মলদ্বারের রক্তপাতে অবহেলা নয়
আমাদের দেশে নারীরা পায়ুপথের নানা সমস্যা এড়িয়ে যান বা লুকিয়ে রাখেন। অনেকেই চিকিৎসকের কাছেও সহজ হতে পারেন না। মলদ্বারের রক্তপাতের মতো বিষয়ও চেপে যান অনেকে। অস্বস্তি হলেও ভাবেন, এটা তো মাত্র কয়েক দিনের সমস্যা। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কোনো সমস্যা আকস্মিক দেখা দিলে বা খুব কম সময়ের মধ্যে বেড়ে গেলে তা ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আর সমস্যা চেপে রাখার কারণে আমাদের দেশে নারীদের ক্ষেত্রে পায়ুপথের ক্যানসার অনেকটা ছড়িয়ে পড়ার পর ধরা পড়ে। কিন্তু আগে ধরা পড়লে স্তন ক্যানসারের মতো পায়ুপথের ক্যানসারও নিরাময়যোগ্য।
মলের সঙ্গে তাজা রক্ত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাইলসের লক্ষণ। অস্ত্রোপচারে এটি সম্পূর্ণভাবে নিরাময় সম্ভব। তবে রক্তের রং পরিবর্তিত হয়ে গেলে, কালচে, আমযুক্ত রক্ত, সঙ্গে পেটে মোচড় দিয়ে পায়খানা ক্যানসারের লক্ষণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
কালো দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানা হলেও অনেকে আমলে নেন না। কেউ কেউ আবার এ সমস্যার জন্য নিজে নিজেই অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন। কিন্তু কালো দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানা রক্তপাতের কারণে হতে পারে। বিশেষত মলদ্বারের কাছে না হয়ে ক্যানসার যদি ওপরের দিকে হয়, এমনকি পাকস্থলীতে হলেও এমন কালো পায়খানা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগীকে রক্তশূন্য এবং ফ্যাকাশে দেখাবে। কাজেই হঠাৎ ফ্যাকাশে বা রক্তশূন্যতা পায়ুপথ বা বৃহদন্ত্রের ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে।
তবে সাধারণ পরিচিত সমস্যা, যেমন ব্যথা-বেদনা, মলত্যাগের কারণে ফোঁটা ফোঁটা রক্তপাত, এগুলো খুব কম ক্ষেত্রেই ক্যানসারের কারণে হয়। এগুলো ‘এনাল ফিসার’-এর কারণে হতে পারে। এতে পায়ুপথ ছিঁড়ে রক্তপাত হয়। ছোট্ট অস্ত্রোপচারেই এ সমস্যা নিরাময় হয়ে যায়। কখনো কখনো শুধু খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন করেও রোগী ভালো থাকতে পারেন।
কিন্তু কোনো ব্যথা-বেদনা ছাড়া রক্তপাতকে গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখবেন, বেশির ভাগ ক্যানসারে প্রাথমিকভাবে ব্যথা থাকে না। চিকিৎসক পায়ুপথে আঙুল দিয়ে পরীক্ষা করতে চাইলে বাধা দেবেন না। বেশির ভাগ পায়ুপথের ক্যানসার মলদ্বারের কাছে হয়। আঙুল দিয়ে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক সেটা নির্ণয় করতে পারেন।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ক্যানসার সার্জারি, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী