বৃষ্টিদিনে আচার ভালো রাখতে

আচার ভালো রাখতে রোদে দিন নিয়মিত

বর্ষার সময় অনেক সময় আচারে ছত্রাক পড়ে যায়। ছোটখাটো উপায়েই সেটার সমাধান হয়ে যাবে।

খাওয়ার সময় আচার না থাকলে খাওয়াটা ঠিকঠাক জমে উঠে না। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, আচার তৈরির উদ্দেশ্য সব সময় এক রকম ছিল না। মূলত খাদ্য সংরক্ষণের চিন্তা থেকেই এর উদ্ভাবন। খাদ্যদ্রব্যকে যে পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হতো, সেটিই এখন আচার নাম ধারণ করে জনপ্রিয় হয়েছে। খাবারে রুচি বাড়াতে আচারের বিকল্প কমই আছে। ভিটামিন সির অভাব পূরণ করতেও আচারের ভূমিকা আছে। বর্ষায় বিভিন্ন পদের খাবার, হোক সে ভুনা খিচুড়ি কিংবা বিরিয়ানি, সঙ্গে আচার যেন যোগ করে বাড়তি স্বাদ।

বৃষ্টির দিনগুলোতে আচারে ছত্রাক পড়তে পারে। তাই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।

ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টপূর্ব ২০৩০ সালে মেসোপটেমিয়ানরা শসার আচার তৈরি করেছিল। শুধু শসা নয়, গাজর, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, বেগুন, টমেটো, বরবটি, ওল, ওলকপি, ফুলকপি, করলা, মুলা, মানকচুসহ দৃশ্যমান প্রায় সব ধরনের সবজি দিয়েই আচার তৈরি করা যায়। আমাদের দেশে মৌসুমি ফল আম, তেঁতুল, জলপাই, চালতা, কুল, লটকন প্রভৃতি ফলের আচারের প্রচলন দীর্ঘদিনের। শীতের সময় তেমন সমস্যা না হলেও বর্ষা আসতে না আসতেই অনেক সময় আচারে ছত্রাক পড়ে যায়।

সাধারণত টকজাতীয় ফলমূলে পানি বা বাতাসের উপস্থিতিতে ছত্রাক জন্মায়। এতে আচারের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। আচারকে ফাঙ্গাসমুক্ত রাখার পদ্ধতি জানালেন গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের ফুড অ্যান্ড নিউট্রেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেহানা বেগম।

আচার ভালো রাখার পরামর্শ

. যে উপকরণের আচার বানাবেন, তা ধোয়ার পর ভালো করে পানি ঝরিয়ে শুকিয়ে নেবেন। সম্ভব হলে সূর্যের আলোয় কিছুক্ষণ রেখে দিতে পারেন।

. আচারে ছত্রাক পড়ার বড় কারণ পানি। আচারে যে তেল ব্যবহার করা হয়, তাতে অনেক সময় পানি থাকে। শর্ষে থেকে শর্ষের তেল সংগ্রহ করার সময় পানি ব্যবহার করা হয়, যা পরবর্তী সময়ে ফিল্টার করার পরও কিছুটা হলেও থেকে যায়। তাই আচারকে ছত্রাক থেকে রক্ষা করতে আচারে তেল দেওয়ার আগে তেলটাকে কড়াইয়ে জাল দিয়ে নেওয়াটা খুব জরুরি।

. আচার ভালো রাখার জন্য বেশি পরিমাণ তেল ব্যবহার করতে হবে। আচারের ওপর তেলের একটা আস্তরণ যেন থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কারণ, তেল আচারে বাতাস ঢুকতে বাধা দেয়। এতে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যাকটেরিয়া টিকতে পারে না।

. প্রিজারভেটিভ হিসেবে ভিনেগার ব্যবহার করবেন। তবে পরিমাণমতো লবণও প্রিজারভেটিভ হিসেবে ভালো কাজ করে। এটি স্বাদ ও গন্ধ অটুট রাখে এবং আচার সুস্বাদু করে তোলে। সঠিক মাত্রায় লবণ ব্যবহার না করলে আচারে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে। এমনকি তা নষ্টও হয়ে যেতে পারে। সোডিয়াম বেনজয়েট অ্যাসিড ও সোডিয়াম বেনজয়েট দিলে আচার দীর্ঘদিন ভালো থাকে। লবণ, চিনি, ভিনেগার, মসলা দিয়ে তৈরি আচার কয়েক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।

. আচার তৈরির সময় অবশ্যই তাপের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, পর্যাপ্ত তাপ না পেলেই বরং ছত্রাক আক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। বর্ষার মৌসুমে টানা বৃষ্টির জন্য রোদের দেখা পাওয়া যায় না। তখন অন্তত তিন-চার দিন পরপর আচারের পাত্র খুলে পরীক্ষা করতে পারেন। ভালো তাপমাত্রায় গরম করে নিতে পারেন। এতে আচার ফাঙ্গাসমুক্ত থাকবে।

. আচার সংরক্ষণ করার জন্য সব সময় কাচের পাত্র ব্যবহার করা উচিত। প্লাস্টিকের জারে আচার রাখলে তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। তবে যে পাত্রে আচার রাখবেন, সেটি ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।

. আচার বয়াম থেকে নেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে হাতের স্পর্শ না লাগে। পরিষ্কার শুকনা চামচ ব্যবহার করুন। কোনোভাবেই যাতে আচার বাষ্পায়িত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

. ফ্রিজে আচার রাখলে তা দীর্ঘদিন ভালো থাকে। সাধারণত শুকনা ঠান্ডা জায়গায় ফাঙ্গাস পড়তে পারে না। প্রতিদিনের খাওয়ার জন্য একটি ছোট জারে আচার রাখতে পারেন। বারবার আচারের জার না খোলাই ভালো।

. আচারে কোনো কারণে তেলের পরিমাণ কম হলে তেল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে দিয়ে দিন। এতে আচার গন্ধমুক্ত থাকে।

. আচার বয়ামে রেখে ঠান্ডা শর্ষে তেল দিয়ে ডুবিয়ে ফেলুন। ভেতরে যেন কোনো বাতাস না থাকে, এ জন্য জারটি হালকাভাবে ঝাঁকিয়ে নিন। আচারে তেল দিয়ে ডুবিয়ে রাখলে কখনোই ফাঙ্গাস জন্মে না।