ফেসবুকে আপনি কি নিরাপদ?
হুট করে দেখলেন আপনার ফেসবুক দেয়ালে বিব্রতকর কিছু ছবি চলে এসেছে! তাও আবার আপনার বন্ধু তালিকায় থাকা কারও কাছ থেকে। আপনার বন্ধু তালিকায় থাকা অন্যরা যখন আপনার দেয়ালে এসে সেই ছবিগুলো দেখে বিব্রত হবেন। আবার যাঁর মাধ্যমে ছবিগুলো এসেছে, তাঁর সম্পর্কেও আপনার বিরূপ ধারণা হতে পারে। এ ছাড়া আপনার অতি ব্যক্তিগত ছবি কিংবা তথ্য ফেসবুকে আছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত কেউ ব্যবহার করলেও আপনি বিপদে পড়তে পারেন। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেস্কটপ ও মোবাইল ফোন থেকে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন সেবা ব্যবহার করছেন অনেকেই। ওয়েবসাইটের পরিসংখ্যান জানানোর ওয়েবসাইট অ্যালেক্সার তথ্যমতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হলো ফেসবুক। ব্যবহারের সময় যথেষ্ট সতর্ক না হওয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি অনাকাঙ্ক্ষিত কারও ব্যবহার করা, অ্যাকাউন্ট বেহাত (হ্যাকড) হওয়ার মতো ঘটনাগুলো বাড়ছে। অথচ সাধারণ কিছু কৌশল জানা থাকলে এ রকম ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
ফেসবুকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা
ফেসবুকে নিয়মিতই বন্ধু যোগ করার অনুরোধ (ফ্রেন্ড রিেকায়েস্ট) আসে। তবে বন্ধু যোগ করার আগে নিশ্চিত হয়ে দেখে নিন সত্যিই তিনি আপনার পরিচিত কি না। কিংবা প্রোফাইলটি সত্যিই তাঁর কি না। বন্ধু যোগ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আপনার আগের বন্ধুদের মতো আপনার ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য, ছবি, পোস্ট দেখা এবং সেখানে মন্তব্য করার সুযোগ পাবেন। তবে যেকোনো সময়ই বন্ধু তালিকা থেকে যে-কাউকে সরিয়ে দেওয়া যায়। তাই বন্ধু তালিকাটি এখন আবার যাচাই করে নেওয়া যেতে পারে।
ফেসবুক কেন ব্যবহার করছেন
ফেসবুক কেন ব্যবহার করছেন, সেটি নিজে আরও একবার ভেবে নিন। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, নিজের পছন্দগুলো সবাইকে জানিয়ে দেওয়া, ব্যক্তিগত সাফল্য, বিভিন্ন কার্যক্রম প্রকাশের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়াও আরও অন্য কাজে একটি সহায়ক মাধ্যম হতে পারে এই ফেসবুক। তবে কী করছেন, সেটি নিশ্চিত হয়েই করা উচিত। অন্যথা কোনো কিছু প্রকাশ করার পরে মনে হতে পারে সেটি প্রকাশ না করাই ভালো ছিল।
ফেসবুকে অ্যাপ ব্যবহার করা
গেমসহ বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে ফেসবুকে। নতুন কোনো ফেসবুক অ্যাপ ইনস্টলের সময় দেখে নেওয়া উচিত এটি ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টের কী কী তথ্য দেখা বা ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর এবং তাঁর বন্ধুদের ওয়ালে কোনো কিছু পোস্ট করে কি না তাও দেখা উচিত। পুরো নিশ্চিত হয়ে অ্যাপ ইনস্টল করুন।
গোপন নম্বর বা পাসওয়ার্ড
ফেসবুকে গোপন নম্বর বা পাসওয়ার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। নিয়মিতভাবে কিছুদিন পরপর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা উচিত। আবার পরিবর্তন করা হলেও এমন কিছু ব্যবহার করা উচিত না, যেন অন্য কেউ সহজেই অনুমান করে বুঝে ফেলতে পারে। ফোন নম্বর, জন্মতারিখ, বাসার ঠিকানা, এলাকার নাম, দেশের নাম, রোল নম্বর, নিজের পরিচিত কোনো মানুষ বা বন্ধুর নাম ইত্যাদি কখনোই পাসওয়ার্ড হিসাবে ব্যবহার করা উচিত না।
প্রাইভেসি সেটিংস
ফেসবুকের প্রাইভেসি সেটিংসগুলো সঠিকভাবে নির্ধারণ করা আছে কি না, সেটি সহজেই পরীক্ষা করার জন্য একটি অপশন যোগ করা হয়েছে। লগ–ইন করার পরে ওপরের মেনু থেকে তালার মতো দেখতে আইকনে ক্লিক করলে প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা-সংক্রান্ত সাধারণ করণীয়গুলো দেখা যাবে। Privacy Checkup অপশনটি ব্যবহার করে প্রাইভেসি সেটিংসগুলো যাচাই করা যাবে। www.facebook.com/settings?tab=privacy ঠিকানা থেকে অন্য সেটিংসগুলো নির্ধারণ করা যাবে।
প্রাইভেসি সেটিংসে কোনটার মানে কী?
Who can see my stuff?
আপনার প্রকাশ করা তথ্যগুলো কারা দেখতে পাবেন, সেটি নির্ধারণ করা যায় এখানে। সাধারণভাবে Friends নির্বাচন করা উচিত।
Who can contact me?
কোন ব্যবহারকারী ইনবক্সে বার্তা পাঠাতে পারবেন, সেটি নির্বাচন করা যাবে এখানে। এ ছাড়া কারা আপনাকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠাতে পারবেন, সেটিও নির্ধারণ করা যায় এই অংশ থেকে।
How do I stop someone form bothering me?
ফেসবুকে আপনি কাউকে ব্লক করতে চাইলে এই অংশ থেকে সহজেই কাজটি করা যাবে। যাঁকে ব্লক করা হচ্ছে, সেই ব্যবহারকারী আপনার কোনো তথ্য দেখতে পাবেন না এবং আপনিও তাঁর কোনো তথ্য দেখতে পারবেন না।
নিরাপত্তা
www.facebook.com/settings?tab=security ওয়েব ঠিকানা থেকে সরাসরি সিকিউরিটি সেটিংস পাতায় যাওয়া যাবে।
Log–in Alerts: নতুন কোনো যন্ত্র থেকে লগ–ইন করা হলে ই-মেইল এবং মোবাইল ফোনের এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
Log–in Approvals: নতুন যন্ত্র থেকে লগ–ইন করা হলে এসএমএসের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
Code Generator: নতুন লগ–ইন করার সময় ফেসবুক অ্যাপ থেকে নিরাপত্তা সংকেত ব্যবহার করে
লগ–ইন করতে পারবেন।
App Passwords: অ্যাপের ক্ষেত্রে মূল পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করে অ্যাপের জন্য নির্ধারিত অন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা।
Trusted Contacts: বন্ধু তালিকার বিশেষ কয়েকজনকে এই তালিকায় যোগ করা যাবে, কখনো যদি আপনার অ্যাকাউন্টে ঢুকতে সমস্যা হয়, তবে তাঁদের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নিজেদর অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করা যাবে।
Browsers and Apps: কোন কোন অ্যাপ বা ব্রাউজার থেকে নিয়মিত ব্যবহার করা হয়।
Where You’re Logged In: বর্তমানে কোন কোন যন্ত্র থেকে লগইন আছেন, সেটি যাচাই করা।
Deactivate Your Account: অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করা।
টাইমলাইন ও ট্যাগ
ফেসবুক সেটিংস পাতার Timeline and Tagging মেনু থেকে অথবা সরাসরি এই www.facebook.com/settings?tab=timeline থেকে টাইমলাইন ও ট্যাগ-সংক্রান্ত সেটিংগুলো নির্ধারণ করা যাবে। পাতার সেটিংসগুলো নিচের মতো তিনটি ভাগে আলাদা করা থাকে।
Who can add things to my timeline? কারা আপনার প্রোফাইলে কোনো কিছু দিতে পারবেন, সেটি নির্ধারণ করা যাবে এখানে। পোস্টগুলো সবার কাছে প্রকাশের আগে আপনার অনুমতি লাগবে, সে ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে।
Who can see things on my timeline?
টাইমলাইনে অন্য কেউ পোস্ট করলে বা কোনো পোস্টে আপনাকে ট্যাগ করা হলে কারা সেই পোস্টগুলো দেখতে পারবেন, সেটি নির্বাচন করে দেওয়া যাবে এখানে। পাশাপাশি কোনো নির্দিষ্ট ব্যবহারকারী অথবা অন্য সবাই আপনার প্রোফাইলের কোন কোন অংশ দেখতে পাচ্ছেন, সেটিও যাচাই করা যাবে এখান থেকে।
How can I manage tags people add and tagging suggestions? কোনো ছবি বা পোস্টে ট্যাগ করা হলে অন্য সবার কাছে প্রকাশের আগে আপনি রিভিউ করে অনুমতি দেওয়ার অপশনটি সক্রিয় করতে পারবেন এখান থেকে। পাশাপাশি ট্যাগ করা পোস্টগুলো দেখা এবং কারা ট্যাগ করার জন্য সাজেশন পাবেন, সেটিও নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে।
ফিশিং সাইট
ফেসবুক ছাড়া অন্যান্য অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লগ–ইন করা থেকে বিরত থাকা উচিত। অনেক সময় বিভিন্ন ওয়েব ঠিকানা বা লিংক খোলার সময় ফেসবুক ব্যবহারকারী নাম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগইন করতে অনুরোধ করে। এই পদ্ধতিতে অনেক সময় ফেসবুকের ব্যবহারকারী নাম ও পাসওয়ার্ড অন্যরা চুরি করতে পারেন।
নতুন কোনো যন্ত্র থেকে লগ–ইন
কখনো কখনো হয়তো সাইবার ক্যাফে, অন্যের কম্পিউটার কিংবা মুঠোফোন থেকে ফেসবুকে ঢোকার (লগ–ইন করা) প্রয়োজন হতে পারে। নতুন কোনো যন্ত্র থেকে লগ–ইন করতে হলে যার যন্ত্র বা যে কম্পিউটার থেকে লগইন করা হচ্ছে, তা নির্ভরযোগ্য কি না ভেবে দেখুন। লগ–ইন করা পর ‘remember you’ বাটনে ক্লিক করে অথবা ব্রাউজারের ‘Save Password’ অপশন ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবেন না। কারণ, এর ফলে পরবর্তী সময়ে অন্য ব্যবহারকারী এই পাসওয়ার্ড দিয়ে আপনার ফেসবুক ব্যবহার করতে পারেন।
ফেসবুকে কী প্রকাশ করবেন, কী করবেন না
ফেসবুকে কোনো কিছু প্রকাশ করা, যেমন: কোনো লেখা বা ছবি দেওয়া, অন্যের কোনো পোস্ট শেয়ার করার আগে ভেবে দেখুন আপনি সত্যিই সবার সামনে এটি জানাতে চাইছেন কি না। প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার বন্ধুদের সবাই এটি দেখতে পাবেন এবং হয়তো তাঁরা এর পক্ষে বা বিপক্ষে মতামত জানাবেন।
নোটিফিকেশন নিয়ন্ত্রণ
ফেসবুক, ই-মেইল, মোবাইল ফোন ও এসএমএসের মাধ্যমে কী কী নোটিফিকেশন পেতে চান, সেটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে নোটিফিকেশন সেটিংসের পাতা (www.facebook.com/settings?tab=notifications) থেকে।