শোলেখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা রমেশ সিপ্পি ঢাকায় প্রথম আলো কার্যালয়ে এসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন প্রযোজক ও ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারস গিল্ড অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট মুকেশ ভাট। তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সহজ নয়। কিন্তু কথার শুরুতে বিষয়টা খুব সহজ করে দিলেন রমেশ সিপ্পিই। এত বড় মাপের একজন চলচ্চিত্রনির্মাতা যখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাফল্যের উল্লেখ করে খুব সহজ সুরে বলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও সফল হবে—তখন মনে আশা জাগে বৈকি।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে গত সোমবার দুপুরে ঢাকা পৌঁছেছেন ভারতীয় সিনেমার দুই প্রবাদপ্রতিম নির্মাতা ও প্রযোজক রমেশ সিপ্পি এবং মুকেশ ভাট। এটাই তাঁদের প্রথম বাংলাদেশ সফর। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাঁরা এসেছিলেন প্রথম আলো কার্যালয়ে।
শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরে রমেশ সিপ্পি বললেন, ‘বাংলাদেশে আমাদের আসার পেছনে তেমন কোনো এজেন্ডা নেই। আমরা এসেছি চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশ—এই দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার সম্ভাবনার বিষয়টা বুঝতে।’
একাত্তর সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিল—সে প্রসঙ্গ টেনে মুকেশ ভাট বললেন, ‘এবারে চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও আমরা পাশে দাঁড়াতে এসেছি।’ জানালেন, কিছু নিতে নয়, দিতেই এসেছেন তাঁরা। সহযোগিতার জন্য, পাশে দাঁড়ানোর জন্য, বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতেই তাঁদের এই সফর।
এ দেশে তাঁদের এই সফরের বিষয়টিকে নিয়ে কোনো সন্দেহ না রাখতে বললেন মুকেশ ভাট। বললেন, বাংলাদেশ, এ দেশের মানুষ, তরুণ প্রজন্ম ভালো কিছু করার জন্য ‘তৃষ্ণার্ত’ হয়ে আছে। সাফল্য আসবেই। শুধু প্রয়োজন সাহস নিয়ে সবাই মিলে এগিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া।
পাকিস্তানের চলচ্চিত্রশিল্পের উদাহরণ টেনে রমেশ সিপ্পি বললেন, কিছুদিন আগেও এমন একটা সময় ছিল যখন দেশটিতে পাঁচ-ছয়টির বেশি সিনেমা তৈরি হতো না। আর আজ ভারতের সঙ্গে চলচ্চিত্রবিষয়ক সহযোগিতা আর সমন্বয়ের কারণে দেশটির সিনেমা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের প্রসঙ্গে বললেন, পাকিস্তান যদি পারে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও অনেক সম্ভাবনাময়।
চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশ বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের কীভাবে মেলবন্ধন ঘটানো যায়, এ বিষয়টি তাঁদের এবারের সফরের মুখ্য বিষয় হলেও নির্দিষ্ট করেই জানালেন, আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই দুই দেশের চলচ্চিত্রবিষয়ক একটি সমন্বিত টাস্কফোর্স কমিটি গঠিত হবে। এ কমিটিই পরে সিদ্ধান্ত নেবে চলচ্চিত্র বিষয়ে সামনে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়। বললেন, ‘আমরা আমাদের মতামত ও পরামর্শ দেব। পাশে থাকব।’
টাস্কফোর্স প্রসঙ্গে রমেশ সিপ্পি আরও বলেন, এ দেশের চলচ্চিত্রের সাফল্যের অন্তরায় যেসব সমস্যা, সেগুলোকে চিহ্নিত করাই হবে এই টাস্কফোর্সের প্রথম কাজ। এরপর আছে সিনেমা হল বা থিয়েটারের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন।
‘আরেকটি বিষয়ও আছে’—রমেশ সিপ্পি বললেন, বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ভারতীয় ছবি বা সিনেমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে যে দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা, তা তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানাতেও তাঁরা এসেছেন।
মুকেশ ভাট রমেশ সিপ্পির কথার সূত্র ধরে বললেন, ঘর বন্ধ করে বসে থাকলে কিন্তু এগোনো যাবে না।
দুজনে প্রায় একসঙ্গেই বলে উঠলেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন এ দেশে প্রতিভা আছে, সম্ভাবনা আছে; প্রয়োজন শুধু সাহস আর বিশ্বাস নিয়ে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার। সাফল্য আসবেই। বাংলাদেশি তরুণ নাফিস বিন যাফরের অস্কার প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করে রমেশ সিপ্পি বললেন, এ দেশেরই তরুণ নাফিস অস্কার জিতেছে। এ দেশের ক্রিকেটের তরুণেরা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রেও সফল হতে পারবে। অবশ্য এর জন্য সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে, সহযোগিতা প্রয়োজন হবে সংবাদমাধ্যমেরও।
এ দেশের তরুণ চলচ্চিত্রনির্মাতাদের প্রতি রমেশ সিপ্পিকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করলে তিনি উজ্জ্বল মুখে বললেন, ‘আমি যখন শোলে বানিয়েছিলাম, সে সময় আমার কতই বা বয়স? সিনেমা হলে ম্যাকানাস গোল্ড-এর মতো ছবি দেখতে দেখতেই শোলে বানানোর স্বপ্ন জেগেছিল। আমি সে সময় বিদেশ থেকে সেরা সব কলাকুশলীর সহযোগিতা নিয়েছি, চলচ্চিত্রের প্রতিটি কারিগরি বিষয়ে কোনো আপস করিনি। শোলে জনপ্রিয় হয়েছে, ব্যবসাসফল হয়েছে।’
তরুণ নির্মাতাদের প্রতি বললেন, ‘পিছিয়ো না, সামনে এগোও, সাফল্য আসবেই।’
রমেশ সিপ্পি ও মুকেশ ভাটের সঙ্গে চলচ্চিত্রের নানা প্রসঙ্গ ছাড়াও আলাপ হয়েছিল তাঁদের ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় নিয়েও। সেসব নিয়ে বিস্তারিত পড়ুন প্রথম আলোর আগামী বৃহস্পতিবারের ক্রোড়পত্র ‘আনন্দ’-এ।