সবেমাত্র দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ নিচ্ছে মেয়েটি, স্কুল থেকে ফিরে একদিন বিকেলে যায় বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে। পাশের বাড়ির ছাদে উঠে দৌড়ঝাঁপের মাঝেই ঘটে যায় অঘটন। পাশে থাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ তারের সঙ্গে লেগে পুড়ে যায় তাঁর দুই হাতের কনুই পর্যন্ত। মুদিদোকান চালানো বাবা টাকার অভাবে মেয়েকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন এলাকাতেই। কিন্তু হাতের আঙুলে পচন ধরে। খসে পড়ে দুটি আঙুল। এলাকাবাসীর আর্থিক সহায়তায় দরিদ্র বাবা জগদীশ চন্দ্র সাহা মেয়েকে নিয়ে যান কলকাতায়। সেখানে চিকিৎসার পর ক্যানসারের ভয়ে চিকিৎসকেরা মেয়েটির দুই হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলেন। দেশে ফিরে শুরু হয় মেয়েটির আরেক লড়াই। বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। তবে এই মেয়ে দমে যাওয়ার পাত্র নয়। সে সাফ জানিয়ে দেয়, এখানেই শেষ নয়। হার মানতে চায় না সে। যে করেই হোক, পড়ালেখা করতে চায় সে। স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্য নিয়ে আবার হাতে কলম ধরে মেয়েটি। দুই কনুইয়ের মাঝখানে কলম চেপে লিখতে শেখে। ২০১১ সালে এসএসসি পরীক্ষার টেবিলে বসে। ফলাফল চমকে দেয় আশপাশের সবাইকে। কারণ, সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ফাল্গুনী সাহা পেয়েছে জিপিএ-৫!
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার মেয়ে ফাল্গুনী সাহার এই সাফল্য তখন ছাপা হয় দেশের বিভিন্ন পত্রিকায়। খবর পড়ে ঢাকার ট্রাস্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করে ফাল্গনীর সঙ্গে। বিনা বেতন, থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ ট্রাস্ট কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি করানো হয় তাকে। কথা রাখেন ফাল্গুনী। দুই বছর পর এইচএসসিতে আবারও জিপিএ-৫ পান। এখানেই শেষ নয়। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ফাল্গুনী সাহা এখন পড়ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে। সেই সঙ্গে প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। দুই মাস পরেই তাঁর প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা। সে জন্যই নিজেকে প্রস্তুত করছেন। তবে এরই মধ্যে ঘটেছে আরেকটি দুর্ঘটনা। ফাল্গুনী বলেন, ‘গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাবাকে হারিয়েছি। বাড়িতে ছোট বোন পূজাকে নিয়ে মা সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন কোনোভাবে। মিস্টির প্যাকেট তৈরি করে কিছু টাকা পাচ্ছেন। সেটা দিয়েই চলছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দিয়ে ফাল্গুনীর মনে ছিল নানা শঙ্কা। সেই শঙ্কা আবার উবে গেছে নিজের বিভাগে গিয়েই। শিক্ষক ও সহপাঠীরা সারাক্ষণ আপন করে রাখেন তাঁকে। ফাল্গুনী বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের প্রথম শ্রেণির একজন কর্মকর্তা হয়ে দেশ ও দশের জন্য কাজ করতে চাই।’