ফ্যাশন স্বর্গের রহস্য মানবী শ্যানেল

১৯২০ সালে কোকো শ্যানেল।উইকিপিডিয়া

‘‘আমার জীবন আমাকে সব সময়ে মুগ্ধ করতে পারেনি, তাই জীবনকে আমি নিজের মতো করে গড়ে নিয়েছি।”

- কোকো শ্যানেল

ওপরের উক্তি বাস্তবিকই এক দর্পণ; এতেই বিম্বিত জীবনকে তাঁর মতো করে গড়ে এক নারীর আদ্যন্ত। প্রায় পথশিশু থেকে নিজেকে বৈভব-শিখরে উন্নীত করেছেন বিস্ময়কর মুনশিয়ানায়। ঘাত-প্রতিঘাত পেরোতে পেরোতে নিজেকে প্রত্যয় দৃঢ় করেছেন। সুযোগ হাতছাড়া না করে সদ্ব্যবহার করেছেন। সমাজের নিচুতলার তকমা সত্ত্বেও দাপিয়ে বেড়িয়েছেন কৌলীন্যের চৌহদ্দি। রাজপুত্র আর অভিজাত পুরুষেরা তাঁর সঙ্গ পেতে বেচাইন থেকেছেন।

আমার জীবন আমাকে সব সময়ে মুগ্ধ করতে পারেনি, তাই জীবনকে আমি নিজের মতো করে গড়ে নিয়েছি।
কোকো শ্যানেল

রহস্যময় নারীর পরিচয়ই তাঁকে বিশ্ববিশ্রুত করেছে। অথচ কোকো শ্যানেল নামের এই ভুবনমোহিনী ফ্যাশন ডিজাইনারের বহুরূপ আমাদের অজ্ঞাত। শ্যানেলের ১৩৭তম জন্মদিনের অবকাশে আলো ফেলার প্রয়াস তাঁর জীবনের অন্য সব অধ্যায়ে।

সরল অথচ আরামদায়ক

এটাই শ্যানেলের ডিজাইনের মূলমন্ত্র। এই বিশিষ্টতায় মাত করেছেন প্যারিসের ওত্ কতুর পরিমণ্ডল। ১৯২০-এর দশকে এসে শ্যানেলের টার্নওভার দাঁড়ায় কয়েক কোটি ডলার। সে সময় কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ২০০০। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এরই মধ্যে কেবল পোশাকের নকশা নয়, শ্যানেল সাম্রাজ্যে যুক্ত হয় কাপড়ের মিল, সুগন্ধি আর গয়নার কারখানা। যদিও তাঁর আর্থিক ভিত্তি সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে ১৯২১ সালে বাজরে ছাড়া শ্যানেল ফাইভ নামের সেই অবিস্মরণীয় সুগন্ধি। শতবর্ষের সরণিতেও যার আবেদন অবিকল।

তারুণ্যে কোকো শ্যানেল
উইকিপিডিয়া

এখানে বলে রাখা ভালো, শ্যানেলই বিশ্বের প্রথম ফ্যাশন ডিজাইনার যিনি সুগন্ধি বাজারে ছাড়েন। তাও চিরাচরিত বোতল আর মোড়কের ধারণাকে নস্যাৎ করে। সেই সময়ে প্যারিসের বিখ্যাত ডিপার্টমেন্ট স্টোর গ্যালারি লাফায়েতের মালিক থিওফাইল বেদারের মাধ্যমে পরিচয় হয় ব্যবসায়ী পিয়ের ওয়ারটাইমারের সঙ্গে। পিয়ের এবং তাঁর ভাই পলের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি করেন শ্যানেল। এর আওতায় শ্যানেল ফাইভের উৎপাদন, বিপণন ও বিতরণের দায়িত্ব পায় দুই ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান বোজোয়া। ফলে আয়ের সিংহভাগই চলে যায় পিয়ের ভাইয়ের কাছে। মাত্র ১০ শতাংশ পেতেন শ্যানেল। এ নিয়ে তাঁর বিস্তর উষ্মা ছিল।

সম্পর্ক

একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি ভাঙতে তিনি গড়েছেন নতুন নতুন সম্পর্ক। তবে কোনো সম্পর্ককেই তিনি একেবারে শেষ করে দেননি বা নতুন কাউকে পাওয়ার আনন্দে বল্গাহীন হয়ে পুরোনোকে বিস্মৃত হননি। এই তালিকায় অবশ্যই উল্লেখযোগ্য নাম মিসিয়া সার্ত। তিনি ছিলেন স্প্যানিশ চিত্রকর হোসে-মারিয়া সার্তের স্ত্রী। উভয়েই কনভেন্ট স্কুলে পড়ার কারণে বন্ধুত্ব ছিল প্রগাঢ়। দুজনেরই ছিল মাদকের প্রতি আসক্তি। ১৯৩৫ সাল নাগাদ মাদক গ্রহণ অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় শ্যানেলের।

তাঁর নাম কোকো হওয়ার নেপথ্যেও রয়েছে একটি ঘটনা। প্যারিসে একবার এক জাঁকজমকপূর্ণ কোকেন পার্টি দিয়েছিলেন তিনি। সেই থেকেই তাঁর নামের সঙ্গে কোকো শব্দটি জুড়ে যায়। এটাই হয়ে ওঠে তাঁর মূল নামের অংশ।

সুগন্ধি শ্যানেল ফাইভ দিয়ে বিপ্লব ঘটানোর দুবছরের মাথায় এক নতুন জগতে প্রবেশ করেন শ্যানেল। সেটা ছিল অভিজাত ব্রিটিশদের বলয়। এই বৃত্তে প্রবেশের চাবি ছিল ভেরা বেট লম্বার্ডি। মার্কেস অব কেমব্রিজের কন্যা। তাঁর মাধ্যমেই শ্যানেলের বন্ধুত্ব হয় তরুণ ব্রিটিশ রাজনীতিক উইন্সটন চার্চিলের সঙ্গে। এই তালিকায় আরও ছিলেন প্রিন্স অব ওয়েলস অষ্টম এডওয়ার্ড এবং ডিউক অব ওয়েস্টমিনিস্টার হিউ রিচার্ড আর্থার গ্রভেনার।

তরুণ রাজনীতিবিদ ও পরে ব্রিটেনেল প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিলের সঙ্গে কোকো শ্যানেল
উইকিপিডিয়া

প্রিন্স অব ওয়েলস আর ডিউকের সঙ্গে তিনি সমান্তরালে প্রেম করেছেন। যুবরাজ তাঁকে দিয়েছেন বেশুমার উপহার। ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরাররোকোব্রুন-ক্যাপ-মার্টিনে তাঁর জমি উপহার দেন শ্যানলকে ডিউক। স্থপতি রবার্টস্ট্রেইৎজকে দিয়ে সেখানে একটি বাড়ি বানিয়েছিলেন শ্যানেল। কৈশোরের অনেকটা দিন যে অনাথাশ্রমে কাটিয়েছিলেন, সেই ওবাজিনের স্মৃতিকে সজীব রাখেন এর নকশায়। নাম দেন লা পজা বা বিরাম। দীর্ঘদিন বাদে ১৯৩৫ সালে এই বাড়িটি তিনি বিক্রি করে দেন প্রকাশক এমারিরিভসের কাছে। এমারি সেটাকে রূপান্তর করে ডালাস মিউজিয়াম অব আর্টে।

তাঁর সম্পর্ক ছিল রাশিয়ার শেষ জার দ্বিতীয় নিকোলাসের জ্ঞাতিভাই ডিউক দিমিত্রি পাভলোভিচ রোমানভের সঙ্গে। এই সময়ে আরও পরিচয় হয় স্যামুয়েল গোল্ডউইনের সঙ্গে। স্যামুয়েলের প্রস্তাবে রাজি হয়ে দুবার হলিউডে গিয়ে এমজিএম স্টারসের জন্য কস্টিউম ডিজাইন করেছেন। এ জন্য তাঁকে সে সময়ে দেওয়া হয় ১০ লাখ ডলার। আজকের হিসেবে কম করে হলেও, সাড়ে সাত কোটি ডলার। ১৯৩১ সালে ‘টুনাইট অর নেভার’ ছবিতে গ্লোরিয়া সোয়ানসন, ১৯৩২ সালে ‘গ্রিকস হ্যাড আ ওয়ার্ড ফর দেম’ ছবিতে ইনা ক্লেয়ারের জন্য পোশাকের নকশা করেন। এমনকি গ্রেটা গার্বো আর মারলিন দিয়েত্রিশ তাঁর নিয়মিত ক্লায়েন্টে পরিণত হন। তবে হলিউডে তিনি সুবিধা করতে পারেননি। যদিও সেটা স্বীকার না করে হলিউডকে ‘নিম্ন রুচির রাজধানী’ বলে সমালোচনা করেন।

এমজিএম স্টারসের জন্য কস্টিউম ডিজাইন করার জন্য তাঁকে সে সময়ে দেওয়া হয় ১০ লাখ ডলার। ১৯৩১ সালে ‘টুনাইট অর নেভার’ ছবিতে গ্লোরিয়া সোয়ানসন, ১৯৩২ সালে ‘গ্রিকস হ্যাড আ ওয়ার্ড ফর দেম’ ছবিতে ইনা ক্লেয়ারের জন্য পোশাকের নকশা করেন শ্যানেল।

এরপরও তিনি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। বিখ্যাত ফরাসিপরিচালকজঁরেনোয়া আর ইতালির লুচিনোভিসকন্তির ছবির জন্য। এ ছাড়াতাঁর গভীর বন্ধুত্ব ছিল কবি পিয়েররিভারদি আর ইলাস্ট্রেটর ও ডিজাইনার পল ইরিবির সঙ্গে। পাবলো পিকাসো ওসালভাদর দালি আর জঁককতোর সঙ্গেও কাজের এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল কোকো শ্যানেলের।

সাম্রাজ্য হারানোর শঙ্কা

শ্যানেলের বৈপ্লবিক উদ্ভাবন লিটিল ব্ল্যাক ড্রেস বা এলবিডি
উইকিপিডিয়া

তিরিশের দশকেও শ্যানেলের ব্যবসা ছিল রমরমা। তবে এই দশক যত এগিয়েছে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন শ্যানেল। কারণ তত দিনে এসে গেছে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী নবীন ডিজাইনার এলসা শিয়াপারেল্লি। উদ্ভাবনী নকশা, সময়ের সুবাস আর তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে তাঁর নকশা ক্রমেই জয় করে নিচ্ছিল ফ্যাশনপ্রিয়দের হৃদয়। এরই মধ্যে বাজতে শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা।

অন্য ভূমিকায় শ্যানেল

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে কোকো শ্যানেল সমস্ত কার্যক্রম দুম করে বন্ধ করে দিলে চাকরি হারায় ৪ হাজার নারী কর্মচারী। এ সময় স্পষ্ট হয়ে যায় তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শও। ইহুদি বিদ্বেষ শ্যানেলের ছিলই। সেই পালে আরও বাতাস পায় ডিউক গ্রভেনারের সাহচর্য। এবার সেটা আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। ইউরোপের জন্য ইহুদিরা আতঙ্ক বলেও মন্তব্যের পাশাপাশি তাঁকে হিটলারের প্রশংসা করতেও শোনা যায়।

বার্লিনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির প্রস্তাবে রাজি হলে তাঁর নাম নিবন্ধিত হয় এফ-৭১২৪ হিসাবে। সেটা ১৯৪১ সালের কোনো এক সময়ে। তাঁর ছদ্ম নাম হয় ওয়েস্টমিনিস্টার।

এদিকে জার্মানি, ফ্রান্স দখল করলে তিনি হোটেল রিৎজে থাকতে শুরু করেন। এর কারণ ছিল জার্মান কূটনীতিক ব্যারন হানসগুন্টার ফন ডিনক্লেজ। তিনি আরও ছিলেন জার্মানির সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আবেয়ার-এর কর্মকর্তাও। এই ব্যক্তি ছিলেন হিটলারের খুব কাছের মানুষ এবং আস্থাভাজন। ডিনক্লেজের সঙ্গে সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে জার্মানদের কাছে বন্দী তাঁর ভাইপো অন্দ্রেপ্যালাসেকে তিনি মুক্ত করেন। এর জন্য ডিনক্লেজের মাধ্যমে তাঁর পরিচয় হয় আরেক আবেয়ার এজেন্ট ব্যারন লুই ডিভফ্রেল্যান্ডের সঙ্গে। ভাইপোর মুক্তির বিনিময়ে তিনি ভফ্রেল্যান্ডেরদেওয়া বার্লিনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির প্রস্তাবে রাজি হলে তাঁর নাম নিবন্ধিত হয় এফ-৭১২৪ হিসাবে। সেটা ১৯৪১ সালের কোনো এক সময়ে। তাঁর ছদ্ম নাম হয় ওয়েস্টমিনিস্টার। শ্যানেলের কর্মদক্ষতায় খুশি হওয়ায় তাঁর ভাইপোকে মুক্তি দেওয়া হয়।

এদিকে ১৯৪৩-এর শেষ আর ৪৪-এর শুরুর দিকে জার্মানদের অবস্থা পাল্টাতে থাকে। এই সময়ে নতুন মিশনে শ্যালেনকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন জেনারেল ওয়াল্টার শেলেনবার্গ। অপারেশন মডেল হ্যাট নামে এই মিশনের উদ্দেশ্য ছিল ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিলের সঙ্গে জার্মানদের সমঝোতার ব্যবস্থা করা। সে জন্য তিনি মাদ্রিদে গিয়ে সেখানে বন্দী তাঁর পুরোনো বন্ধু ভেরা লোমবার্দিকে মুক্ত করেন। কিন্তু ভেরা সবকিছু ফাঁস করে দেওয়ায় তাঁকে দিয়ে চার্চিলকে চিঠি পাঠানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। শ্যানেল অবশ্য ক্ষুরধার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নিরাপদে প্যারিস ফিরতে সমর্থ হন।

চুয়াল্লিশের আগস্টে জার্মানদের হাত থেকে ফ্রান্স মুক্ত হলে শ্যানেলকেপার্জ কমিটির মুখোমুখি হতে হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। সেখানেও সমস্যা হয়নি তাঁর। বরং ১৯৪৫ সালে তিনি সুইজারল্যান্ডে চলে যান।

তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চার্চিলের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব কাজে দেয়। গুপ্তচরবৃত্তির সাজা মওকুফ হয় চার্চিলের হস্তক্ষেপে।

চুয়াল্লিশের আগস্টে জার্মানদের হাত থেকে ফ্রান্স মুক্ত হলে শ্যানেলকেপার্জ কমিটির মুখোমুখি হতে হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। সেখানেও সমস্যা হয়নি তাঁর। বরং ১৯৪৫ সালে তিনি সুইজারল্যান্ডে চলে যান। সেখানে তিনি ডিনক্লেজের সঙ্গেই থাকতেন। যুদ্ধ শেষে তাঁকে ফরাসি আদালতের মুখোমুখি হতে হলেও তিনি নিজেকে চাতুর্যের সঙ্গে মুক্ত করতে সক্ষম হন। এমন কী, বেশ পরে জেনারেল শেলেনবার্গ সব তথ্য ফাঁস করার উদ্যোগ নিলে অসুস্থ জেনারেলের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় বহন করে শ্যানেল নিজের অতীতকে গোপন রাখতে সক্ষম হন। ফলে জেনারেলের আত্মজীবনী থেকে বাদ যায় শ্যানেল-কাণ্ড।

২০১৪ সালে ফরাসি সরকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে শ্যানেলের ভূমিকা সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশ করে। এ নথি থেকে জানা যায় তাঁর জীবনের অনেক অজানা তথ্য।

ডিজাইনারের বিপুল খ্যাতি, বর্ণাঢ্য আর দুঃসাহসিক জীবন, নতুনকে গ্রহণের অভীপ্সা, সমাজের উচ্চতর বলয়ে বিচরণ আর নিত্যনতুন পুরুষসঙ্গ এবং সমান্তরালে প্রণয় চালিয়ে যাওয়ার মুনশিয়ানা শ্যানেলকে দিয়েছে অনন্যতা। এই বৃত্তের আড়ালে তাঁর গুপ্তচর জীবন এবং তা থেকে নিজেকে মুক্ত করার অনবদ্য দক্ষতাও শ্যানেলের অন্য রূপকে প্রতীয়মান করে।

১৯৫৪ সালে তিনি আবারও বীরদর্পে ফেরেন প্যারিসের ফ্যাশন পরিমণ্ডলে। বিবাদ মেটে ওয়ারটাইমার পরিবারের সঙ্গেও। প্রিয় পারিতে প্রত্যাবর্তনের দিন থেকে পনুরায় থাকতে শুরু করেন হোটেল রিৎজে। তবে জীবনের শেষ দিনগুলো তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ। তখন তাঁর সঙ্গী বলতে কেবলই স্মৃতি। এই রিৎজেই ছিলেন ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি মৃত্যুর দিন পর্যন্ত।

কোকো শ্যানেল, মৃত্যুর এক বছর আগে ১৯৭০ সালে
উইকিপিডিয়া

মৃত্যুর পর শ্যানেলের সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন তাঁর সেই ভাইপো প্যালাসি। তবে প্রতিষ্ঠানের মালিকানা চলে যায় পিয়েরওয়ারটাইমারের উত্তরাধিকারদের কাছে। এরই মধ্যে শ্যানেলের প্রতিপত্তি দিনকে দিন কমতে থাকে। নানা হাতে পড়েও এই সাম্রাজ্যের ভাগ্য বদল হচ্ছিল না। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন আসে ১৯৮৩ সালে। শ্যানেলের চেয়ারম্যান তখন সেই পিয়েরওয়ারটাইমারের পৌত্র অ্যালেইন। তিনি আমন্ত্রণ জানান সময়ের অন্যতম সেরা ডিজাইনার কার্ললেগারফেল্ডকে। দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেন। যদিও অনেকেই কার্লকে নিষেধ করেছিলেন। বলেছিলেন, ওটা মৃত, ছুঁয়ো না; অকপটে সে কথাকার্ল জানিয়েও ছিলেন টাইম ম্যাগাজিনের সাক্ষাৎকারে। কিন্তু চ্যালেঞ্জটা তিনি নিয়েছিলেন। কারণ, জিয়নকাঠিটা তো ছিল তাঁর হাতেই। সেই জাদু স্পর্শেই প্রাণ পায় শ্যানেল। বাকিটা ইতিহাস।

শেষ কথা

লিটল ব্ল্যাক ড্রেস, জার্সি ফ্যাব্রিক, শ্যানেল স্যুট, সৃজনে স্লাভিক প্রেরণা, গয়না, ব্যাগ আর অবশ্যই আজও বিশ্ব মাতানো শ্যানেল ফাইভ সুগন্ধি- এসব এখনো শ্যানেল সিগনেচার। এরই মাঝে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন গ্যাব্রিয়েল বনহওর শ্যানেল থেকে কোকো শ্যানেল হয়ে ওঠা এক রহস্য মানবী।

তথ্যসূত্র: হ্যালভনেরস্লিপিং উইথ দিএনিমি, ব্রিটানিকা, উইকিপিডিয়া, ওয়ারহিস্ট্রিডটকম এবং অন্যান্য সূত্র