পতাকাই শমীকে আলাদা করেছিল
হোক অলিম্পিক, আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা কিংবা ডায়ানা অ্যাওয়ার্ডের মতো বড় আয়োজন—ভিনদেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যান যে তরুণেরা, বিদেশযাত্রায় তাঁদের অনেকেরই সঙ্গে সব সময় থাকে লাল-সবুজ পতাকা। কীভাবে এই পতাকাই তাঁদের পরিচয় হয়ে ওঠে? কেমন করে পতাকা থেকে প্রেরণা পান তাঁরা?
‘আমি এখন দুবাই এয়ারপোর্টে। লন্ডনে যাচ্ছি। একটু পর প্লেনে উঠব। নেমে কথা বলি?’ হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেন শমী হাসান চৌধুরী। ৭ ডিসেম্বর যোগাযোগ করেছিলাম তাঁর সঙ্গে। শমী আগেই জানিয়েছেন, ডায়ানা লিগাসি অ্যাওয়ার্ডের অন্যতম বিচারক হিসেবে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন তিনি। ২০১৯ সালে শমী নিজেও এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। বিজয়ী কিংবা বিচারক, যে ভূমিকাতেই থাকেন না কেন, বিদেশযাত্রায় শমীর ব্যাগে সব সময় থাকে বাংলাদেশের পতাকা।
‘অ্যাওয়ারনেস থ্রিসিক্সটি’ নামের একটি সেবামূলক সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা শমী হাসান চৌধুরী। নানা রকম কার্যক্রমে যুক্ত থাকার সুবাদে নিয়মিতই তাঁকে ছুটতে হয় এ দেশ থেকে ও দেশ। কমনওয়েলথ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের এশিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধি হিসেবে কখনো যান যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্মেলনে, আবার তরুণদের সম্মেলনে বক্তব্য দিতে কখনো তাঁর গন্তব্য কানাডা কিংবা থাইল্যান্ড। ২০১৮ সালে কমনওয়েলথ অবজারভার গ্রুপের সঙ্গে নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে পাকিস্তানেও গিয়েছিলেন। সঙ্গে দেশের পতাকা নিতে ভোলেননি।
কীভাবে এই চল শুরু হলো? জানতে চেয়েছিলাম শমীর কাছে। বললেন, ‘২০১১ সালে আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ইয়ুথ এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশ নিতে মিশিগানে গিয়েছিলাম। ছোট্ট একটা শহর। সেখানে বেশির ভাগ মানুষ বাংলাদেশের নাম শোনেনি। খেয়াল করলাম হাতে পতাকা থাকলে অনেকে কৌতূহলী হয়, প্রাথমিক আলাপটা সহজ হয়ে যায়। তা ছাড়া নিজের মধ্যেও একধরনের ভালো লাগা কাজ করে। মনে হয় দেশ থেকে দূরে থাকলেও দেশ আমার সঙ্গেই আছে। সেই ২০১১ সাল থেকেই সব ভ্রমণে আমি পতাকা সঙ্গে রাখতে শুরু করি।’
২০১৭ সালে এই পতাকার জন্যই সোশ্যাল মিডিয়ায় একরকম ‘ভাইরাল’ হয়ে গিয়েছিলেন শমী। সেবার গ্লোবাল সিটিজেন উইকে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের বিশাল মাঠে জড়ো হওয়া ৬০ হাজার দর্শকের সামনে বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে শমী একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তখনো হাতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা। সেই মুহূর্তের ছবি প্রিয়াঙ্কা তাঁর অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম আর ফেসবুক পেজে আপলোড করতেই হইহই পড়ে গেল। হাজারো বাংলাদেশি মন্তব্য করতে শুরু করল, ‘প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে আছে—কে এই মেয়ে!’ পতাকাই শমীকে আলাদা করেছিল।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিনয়শিল্পী, রাষ্ট্রনেতা, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রতিনিধিসহ নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয় শমীর। নিজের পাশাপাশি নিজের দেশের পতাকাকেও পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সুযোগ তিনি হাতছাড়া করেন না।