া থাকলে ভয়ের কী’

২০ ডিসেম্বর বাংলা চ্যানেল জয় করতে নেমেছিল ঢাকার খুদে সাঁতারু সৈয়দা লারিসা রোজেন। সাড়ে চার ঘণ্টায় ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার চ্যানেলের ৮ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়িও দিয়েছিল। তবে বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল হয়ে উঠলে লারিসাকে থামতে হয়। কিন্তু থামেনি ১০ বছর বয়সী মেয়েটির বাংলা চ্যানেল জয়ের আকাঙ্ক্ষা, আগামী মার্চে সে আবারও সাগরে নামবে।

বঙ্গোপসাগরে সাঁতার কাটছে লারিসা

প্রশ্ন :

সাগরে নামার সাহস পেলে কোথায়?

বাবার কাছে...।

প্রশ্ন :

বাবার কাছে?

হ্যাঁ, বাবাই (সৈয়দ আখতারুজ্জামান) তো আমাকে বাংলা চ্যানেলের গল্প বলেছে, সাঁতারে আগ্রহী করেছে।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

সাঁতারও কি বাবার কাছে শিখেছ?

প্রথমে সাঁতার শিখেছি গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের সুইমিং পুলে। সিনা আংকেল (প্রথম বাংলা চ্যানেল জয়ী দলের সদস্য ফজলুল হক) আমাকে সাঁতার শিখিয়েছেন। সেটা দুই বছর আগে।

ঢাকার খুদে সাঁতারু সৈয়দা লারিসা রোজেন

প্রশ্ন :

তারপর?

আমার ডিপে (মাঝপুকুরে) যেতে ভয় করত। বাবা জোর করে ডিপে নিয়ে যেত। ধীরে ধীরে সাহসী হয়েছি। তখন (গুলশানের) শাহাবুদ্দিন পার্কের পুকুরে সাঁতার কেটেছি।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

বাংলা চ্যানেলের বাছাইপর্বও তো সেখানেই হয়েছে...

হ্যাঁ। বাছাইয়ের সময় আমি চার ঘণ্টা সাঁতার কেটেছিলাম। লিপটন আংকেল (সর্বোচ্চসংখ্যকবার বাংলা চ্যানেল অতিক্রমকারী সাঁতারু লিপটন সরকার) আমাকে সিলেক্ট করেছিলেন।

প্রশ্ন :

গুলশানের পুকুর থেকে একেবারে সাগরে নেমে পড়লে...

বাংলা চ্যানেল অভিযানের আগে দুই দিন দুই ঘণ্টা করে আমরা সমুদ্রে প্র্যাকটিস করেছি। প্রথম যেদিন সমুদ্রে নামলাম, তখনই জেলিফিশ
কামড়েছিল। তাতে খুব কষ্ট হয় না, তবে একটু জ্বলে।

ভাই ও বাবার সঙ্গে লারিসা রোজেন
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

যেদিন বাংলা চ্যানেলে সাঁতার কাটতে নামলে...

বাংলা চ্যানেল সাঁতার শুরুর পর বারবার মুখের মধ্যে লোনাপানি ঢুকছিল। ফিলিংটা আমার ভালো লাগছিল না। তবে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সাগর এত উত্তাল ছিল, এত বড় ঢেউ আসছিল, ওপরে উঠে শ্বাস নিতে নিতেই মুখে পানি ঢুকছিল। কিছুটা গিলেও ফেলতে হয়েছিল!

প্রশ্ন :

সাগর এমন উত্তাল, তোমার ভয় করল না?

ভয় তো একটু করেছেই। তবে আমার কাছাকাছি সাঁতার কেটেছে বাবা আর ভাইয়া (সৈয়দ আরবিন আয়ান)। রেসকিউ বোটে মা (খাদিজা খানম) ছিলেন। মা, বাবা, ভাইয়া থাকলে ভয়ের কী!

বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে সমুদ্রে নামার সময় সৈয়দা লারিসা রোজেন
ছবি: গিয়াস উদ্দিন

প্রশ্ন :

তারপর তো তোমাকে সাঁতার থামাতে হলো?

আমি আরও যেতে চাইছিলাম। কিন্তু জোয়ার চলে আসছিল। রেসকিউ টিম বোটে উঠতে বলে।

প্রশ্ন :

আবার যাবে নাকি?

অবশ্যই, মার্চে আবার যাব, আমি বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা
করব।

প্রশ্ন :

সাঁতার কাটা ছাড়া আর কী করো?

ঢাকার প্লে পেন স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। পড়াশোনা ছাড়া ভরতনাট্যম, মণিপুরি নাচি। গান গাই। আগে কারাতেও শিখতাম। এই যে এখন নাটকের রিহার্সাল করছি...

প্রশ্ন :

কত কিছু পারো তুমি...

হুম্‌, হা হা হা... (এতক্ষণে লারিসার হাসি হয়তো থেমেছে)!