লন্ডনের পাম ট্রি ব্যাংকুয়েট হল সেদিন হয়ে গিয়েছিল এক টুকরো বাংলাদেশ। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি, সন্ধ্যা। একজন আরেকজনকে দেখে ছুটে যাচ্ছিলেন। জড়িয়ে ধরছিলেন। কত দিন পর দেখা!
এরা সবাই ড্যাফোডিলের অ্যালামনাই। কেউ পড়েছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে, কেউ পড়েছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি (ডিআইএ) অথবা ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটিতে, কেউ পড়েছেন ড্যাফোডিলের অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এখন লন্ডনে। ‘ড্যাফোডিল অ্যালামনাই ইউকে পুনর্মিলনী ২০১৯’ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সবাই মিলিত হয়েছিলেন এই পামট্রি ব্যাংকুয়েট হলে।
অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রিটিশ হাউস অব লর্ডসের সদস্য ব্যারোনেস মঞ্জিলা পলা উদ্দিন এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ড্যাফোডিল পরিবারের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান। সম্মানিত অতিথি ছিলেন অক্সফোর্ড কালচারাল কানেক্টিভের চেয়ারম্যান ডোনাল্ড স্নোয়ান, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর এস এম জাকারিয়া হক এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ড্যাফোডিল পরিবারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ড্যাফোডিল পরিবারের শতাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ড্যাফোডিলের দুই অ্যালামনাই তাহমিনা ও সমর সাহা। আর অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিলেন ড্যাফোডিলের অ্যালামনাইরা।
পুরোনো সেই দিনের কথা
অনুষ্ঠানটি আক্ষরিক অর্থেই যেন হয়ে উঠেছিল স্মৃতির পুনর্জাগরণী সভা। প্রত্যেকে অতীতের স্মৃতি রোমন্থনের মাধ্যমে ফিরে যাচ্ছিলেন ড্যাফোডিলে পড়ালেখা করার দিনগুলোতে। ডিআইআইটির সাবেক কর্মী শেখ মনিরুল আলম যখন তাঁর মানিব্যাগের ভেতর থেকে ডিআইআইটির পরিচয়পত্র বের করে দেখান, তখন অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ‘এই কার্ড এখনো আছে আপনার কাছে!’ মনিরুল আলম হেসে বলেন, ‘১২ বছর ধরে এই আইডি কার্ড বহন করছি আমি। কর্মজীবনে অনেক আইডি কার্ড পেয়েছি, কিন্তু ড্যাফোডিলের এই কার্ড কখনো ফেলিনি। কারণ, ড্যাফোডিলের সঙ্গে সম্পর্কটা অনেক গভীর।’ মনিরুল আলম লন্ডনে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন, বর্তমানে সেই কলেজের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আনোয়ার হোসেন শোনালেন তাঁর গর্বের কথা, ‘আমি যে সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছি, সেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ সফটওয়্যার প্রকৌশলী ড্যাফোডিলের। এটা আমার জন্য খুবই গর্বের ব্যাপার।’
আনোয়ারের কথা শেষ হলে মাইক্রোফোন তুলে নেন এমদাদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি যখন লন্ডনে আসি, তখন কয়েকজন বড় ভাই পেয়েছিলাম, যাঁরা ড্যাফোডিলে আমার সিনিয়র ছিলেন। লন্ডনে আসার পর তাঁরা আমাকে এতটা সহযোগিতা করেন যে আমার থাকা, খাওয়া, পড়ালেখা—কোথাও কোনো সমস্যা বুঝতে দেননি। একদম আপন বড় ভাইয়ের মতো আগলে রেখেছিলেন।’ এমদাদ যাঁকে বিয়ে করেছেন, তিনিও ড্যাফোডিলেরই শিক্ষার্থী।
এই সব চোখভেজানো অনুভূতি প্রকাশের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো দৃশ্য ছিল বাংলাদেশকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সবার ঐক্যবদ্ধ শপথ গ্রহণের পর্ব। অনুষ্ঠানের শুরুতে ড্যাফোডিল পরিবারের অ্যালবাম থেকে নেওয়া ছবির উপস্থাপনা অনুষ্ঠানটিকে আরও বেশি প্রাণবন্ত করে তোলে।
বুকের ভেতর বাংলাদেশ
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারোনেস মঞ্জিলা পলা উদ্দিন বলেন, ‘ড্যাফোডিলের অগ্রযাত্রা বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে, সুনাম ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বব্যাপী। ইতিমধ্যে অনেক দেশে এর কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়েছে এবং অল্প সময়েই বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে।’
অনুষ্ঠানে মো. সবুর খান বলেন, ‘বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকি না কেন, আমরা প্রত্যেকে বুকের ভেতর বাংলাদেশকে লালন করি এবং সর্বতোভাবে চাই যে বাংলাদেশ একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত দেশে পরিণত হোক। আমরা যাতে সম্মিলিতভাবে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি, সে জন্য “নন রেসিডেন্স ড্যাফোডিল অ্যালামনাই” লন্ডন চ্যাপটার নামে একটি ওয়েবসাইট ইতিমধ্যে তৈরি করেছি। এটিই হবে প্রবাসে বসবাসকারী ড্যাফোডিল অ্যালামনাইদের সাধারণ প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারবেন, নিজেদের আইডিয়া শেয়ার করতে পারবেন, মন্তব্য, পরামর্শ, অভিযোগ, অনুযোগ, সাহায্য-সহযোগিতা—সবকিছুই করতে পারবেন। ভবিষ্যতে বিভিন্ন দেশে বসবাসরতদের একই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা হবে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, উন্নত দেশগুলোর উন্নয়নের পেছনে বড় অবদান রাখে অনাবাসী (নন-রেসিডেন্ট) নাগরিকেরা।’
অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তব্য আর স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে অনুষ্ঠানের শেষ সময় ঘনিয়ে আসে। তবে বিদায়ের আগে বাংলাদেশে থাকা ড্যাফোডিলের সেই পুরোনো শিক্ষক ও সহকর্মীদের জন্য উপহারের বাক্স তুলে দিয়েছেন কেউ কেউ।
ড্যাফোডিল পরিবারের প্রায় ৬০ হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা পর্যায়ে কর্মরত আছেন। নর্থ আমেরিকান ড্যাফোডিল অ্যালামনাইদের জন্য নিউইয়র্কে এম্পায়ার ক্রুইজ শিপে আগামী ১৫ জুন পরবর্তী ড্যাফোডিল অ্যালামনাই পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হচ্ছে।