বাজারে টিকে থাকার জন্যই বাজার গবেষণা
নতুন কোনো ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে ভাবছেন? একটি নতুন পণ্য বা সেবা বাজারে আনার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বাজার গবেষণা।
বাজার গবেষণা কী?
সহজ করে বললে, আপনি যাদের সম্ভাব্য গ্রাহক মনে করছেন, তারা একটি পণ্য কিংবা সেবা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে প্রাধান্য দেয়, সে ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করাই হলো বাজার গবেষণা। ধরুন, আপনি একটি কাপড়ের দোকান দেওয়ার কথা ভাবছেন। আদৌ তার চাহিদা আছে কি না, কোন ধরনের কাপড়ের চাহিদা বেশি, প্রতিযোগী কারা, সমস্যা ও সম্ভাবনার জায়গাগুলো কী—এসব বিষয়ে নিশ্চয়ই আপনি তথ্য সংগ্রহ করবেন। এই তথ্য সংগ্রহ করাই হলো বাজার গবেষণা।
বাজার গবেষণা কেন করতে হয়?
প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে মানুষের অনেক চাহিদাই অপ্রকাশিত। বিশ্বে গাড়ির সবচেয়ে বড় কোম্পানির (উবার) নিজস্ব কোনো গাড়ি থাকবে না, সেটা কি কেউ কখনো কল্পনা করেছিল? কল্পনাশক্তি দিয়ে যা ভাবা কঠিন, কিন্তু বাস্তবে সম্ভব হতে পারে, এমন বিষয়গুলোর জন্যই বাজার গবেষণা করতে হয়। বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন গবেষণার সর্বোচ্চ ধাপ হিসেবে মানুষের সৃজনশীল কল্পনাশক্তিকে বিশ্বাস করতেন।
আজ যে পণ্য মানুষের চাহিদা পূরণ করছে, কাল সেটা বাজার থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যেতে পারে। ব্যবসার সার্বিক মুনাফার কিংবা টিকে থাকার লড়াইয়ের সঙ্গে বাজার বিশ্লেষণ করার সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি গভীর। কে ক্রেতা আর কে ভোক্তা কিংবা ইন্ডাস্ট্রির কোন ধাপের সঙ্গে নিজের পণ্যটি যাচ্ছে অথবা বাজারে এই পণ্যের মার্কেট শেয়ার কতটুকু আছে এবং ভবিষ্যৎ অবস্থান কী হতে যাচ্ছে—এই সবকিছুর সঙ্গে পর্যাপ্ত তথ্যের কার্যকরী গবেষণা জরুরি।
আবার হতে পারে, প্রতিযোগীদের পণ্যের চেয়ে আপনার পণ্যটি বিশেষ কী সুবিধা নিয়ে আসছে, সেটির যথার্থ প্রচার না করেই আপনি বাজারে পণ্য ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছেন। যা কিছু অন্যের থেকে ভিন্ন, সেটি ক্রেতাদের বোঝাতে হবে। অন্যথায় পণ্য তার বাজার তৈরিই করে নিতে পারবে না। পণ্যের জন্য বাজার গবেষণার কয়েকটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে পারে:
১. পণ্য অনুযায়ী বাজার ও প্রতিযোগীকে বোঝা
২. আমার ক্রেতা কারা, সেটি সঠিকভাবে অনুধাবন করা
৩. প্রতিযোগীদের তুলনায় আমার পণ্য কী কী বিশেষ সুবিধা দেবে, তা নির্ধারণ
৪. পণ্য বাজারজাতকরণের কৌশল নির্ধারণ
৫. সার্বিক বিচার বিশ্লেষণের পর পণ্যের প্রচারণা শুরু করা
স্বনামধন্য মার্কিন প্রকৌশলী ও শিক্ষক ডব্লিউ এডওয়ার্ড ডেমিংয়ের মতে, ‘তথ্য ছাড়া আপনি শুধুই ভিন্নমতের একজন মানুষ মাত্র।’ বাজার গবেষণার প্রথম ধাপেই আপনাকে নিজের পণ্যের বাজার বুঝতে হবে এবং সেই বাজারে কারা আপনার শক্তিশালী প্রতিযোগী, তাঁদের শনাক্ত করতে হবে। প্রতিযোগীদের ব্যবসার কৌশল বুঝে তাঁদের দুর্বল দিক এবং মূল শক্তিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করতে হবে।
যে ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার ব্যবসার পণ্য বা সেবাটি অবস্থান করছে, সেই ইন্ডাস্ট্রিকে বিশ্লেষণ করে বাজারে আপনার এবং প্রতিযোগীদের পণ্যের মার্কেট শেয়ার নিরূপণ করতে হবে। এ সবকিছু করার সময় আপনার ‘টার্গেট কাস্টমার’ কারা, সেটি নির্ধারণ করে ফেলুন। প্রতিযোগীদের তুলনায় আপনার পণ্য বা সেবা কী এমন বিশেষত্ব নিয়ে বাজারে হাজির হয়েছে, সেটি স্পষ্ট থাকতে হবে। অবশ্যই বাজারে টিকে থাকতে হলে অন্যের তুলনায় কিছু বিশেষত্ব থাকতেই হবে।
এবার আপনাকে কৌশলী হতে হবে। কীভাবে আপনি আপনার পণ্য বা সেবা বাজারজাতকরণ করবেন, সে ক্ষেত্রে বিশেষ কী আকর্ষণ রাখা যায়, যা ক্রেতাদের আপনার পণ্যের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে, সে বিষয়ে একটি পরিকল্পনা গুছিয়ে ফেলতে হবে। সার্বিক বিচার-বিশ্লেষণের পর আপনি আপনার পণ্যের প্রচারণা শুরু করতে পারেন।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক; ইনোভেশন, ক্রিয়েটিভিটি অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ সেন্টার, সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়