বুকে ব্যথা হলে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, তবে কি আমার হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে? হূদ্যন্ত্র ছাড়াও ফুসফুস, খাদ্যনালি, মাংসপেশি, পাঁজরের হাড় বা স্নায়ুর নানা সমস্যায় বুকে ব্যথা হতে পারে। এমনকি বুকে ব্যথা হতে পারে সাধারণ গ্যাস্ট্রিক, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণেও। কিন্তু তাই বলে বুকে ব্যথাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়াও ঠিক নয়। কেননা স্রেফ দেরিতে বোঝার পর চিকিৎসা শুরু করার কারণে হার্ট অ্যাটাকের অনেক রোগীর মৃত্যু হয়।বুকের মাঝে বা ওপর পেটে ব্যথার সঙ্গে বুক জ্বালাপোড়া, খাবারের সঙ্গে সম্পর্ক, টক ঢেকুর বা পেটে গ্যাস ইত্যাদি গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণই নির্দেশ করে। সাধারণ অ্যান্টাসিড বা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেলে এটি সেরেও যায়। এই ব্যথা সাধারণত কোথাও ছড়িয়ে যায় না এবং চাপ ধরে থাকে না। বুকের যেকোনো দিকে চিনচিনে ব্যথা, যা একটু নড়াচড়া করলে বা কাত হলেই বেড়ে যাচ্ছে, ধরে নিন তা মাংসপেশি থেকে আগত। নড়ন-চড়নে যে ব্যথা বাড়ে, তা হূদেরাগ হওয়ার কথা নয়। বুকের মাঝখানে চাপ চাপ ব্যথা যা হাত, পিঠ, গলা ও চোয়ালে ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছে, বুকটা দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে বা কোনো কিছু খামচে ধরে আছে বা ভারী কিছু চেপে বসেছে—এমন ব্যথা হলে সাবধান। এটি হতে পারে হার্ট অ্যাটাক। মুশকিল হলো যে হূদ্যন্ত্রের ব্যথা একেকজনের কাছে একেক রকম মনে হতে পারে। কারও কাছে বুক জ্বালাপোড়ার মতো মনে হতে পারে। কারও প্রচণ্ড ব্যথা হয় আবার ডায়াবেটিক ও বৃদ্ধদের আদৌ কোনো ব্যথা না-ও হতে পারে। তাই লক্ষ করুন:
n ব্যথা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে, কোনো কিছুতেই কমছে না। বিশ্রাম, অ্যান্টাসিড বা জিবের নিচে ওষুধেও কাজ হচ্ছে না।
n অতিরিক্ত ঘাম ও বমি ভাব বা বমি হচ্ছে কি না।
n বুক ধড়ফড় করা বা শ্বাস আটকে আসা বা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না।
n চোখে অন্ধকার দেখা, মাথা ঝিমঝিম করা, অচেতন হয়ে পড়া ইত্যাদিও মারাত্মক লক্ষণ।
n ব্যথা হূদ্যন্ত্রের কারণে মনে হলে বা সামান্যতম সন্দেহ হলেও অতি দ্রুত হাসপাতালে চলে যান। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া আপনি যদি আগে থেকেই হূদেরাগী হয়ে থাকেন, তবে দেরি করবেন না।
n ধূমপায়ী, পরিবারে হূদেরাগের ইতিহাস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওজনাধিক্য, রক্তে চর্বির আধিক্য ও কিডনি জটিলতা থাকলে আপনি হূদেরাগের ভয়ংকর ঝুঁকির মধ্যে আছেন। তাই সামান্য ব্যথাকেও অবহেলা করবেন না। l
মেডিসিন বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল।