পরিচ্ছন্ন নান্দনিক অন্দর
>
করোনাকালে ঘরেই কাটছে সময়। এখন সচেতনতার বড় এক বিষয় পরিচ্ছন্নতা। ঘরদোর পরিষ্কার আর পরিপাটি রাখলে অন্দরও হয়ে ওঠে নান্দনিক। ঘরের থাকা আসবাবসহ নানা উপকরণের স্থান বদল করলেও অন্দরসাজে আসে নতুনত্ব।
একটানা অনেক দিন ঘরে বসে থাকতে থাকতে কি একঘেয়েমিতে পেয়ে বসেছে? এবার তাহলে ঘরের সাজের দিকে বিশেষ মনোযোগ তো দিতেই পারেন। এতে যেমন অন্দরসাজে আসবে নতুনত্ব তেমনি একই ঘরে থাকতে যে বিরক্তি আপনাকে ঘিরে ধরেছিল তারও খানিকটা হবে অবসান। আর সামনেই ঈদুল ফিতর। নাই–বা হলো এবার বাইরে ছুটে বেড়ানো, তাই বলে কি ঘরে আনা যাবে না উৎসবের আবহ।
যেহেতু বাড়িতে বসে আছেন তাই ঘর সাজাতে বসে গেছেন অভিনেত্রী অর্চিতা স্পশিয়া। জানালেন, শুধু ঘরের নান্দনিকতার দিকেই নয়, পরিচ্ছন্নতার দিকে সব সময়ই মনোযোগ দিয়ে থাকেন তিনি। ‘আর এখন তো করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে সবকিছুতেই মেনে চলতে হচ্ছে বাড়তি সতর্কতা। জীবাণুনাশক দিয়ে নিয়মিত ঘর তো পরিষ্কার করছিই পাশাপাশি সুইচ বোর্ড, দরজার হাতল, ছিটকিনি—এসব পরিষ্কার করছি নিজ হাতেই।’ বলছিলেন স্পর্শিয়া। আমাদের দেশে ধুলার পরিমাণ এত বেশি যে নিয়মিত ঘরের আসবাব ও অন্যান্য উপকরণ পরিষ্কার না করলে ঘরটাই যেন কেমন হয়ে ওঠে। তাই স্পর্শিয়া এ কাজটা সব সময়ই করেন।
ঘর মানেই তো নিজস্ব জায়গা। সেটা যদি পরিচ্ছন্ন না হয়, ঘরের সাজ যদি মনের মতো না হয় তাহলে তো সেই ঘরকে আপন বলে মনে হয় না। এমনটাই ভাবনা অর্চিতা স্পর্শিয়ার। হালকা আসবাব ভালোবাসেন। ঘরে অপ্রয়োজনীয় জিনিস একেবারেই তাঁর অপছন্দ। পুরোনো দিনের কিছু জিনিসপত্র আর নিজের আঁকা ছবি, ঘরে শুধু এটুকুই।
মায়ের সঙ্গে থাকেন স্পর্শিয়া। মা–মেয়ে দুজনেরই পছন্দ নান্দনিক অন্দরসাজ। স্পর্শিয়া বলছিলেন, এই বাসার মূল প্রাণ হচ্ছে বই ও গাছ। আর এ কারণে এই বন্দী সময়েও একঘেয়েমি পেয়ে বসেনি তাঁদের। ঈদের দিন বাড়িতে কী করবেন, তা নিয়ে এখন থেকেই চলছে পরিকল্পনা। ‘আসলে ঘরে যা যা আছে সেসবের মধ্যে একটু অদল–বদল করব আর কী।’ উত্সবে–আয়োজনে ফুল দিয়ে ঘর সাজাতে ভালো লাগে স্পর্শিয়ার। এবার যদি সুযোগ মেলে তবে দোলনচাঁপায় সাজাবেন ঘর। মোমের আলো আর ল্যাম্পশ্যাডের আলো–ছায়ার খেলায় ঘরগুলো সেজে উঠবে নতুন সাজে।
এদিকে ঘরে থাকা উপকরণ দিয়ে এভাবে নতুনত্ব আনার কথা বললেন স্থপতি ও অন্দরসজ্জাবিদ রাফিয়া মারিয়াম আহমেদ। যেমন আলমারিতে অনেক শাড়ি থাকে, যেগুলো হয়তো আর পরা হবে না। এখন সেখান থেকে কিছু শাড়ি বেছে নেওয়া যেতে পারে ঘর সাজানোর জন্য। এবার আসবাব ও দেয়ালের সঙ্গে মিলিয়ে এসব শাড়ি দিয়েই বানিয়ে নিতে পারেন জানালার পর্দা। সঙ্গে ম্যাচিং কুশন কভারও বানিয়ে নিতে পারেন। যদি পুরোনো জামদানি থাকে তাহলে ঘরের জানালায় থাকা পর্দার চারধারে সেই জামদানির পার জুড়ে নিন। এসব বানাতে যে সব সময়ই সেলাই মেশিন লাগবে, তা কিন্তু নয়। সুই–সুতা দিয়েও নিজ হাতেই আপনি কাপড় জোড়া লাগাতে পারেন পর্দায়। যদি বসার ঘরে কুশন থাকে সেখানেও কাভারের চারদিকে এমন কাপড় জুড়ে দিতে পারেন। অনেকের বাড়িতে শীতল পাটি থাকে, এমন পাটিতেই বসার আয়োজন করতে পারেন। এখানেও পাটির
চারধারজুড়ে লাগিয়ে নিতে পারেন পুরোনো নকশাওয়ালা কাপড়। অনেকেই ঘর সাজাতে গাছ ব্যবহার করে থাকেন। যেহেতু এখন ডেঙ্গুর সময়, তাই এই দিকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন মনে করেন রাফিয়া মারিয়াম। যেমন, ঘরে যদি গাছ দিয়ে সাজাতে চান তবে সেখানে যেন পানি না জমে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। গাছে পানি দেওয়ার প্রয়োজন হলে বারান্দায় নিয়ে পানি দিন। পানি মাটির ভেতর ঢুকলে তবেই সেই গাছটি ঘরে আনুন। পানিতে বেড়ে ওঠা গাছ এই সময় ঘরে না রাখাই ভালো।
বাড়িতে যদি এনামেল রং থাকে তবে, তা দিয়ে মাটির টবগুলো রাঙিয়ে নিতে পারেন। একই ভাবে ঘরের যেকোনো একটি দেয়ালকেও রাঙাতে পারেন।
আসবাবের জায়গার একটু অদলবদল এই সময় ঘরকে দিতে পারে এক নতুন রূপ। সারা বছর যাদের আলাদা করে ঘর গোছানোর সময় হয় না, এই বন্দী সময়ে তাঁরা কাজে লাগাতে পারেন। পরিচ্ছন্ন করতে পারেন ঘরের চারপাশ। এতে আপনার মনও হয়ে উঠবে প্রফুল্ল।