‘বয়স যখন তিনের গণ্ডি পেরোল, তখন থেকেই গান করতাম। এটা আমার কথা না, মা বলে,’ এক গাল হেসে জানালেন সামছুন নাহার। পূর্ণতা তাঁর ডাকনাম। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থীর ‘পূর্ণতা’ নামে একটা ফেসবুক পেজ আছে। সেখানে নিজের গানের ভিডিও তুলে রাখেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ পরিচিতি পেয়ে গেছে পূর্ণতার গান। তাঁর ফেসবুক পেজে অনুসারীর সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি।
মায়ের হাত ধরে গানের হাতেখড়ি। পূর্ণতা বলেন, ‘মা আমার গানের গুরু। তিনি নিয়মিত গান করতেন। তাই গান শেখার জন্য যে আদর্শ পরিবেশ দরকার, সেটা আমি নিজের বাসাতেই পেয়েছি। বলতে পারেন কথা শেখার সঙ্গে সঙ্গে গানের সঙ্গেও পরিচিত হয়েছি। তাই, গান আমার মনে গেঁথে গেছে।’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এই প্রাক্তন শিক্ষার্থী স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গাইতেন। জড়িত ছিলেন অনুষ্ঠান আয়োজনেও। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের গান আপলোড করবেন, সেভাবে কখনো ভাবেননি।
তাহলে শুরুটা কীভাবে হলো?
পূর্ণতা বলেন, ‘গান তো টুকটাক করা হতো। তবে সেটা রেকর্ড করা বা ভিডিও করা হয়ে ওঠেনি। শ্রদ্ধেয় রুনা লায়লা ম্যামের “মাঝি তুমি মাঝ গাঙে নাও বাইয়া যাও” গানটা আমার ভালো লাগত। হুট করেই এক দিন এই গান গেয়ে আমার ফেসবুকে আপলোড করে দিই। অনেকেই পছন্দ করেন। এরপর একটা ফেসবুক পেজ খুলে সেখানেও গানটা দিয়ে রাখি। হঠাৎ দেখি, রুনা লায়লা ম্যামের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে গানটা শেয়ার করা হয়েছে। কী যে ভালো লেগেছিল, বলে বোঝাতে পারব না! এরপর থেকেই মোটামুটি ফেসবুক ও ইউটিউবে গান আপলোড করা শুরু করি। এ ক্ষেত্রে গান বাছতে মা আমাকে অনেক সাহায্য করে।’
ক্যাম্পাসের গানপাগল কজন মিলে পাকিস্তানি শিল্পী আলী শেঠি ও শে গিলের ‘পাসুরি’ গান কভার করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই ভিডিওটা করা। অল্প সময়ের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায় সেই গান। পূর্ণতার সাবলীল ভঙ্গি ও সুন্দর কণ্ঠের প্রশংসা করেছেন অনেকেই। তবে এর অনেক আগেই কিন্তু পেশাদারভাবে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁর হয়েছে। পূর্ণতা বলেন, ‘২০২১ সালে মন অবরোধ নাটকের “সারা রাত নির্ঘুম” গান দিয়ে আমার প্লেব্যাক করা শুরু। এ ছাড়া কিছু ম্যাশআপ গানও আমি করেছি। আমার মায়ের কথা ও সুর করা দুটো মৌলিক গান নিয়েও কাজ চলছে। সামনে আমার ইউটিউব চ্যানেল থেকে ওগুলো প্রকাশ করব। কিছুদিন আগে কোক স্টুডিও বাংলার “প্রার্থনা” গানটি আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকে মিলে কভার করেছি। এটাও সবার ভালো লেগেছে। তাই আজকের এই অবস্থানের পেছনে ক্যাম্পাসেরও অবদান আছে।’
গানের পাশাপাশি উপস্থাপনা করতেও ভালোবাসেন পূর্ণতা। এটিএন বাংলা ও বাংলাদেশ বেতারে বেশ কিছু অনুষ্ঠানে কাজ করেছেন। তাঁর গানের ভিডিওতে আসছে লাখো ভিউ। সবকিছু মিলিয়ে চেনা মুখ হয়ে উঠছেন তিনি। বন্ধুরা কি ‘সেলিব্রিটি’ তকমা লাগিয়েছে?
হাসলেন পূর্ণতা, ‘তা তো বলেই। গায়ে মাখি না। সেলিব্রিটি তো আসলে হইনি। তবে গত এক বছরে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। যেমন রাস্তাঘাটে এখন কিছু মানুষ চিনে ফেলে। বিষয়টা বেশ উপভোগ করি। আমার গান শুনে একজন আমাকে চিনতে পারছে, সেটাও তো একটা অর্জন।’
গানের মানুষটির ফেসবুক প্রোফাইলের কভারে একটা খটমটে ছবি ‘সাঁটানো’। ছবিতে মাইক্রোস্কোপ, ব্যাকটেরিয়া, ডিএনএর কাঠামো, রাসায়নিক দ্রবণ...দেখে ভিরমি খেতে পারেন। জানিয়ে রাখি, তাঁর পড়ার বিষয়—অণুজীববিজ্ঞান। এই বিষয়েই ভবিষ্যতে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চান। তাহলে পূর্ণতাকে কোনটা বেশি টানে, গান নাকি অণুজীববিজ্ঞান? বললেন, ‘আগ্রহ দুটোতেই। তাই পড়ালেখার সঙ্গে গানও চালিয়ে যেতে চাই সমানতালে। সুযোগ পেলে সিনেমার গানে প্লেব্যাক করার ইচ্ছা আছে। তবে ভালো কাজ করতে চাই। এমন কিছু গান উপহার দিতে চাই, যেগুলো শ্রোতারা নিজের করে নিয়ে মনে রাখবে অনেক দিন।’