পরীক্ষা আবিষ্কার করেছিলেন কে
‘ছাত্রজীবন মধুর জীবন, যদি না থাকে পরীক্ষা’—অনেক শিক্ষার্থীই হয়তো পরীক্ষার আগের রাতে উদাস হয়ে এ কথা ভেবেছেন। বইপুস্তকে হাবুডুবু খেয়ে ‘কে যে পরীক্ষা আবিষ্কার করেছিল, তারে যদি হাতের কাছে পাইতাম...’ এমন ভাবনাও অনেকের মাথায় এসে থাকতে পারে। পরীক্ষা কে আবিষ্কার করেছেন, সেটা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। গুগল করে এক মার্কিন ভদ্রলোকের নাম পাওয়া গেল বটে। হেনরি ফিশেল। জন্মেছিলেন ১৯১৩ সালের ২০ নভেম্বর। আর মারা গেছেন ২০০৮ সালের ২ মার্চ। তাঁকেই আধুনিক পরীক্ষাপদ্ধতির জনক মনে করা হয়।
ভদ্রলোক শিক্ষকতা করতেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটিতে। ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক। একদিন তাঁর মনে হলো, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে যেকোনো ঘটনা বা ব্যক্তিকে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করা দরকার। আর এই যাচাই–বাছাইয়ের জন্য দরকার একটি সুনির্দিষ্ট পরীক্ষাপদ্ধতি। তারপর অনেক ভেবেচিন্তে তিনি পরীক্ষা নেওয়ার একটা প্রক্রিয়া তৈরি করেন।
ইতিহাস বলছে, হেনরি ফিশেলের পরীক্ষাপদ্ধতি আবিষ্কারেরও বহু বহু বছর আগে থেকে পৃথিবীতে পরীক্ষা ছিল। বলা যায়, পরীক্ষাপদ্ধতির শুরু আসলে সভ্যতার গোড়ার দিকেই। অনলাইন ঘেঁটে জানা গেল, চীনারাই এটি প্রথম শুরু করেছিলেন।
তবে ইতিহাস বলছে, হেনরি ফিশেলের পরীক্ষাপদ্ধতি আবিষ্কারেরও বহু বহু বছর আগে থেকে পৃথিবীতে পরীক্ষা ছিল। বলা যায়, পরীক্ষাপদ্ধতির শুরু আসলে সভ্যতার গোড়ার দিকেই। অনলাইন ঘেঁটে জানা গেল, চীনারাই এটি প্রথম শুরু করেছিলেন। সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ‘স্ট্যান্ডার্ডাইজ টেস্ট’ বা সার্বভৌম পরীক্ষার শুরু করেছিলেন সুই রাজবংশের রাজারা। সেটা ৬০৫ খ্রিষ্টাব্দের কথা।
মজার ব্যাপার হলো, পরীক্ষা বা ইংরেজি এক্সামিনেশন শব্দটি কিন্তু চীন থেকে আসেনি। লাতিন শব্দ ‘এক্সামিনেশনেম’কে গ্রহণ করেছিল ফরাসিরা। তারা উচ্চারণ করত ‘এক্সামিনাছিওন’ (examinacion)। সেখান থেকে নানা পথ ঘুরে ইউরোপে গিয়ে হয়েছে এক্সামিনেশন।
নানা পথ ঘুরে মানে ফ্রান্স থেকে গিয়েছে জার্মানি, জার্মানি থেকে ইংল্যান্ডে ও আমেরিকায়। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এটিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়। তারা চীনা সভ্যতার সেই পুরোনো পরীক্ষাপদ্ধতিকে একটু ঘষামাজা করে নতুনভাবে সাজিয়েছিল।
আমাদের এ অঞ্চল, অর্থাৎ ভারতবর্ষ দীর্ঘদিন শাসন করেছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ফলে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা, পরীক্ষাপদ্ধতি—অনেক কিছুই চালু আছে এ অঞ্চলে। আমাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা কিংবা চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাগুলো যে পদ্ধতিতে হয়, তা অনেকটা ওই পুরোনো ব্রিটিশদের শেখানো।
তবে ইতিহাস এ কথাও জানান দিচ্ছে যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসারও বহু আগে থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষার সূচনা হয়েছে। সেই ৪২৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে ছিল নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, তক্ষশিলার মতো ভুবন বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শুরুর দিকে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল বলে জানা যায় না। পরীক্ষার ফল নয়, বরং জ্ঞানার্জনকেই সবচেয়ে বড় পুরস্কার বলে মনে করত তারা।
কালক্রমে সেসব ইতিহাস তিরোহিত হয়েছে। এখন জ্ঞানার্জন নয়, পরীক্ষার ফল ও সনদ অর্জন প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকাল পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্য পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। কিছু শেখা হলো কি হলো না...সে না হয় পরে দেখা যাবে!