>বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের অধীনে ৬৬০ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিডওয়াইফ রেজিস্টারভুক্ত হয়েছেন। তাঁদেরই একজন হচ্ছেন নিরা খাতুন। তিনি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে মিডওয়াইফ হিসেবে কর্মরত আছেন। মিডওয়াইফ পেশার বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রথম আলো তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে।
প্রথম আলো: মিডওয়াইফ হিসেবে কাজের ক্ষেত্রে আপনার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী বলে আপনি মনে করেন?
নিরা খাতুন: একজন মিডওয়াইফ একজন মাকে সন্তান প্রসবের আগে, প্রসবের সময় এবং প্রসবের পর ৪২ দিন পর্যন্ত সেবা দিয়ে থাকেন। মিডওয়াইফ হিসেবে কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো একজন মা ও তাঁর পরিবারকে সুস্থ বাচ্চা উপহার দেওয়া এবং মাকে সুস্থ রাখা।
প্রথম আলো: আপনার কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধাগুলো কী কী?
নিরা খাতুন: মিডওয়াইফারি একটি নতুন পেশা। অনেকেই এই পেশা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। মিডওয়াইফ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সবার বিশ্বাস অর্জন করা ছিল অনেক কষ্টের। পরিবার-পরিজন ছেড়ে একটি ঘূর্ণিঝড়-কবলিত পরিবেশে নিজেদের খাপ খাওয়ানো এবং আমাদের উদ্দেশ্য সফল করা ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। তার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ভাষাগত সমস্যা, অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থা এবং কিছু কিছু সামাজিক গোঁড়ামির সম্মুখীন হয়েছি।
প্রথম আলো: একজন সদ্য পাস করা মিডওয়াইফ হিসেবে মিডওয়াইফারি শিক্ষায় আপনি কী পরিবর্তন আনতে চান, যাতে মিডওয়াইফ হিসেবে ভূমিকা পালন করতে আপনি ভালো প্রস্তুতি নিতে পারেন?
নিরা খাতুন: একজন সদ্য পাস করা মিডওয়াইফ হিসেবে আমি চাই মিডওয়াইফারি কোর্সগুলো আলাদা প্রতিষ্ঠানে চালু করা, যেখানে মিডওয়াইফারি প্রশিক্ষণের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকবে। মিডওয়াইফদের উন্নত শিক্ষার পাশাপাশি গ্রামের চিকিৎসার পরিবেশ সম্পর্কওে অবগত করতে হবে।
প্রথম আলো: নিরাপদে সন্তান প্রসবের ব্যাপারে নারীদের উৎসাহিত করতে কী কী করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
নিরা খাতুন: একজন মিডওয়াইফ মা ও নবজাতকের মৃত্যুরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নিরাপদ সন্তান প্রসবের জন্য মিডওয়াইফ নারীদের উৎসাহিত করবেন। নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করবেন এবং পাশাপাশি তাঁদের পরিবারকেও সচেতন করবেন। গর্ভবতী মায়েদেরকে কমপক্ষে আটটি ভিজিটে আসতে হবে। তাঁদেরকে গর্ভকালীন স্বাস্থ্যশিক্ষা ও প্রসব-পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।
প্রথম আলো: বাংলাদেশে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য কোন জিনিসটি জরুরি বলে আপনি মনে করেন?
নিরা খাতুন: বাংলাদেশে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা। আমাদের দেশের মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায় এবং সন্তান গর্ভে ধারণ করে, এতে মা ও শিশু দুজনেরই বিপদ ঘটে। আজকের মেয়ে ভবিষ্যতে একদিন মা হবে। ভবিষ্যতের মাকে আমরা যদি আগে থেকেই তৈরি করতে পারি, তবেই বাংলাদেশের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটবে।
প্রথম আলো: গ্রামাঞ্চলে কর্মরত মিডওয়াইফদের সরকার কীভাবে সাহায্য করতে পারে?
নিরা খাতুন: মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে সরকারকে অবশ্যই মিডওয়াইফদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। জরুরি সেবার জন্য অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ সরবরাহ করতে হবে। যেকোনো ধরনের ঝামেলা এড়ানোর জন্য আইনের বিধান তৈরি করতে হবে।
প্রথম আলো: আগামী ১০ বছরে আপনার পেশায় নিজেকে আপনি কোন জায়গায় দেখতে চান?
নিরা খাতুন: আমি আমার কাজের মাধ্যমে এই পেশাকে অন্যান্য পেশার মতো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এ পেশার মাধ্যমে গরিব-দুঃখীসহ সব মায়েদের পাশে দাঁড়াতে চাই। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেকে দক্ষ মিডওয়াইফ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি চাই, আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রসব যেন দক্ষ মিডওয়াইফ দ্বারা হয়। সবশেষে বলতে চাই, ‘মিডওয়াইফ সুন্দর আগামীর জন্য’।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: রোকেয়া রহমান