‘কাভি খুশি কাভি গম’ সিনেমার স্টাইলিশ ‘পু’, ‘জাব উই মেট’-এর ‘গীতা’ বা ‘তাশান’ ছবির জিরো ফিগারের ‘পূজা সিং’! কারিনা কাপুরকে কেবল যদি বলিউডের বক্স অফিসের রানি বলা হয়, তো তাঁর নামের সঙ্গে অবিচার করা হবে। প্রতিটি সিনেমায় তিনি ফ্যাশন আইকন হিসেবে ভেঙেছেন প্রথা। কারিনা কাপুর অভিনীত বড় পর্দার আইকনিক চরিত্রগুলো বছরজুড়ে দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছে ভারতীয় ফ্যাশন অঙ্গনে। সম্প্রতি শেষ হওয়া ল্যাকমে ফ্যাশন উইকের শেষ দিনেও সব ক্যামেরা নিজের দিকে টেনে নিয়ে হেঁটেছেন তিনি। বিবিসি এশিয়ান নেটওয়ার্কের হারুণ রশিদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কারিনা কথা বলেছেন তাঁর ফ্যাশন আর জীবনযাপন নিয়ে। তারই চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন :
আপনি যখন সাইফ আলী খানকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সবাই নাকি নিষেধ করেছিল?
কারিনা কাপুর: হ্যাঁ, বিয়ে করতেই নিষেধ করেছিল অনেকে। সাইফকে বিয়ে করতে আরও বেশি করে নিষেধ করেছিল। বলেছিল, ক্যারিয়ারের উঁচু সোপানে দাঁড়িয়ে কোনো বুদ্ধিমান মেয়ে বিয়ে করে না। আর ডিভোর্সি পুরুষ তো একেবারেই না। আমি তাদের স্রেফ জানিয়ে দিয়েছি যে তাদের তৈরি করা কোনো ইঁদুর দৌড়ে আমি অংশ নিচ্ছি না। আমি অভিনেত্রী, আর বিয়ের পরেও তা-ই থাকব।
প্রশ্ন :
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এখন অনেকেই ফ্যাশনের মঞ্চে দেখা দিচ্ছেন। কিন্তু আপনার আগে কেউ সাহস করেননি। কেন তখন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
কারিনা: বিষয়টা এমন না যে আমার আগে কোনো বলিউড তারকা অন্তঃসত্ত্বা হননি! দর্শক কখনো একজন ভারতীয় অভিনেত্রীকে অন্তঃসত্ত্বা হতে দেখেননি। এর কারণ হলো, যখনই কেউ অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন, তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন। হয় যুক্তরাষ্ট্রে, নাহয় যুক্তরাজ্যে। নিদেনপক্ষে ঘর থেকে বের হননি। কেউ যাতে তাঁর মাতৃত্বজনিত স্ফীত শরীর দেখে না ফেলে, সেটিই ছিল তাঁদের প্রথম উদ্বেগের বিষয়। আমি ‘কফি উইথ করণ’ অনুষ্ঠানে গেলাম নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। এর ২০ দিন পর তৈমুরের (তৈমির আলী খান, কারিনা ও সাইফের প্রথম পুত্র) জন্ম হয়। আমি তো তৈমুরকে পেটে নিয়ে ল্যাকমে ফ্যাশন উইকের সমাপনী দিনের শো স্টপারও হয়েছি।
প্রশ্ন :
তবে লালগালিচায় আপনাকে টক্কর দেওয়া কঠিন। ২০১৬ সালে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে আমি ছিলাম রেড কার্পেটে। আপনি এলেন। আর সব ক্যামেরা আর মনোযোগ চলে গেল আপনার ওপর।
কারিনা: ওটাই সম্ভবত আমার ক্যারিয়ারের একমাত্র সময়, যখন আমি সুন্দর করে সেজেগুজে রেড কার্পেটে গিয়েছিলাম। আমার মেকআপ আর চুল একদম ঠিকঠাক ছিল। এখন আর এত ধৈর্য নেই। আসলে সব সময় ‘ডিভা’ হয়ে থাকতে ভালো লাগে না। বাইরে বের হওয়ার আগে আমার ম্যানেজার প্রায়ই চোখ বড় বড় করে বলে, ‘আপনি নিশ্চিত, আপনি এভাবেই বের হবেন?’ আমি বলি, ‘হ্যাঁ, কেন না। তাতে কী হয়েছে? এভাবে বের হওয়া কি অন্যায়?’ মাঝেমধ্যে আমি কেবল চুলটা ব্যান্ড দিয়ে আটকে, মুখে সামান্য ফেসপাউডার চেপে বের হয়ে যাই।
প্রশ্ন :
বিয়ের পর সাইফ আলী খান আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে কী বদল নিয়ে এল?
কারিনা: এমন না যে আমি বিয়ের আগে এক রকম ছিলাম, এখন এক রকম। কেউ কাউকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে, আমি বিশ্বাস করি না। তবে হ্যাঁ, সাইফ আমার জীবনকে আরও শান্তিময় করেছে। সাইফের কাছ থেকে আমার সবচেয়ে বড় শিক্ষাটা হলো, জীবনে পেশাগত সাফল্য, অর্থ, জনপ্রিয়তা এসবের চেয়ে চুপচাপ বসে থাকা, নিজের সঙ্গ উপভোগ করা বা পরিবারের কারও সঙ্গে আড্ডা দেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের আগে আমি কেবল বড় তারকা হতে চেয়েছি। আর বিয়ের পর আমি সুখী হতে চেয়েছি। আমি এখন আরাম করে বসে বই পড়ি, গল্প করি, বাচ্চাদের সঙ্গে খেলি। আমার এখন কোনো তাড়াহুড়ো নেই।
প্রশ্ন :
পেশাজীবন, ব্যক্তিজীবন আর পারিবারিক জীবনকে একটা ভারসাম্য দিয়েছে?
কারিনা: হ্যাঁ। একটা স্থিরতা দিয়েছে। যার ভেতরে অন্য ধরনের প্রশান্তি আছে। আমি ঠিক এমন জীবনই চেয়েছি। আমি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভালো সময়ে বিয়ে করতে চেয়েছি, আমি মা হতে চেয়েছি। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আমি কাজ চালিয়ে যেতে চেয়েছি। সন্তান জন্ম দিয়েই আমি আবার কাজে ফিরতে চেয়েছি। আর আমার মনে হয়, আমার নিজের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমি সুখী হয়েছি।