চলছে ভ্রমণের মৌসুম। সময় পেলেই বন্ধু কিংবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দে–ছুট। সারা বছরের ব্যস্ততার ক্লান্তি দূর করার জন্য বেড়ানোর সময়টুকু বেশ কার্যকর। বেড়াতে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপকরণ ব্যাগ। কোথায় যাচ্ছেন এবং কত দিনের জন্য যাচ্ছেন, সেটা বুঝে ব্যাগ বাছাই করা জরুরি। আবার একা গেলে এক ধরনের ব্যাগ, দুজন বা পরিবার সঙ্গে নিয়ে আরেক রকম ব্যাগ। ভ্রমণে লোকসংখ্যা বুঝে আপনার ব্যাগ নির্বাচন করা উচিত। ঘোরাঘুরির জন্য আজকাল নানা আকার ও নকশার ব্যাগ বাজারে পাওয়া যায়।
নিউমার্কেটের মায়ের দোয়া ব্যাগ বিতানের বিক্রয় ব্যবস্থাপক মো. আবুল কালাম জানান, শীতের সময় ট্র্যাভেল ব্যাগের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। একেকজনের একেক রকম ব্যাগের চাহিদা। কম সময়ের জন্য বা একা ঘুরতে যাওয়া তরুণ বয়সীরা কাঁধে ঝুলিয়ে নেওয়া ব্যাকপ্যাক বা ছোট ট্র্যাভেল ব্যাগ বেশি পছন্দ করে। আর পরিবার নিয়ে বের হলে বা একটু বেশি দিনের পরিকল্পনা থাকলে তাঁদের জন্য ট্রলিব্যাগ। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ভ্রমণের সময় কতজন মিলে ঘুরতে যাচ্ছেন বা কোথায় যাচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করে ভ্রমণ ব্যাগ বাছাই করুন।
প্রয়োজন যেমন, চাই তেমন
বাজার ঘুরে দেখা গেছে তরুণেরা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে ব্যাকপ্যাক। অল্প দিনের জন্য ভ্রমণে গেলে বর্তমানে সব বয়সীরাই ব্যাকপ্যাক সঙ্গে নিতে পছন্দ করেন। এই সময়ে নানা ধরনের হাতে ঝোলানো ব্যাগ দেখা যাচ্ছে ভ্রমণে। রাজধানীর আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেটের ভ্রমণ ব্যাগ কিনতে আসা এক তরুণীর সঙ্গে কথা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তামান্না রহমান বলেন, ‘ব্যাগ ফ্যাশনের একটি অনুষঙ্গ। তাই ভ্রমণের জন্য ফ্যাশনেবল ও সুন্দর নকশার ব্যাগ কিনতে চাই।’ তরুণেরা ভ্রমণ ব্যাগ কেনার সময় দুটো জিনিস লক্ষ রাখে। এক ফ্যাশনেবল, দুই ভ্রমণের পরে ব্যাগের অন্য ব্যবহার। ভ্রমণের পর ল্যাপটপ বহনের কাজ কিংবা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যাওয়া যায়।
বাহারি নকশা
বাজারে ফ্যাশনের চাহিদা মেটানো চমৎকার ডিজাইনের ভ্রমণের বিভিন্ন আকারের ব্যাগ রয়েছে। ব্যাগগুলোতে রয়েছে নানা আকার ও বাহারি রং। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা করে ও অনেক দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় বর্তমানে বাজারে পানিরোধক ব্যাকপ্যাকের জনপ্রিয়তা বেশি। সাইকেল প্যানিয়ার, কোরিয়ার কাপড়ের স্টাইলিশ ট্র্যাভেল ব্যাগ, চেম্বার ছাড়া ট্র্যাভেল ব্যাগ, চামড়ার এক্সক্লুসিভ ট্র্যাভেল ব্যাগ, মাল্টিপারপাস ট্র্যাভেল ব্যাগসহ বাজারে রয়েছে নতুন আঙিকের ব্যাগ। এ ছাড়া পাটের তৈরি ব্যাকপ্যাক ও ট্র্যাভেল ব্যাগও পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। পাট, চামড়া ও সুতা দিয়ে তৈরি বাহারি এই ব্যাগগুলো যেমন হালকা তেমনি ফ্যাশনেবল।
ব্র্যান্ড
ব্যাগপ্যাকার্স ও ফোর ডাইমেনশনের মতো দেশীয় ব্র্যান্ডের মধ্যে ব্যাগ যেমন রয়েছে, তেমনি বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে প্রেসিডেন্ট, টি ট্রাভেলস, ক্যামেল মাউন্টেইন, ব্ল্যাক ডায়মন্ড, উইলসন, পাওয়ার, অরনেট, পিয়ারি গার্ডেন, ফ্যান্টাসিয়া, লিভস কিং, মিনিস্টার, ম্যাক্স, ন্যাক্স, টার্গেট, টিডল ব্র্যান্ডের ব্যাগ ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারগুলোতে পাওয়া যায়। বাটা, অ্যাপেক্স বা ওরিয়নের দোকানেও পাবেন নানা রকম ব্যাগ।
কোথায় পাবেন
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্ক, আজিজ মার্কেটের গ্রাউন্ড ফ্লোর, নিউমার্কেট, মৌচাক মার্কেট, মিরপুর, পুরান ঢাকা ও বঙ্গবাজার ভ্রমণ ব্যাগের জন্য বিখ্যাত। এ ছাড়া জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানে ভ্রমণ ব্যাগ পাওয়া যায়।
দামদর
ডিজাইন, আকার, উৎপাদনকারী দেশ ও মানের ওপর ভ্রমণ ব্যাগের দাম নির্ভর করে। সাধারণত ১ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে সব ধরনের ভ্রমণ ব্যাগ পাওয়া যায়।
পরামর্শ
ভ্রমণে বের হওয়ার আগে কিছু জিনিস মনে রাখুন। ভ্রমণের সময় কেমন ব্যাগ চাই, এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ট্যুরিস্ট প্লাস প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মোরতাজা হাসান—
ভ্রমণের সময় বা ব্যাপ্তি অনুসারে ব্যাগেজ ঠিক করতে পারেন। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগ বা ব্যাগেজ আপনার ভ্রমণকে কষ্টকর করতে পারে। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ব্যাগের ভার ৫ থেকে ৬ কেজির বেশি যেন না হয়। দেশের বাইরে যেতে চাইলে ব্যাগ, ব্যাগেজের পরিমাণ ১০ কেজির মধ্যে রাখুন। উড়োজাহাজে ১০ কেজি ওজন পর্যন্ত ব্যাগ আপনি হাতে বহন করতে পারেন।
কখনো এমন হতে পারে যে, আপনি এমন কোথাও গেলেন, সেখানকার যে পণ্যটি আপনি কিনতে চান, সেটি পরে পাওয়ার সম্ভাবনা নাই। তাহলে কিনে ফেলুন। তবে সেটির ভার যেন আপনার ব্যাগ অতিরিক্ত চাপে না বাড়ায়, সেটিও নজরে রাখুন।
বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গোছানোর সময় হাত ব্যাগ বা লাগেজে ব্যাটারি, ব্যাটারি জাতীয় জিনিস রাখবেন না। এটা এয়ার ট্রান্সফার করা যায় না।