ফারিহার ‘একটি জিজ্ঞাসা’
ছোটবেলা থেকেই গল্প শুনতে, পড়তে ও দেখতে ভালোবাসতেন ফারিহা জান্নাত। সেই গল্প শুধু যে উপন্যাসের পাতায় কিংবা সিনেমার পর্দায়ই থাকতে হবে, তা নয়। শহরের পিচঢালা রাস্তায়, কোনো এক পাহাড়ের চূড়ায় কিংবা দৈনন্দিন জীবনেও চলত গল্পের খোঁজ।
ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের পরিবেশবিজ্ঞানের এই ছাত্রী নিজেও গল্প বলতে চাইতেন নিজের মতো করে। ফারিহা বলেন, ‘আমি প্রথমে ছবি আঁকতাম। তারপর ছবি তুলতে শুরু করি। পাশাপাশি লিখতামও। একসময় মনে হলো, নিজের বলতে চাওয়া গল্পের জন্য ফিল্মটাই সেরা মাধ্যম। ফিল্ম বানানো শুরু করলাম।’
এই মাধ্যমে কাজ করার জন্য ফারিহা বেছে নেন লেখক ও নির্মাতা জহির রায়হানের ‘একটি জিজ্ঞাসা’ গল্পটিকে। এই গল্প অবলম্বনে বানানো স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির সুবাদে তিনি পেয়েছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
নাইজেরিয়ান ফিল্ম করপোরেশন আয়োজিত ১২তম জুমা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা বিদেশি ছবির পুরস্কার জিতে নিয়েছে ফারিহার প্রথম ছবি একটি জিজ্ঞাসা। নাইজেরিয়ার আবুজা সিটিতে আয়োজিত উৎসবে গত ৭ মে এ ঘোষণা দেন অভিনেত্রী ও প্রযোজক রনইয়া মান।
প্রথম ছবিতেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার প্রসঙ্গে ফারিহা বলেন, ‘একজন নির্মাতা হিসেবে আমার গল্প যখন পৃথিবীর অন্য প্রান্তে গিয়ে দর্শক খুঁজে নিচ্ছে, সেই অন্য প্রান্তের মানুষও আমার বলতে চাওয়া গল্প বুঝতে পারছে, সেই অনুভূতি অসাধারণ।’
নির্মাতা হিসেবে নবীন হলেও অনেক আগে থেকেই কিন্তু চলচ্চিত্রের সঙ্গে আছেন ফারিহা৷ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের (সিএফএস) স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন সেই কলেজজীবনে। স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব দিয়ে শুরু, তবে শেষ করেন উৎসব পরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে। ৭ দিন ব্যাপী এই শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের ১৫তম আসরকে ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোয় নিয়ে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন ফারিহা। বান্দরবানের লামায় অবস্থিত পাওমুম থারক্লা বিদ্যালয়ের ম্রো শিশুদের ডাকে ফারিহা এই চলচ্চিত্র উৎসব নিয়ে গেছেন দুর্গম পাহাড়েও।
ফারিহা বলেন, ‘শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি। আমাদের শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক হলেই চলবে না। পৌঁছে যেতে হবে প্রত্যন্ত গ্রামেও। নইলে আর গল্প বলার সার্থকতা রইল কই!’
২০১৯ সাল থেকে সিনেমা বাংলাদেশ আয়োজিত গ্লোবাল ইয়ুথ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আর্টিস্টিক ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন আইইউবির এই শিক্ষার্থী। ব্র্যাক ও সবুজের অভিযান ফাউন্ডেশনের গবেষণাভিত্তিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে তাঁর দ্বিতীয় ছবি। ‘কর্মক্ষেত্রে নারীদের যৌন হয়রানি’ বিষয়ে নির্মিত এই সিনেমা গবেষণা টিমের বিভিন্ন ক্যাম্পেইনে প্রদর্শিত হয়ে আসছে। সবুজের অভিযান ফাউন্ডেশনের জন্য একটি তথ্যচিত্রও তৈরি করেছেন ফারিহা, যেটাতে মধ্যপ্রাচ্যে থেকে ফেরত আসা নারীরা জানিয়েছেন সেখানকার অমানবিক নির্যাতনের গল্প। ফারিহাকে বরাবরই এসব ভয়ংকর সত্য গল্প পীড়া দিয়ে এসেছে।
ছোটবেলায় যিনি আশপাশের জীবন থেকে গল্প খুঁজতেন, বড়বেলায় এসে সেই ফারিহা জান্নাত বুঝেছেন, এসব গল্প হতে পারে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের হাতিয়ার। তাই আরও পরিণত হয়ে, দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে নিজের কাজ পৌঁছে দিতে চান তিনি।