আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারজয়ী সাদাত রহমানের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামে। বাবা মো. সাখাওয়াত হোসেন ২০১৭ সালে নড়াইল পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার হিসেবে পরিবারসহ নড়াইলে আসেন।
২০১৭ সালে নড়াইল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল সাদাত। বাবা মো. সাখাওয়াত ও মা মলিনা খাতুনের একমাত্র সন্তান সে। ডিসেম্বর মাসে বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলে ‘নড়াইল ভলান্টিয়ার্স’ সংগঠনটি। বর্তমানে সদস্যসংখ্যা দুই শতাধিক। ১১ সদস্যের একটি পরিচালনা কমিটি রয়েছে সংগঠনের। সংগঠনের একটি প্রকল্প হিসেবে সাইবার টিনসের যাত্রা শুরু গত বছর অক্টোবর মাসে। সাইবার টিনস পরিচালনা করে সাত সদস্যের একটি দল।
নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান বর্তমানে নড়াইল ভলান্টিয়ার্সের সাংগঠনিক সম্পাদক। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এসব অর্জনের কথা তুলে ধরে মেহেদী বলেন, ‘মূলত নড়াইল ভলান্টিয়ার্সের একটি প্রকল্প হলো সাইবার টিনস। এ ধরনের প্রযুক্তিগত নানা উদ্ভাবন করছি আমরা।’
মেহেদী জানালেন, সাইবার বুলিং, স্প্যামিং, হ্যাকিং, গুজব, অনলাইন নিরাপত্তাসহ নিরাপদ ইন্টারনেট বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করছেন তাঁরা। পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের সৃজনশীলতা বিকাশেও আছে নানা উদ্যোগ। অনলাইনভিত্তিক তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টির কাজ চলছে।
সাইবার টিনসের মাধ্যমে সাইবার বুলিংয়ের শিকার ভুক্তভোগীর তথ্য গোপন রেখে অভিযুক্তকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হয়। বিষয়টি অপরাধ পর্যায়ে পৌঁছালে পুলিশ সুপারকে জানানো হয়। এভাবে নড়াইলে ৬০টি ঘটনা সমাধান করা হয়েছে। আটজন অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই উদ্ভাবনকে গুরুত্ব দিয়েছে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার কর্তৃপক্ষ।
সাদাতের কাছে জানা গেল, পুরস্কারের জন্য প্রাথমিক মনোনয়নটি হয়েছিল নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরার প্রচেষ্টায়। জেলা প্রশাসক বলছিলেন, ‘সাইবার টিনস অ্যাপটির ধারণা দেওয়ার পর এই কার্যক্রম এগিয়ে নিতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন থেকে আমরা নানাভাবে সহায়তা করেছি। শিশু শান্তি পুরস্কারের প্রাথমিক মনোনয়নের জন্য কর্তৃপক্ষকে আমি লিখেছিলাম। তাঁদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল মিটিংও হয়েছে। সৃজনশীলতার বিকাশে সাদাতের মেধার তুলনা নেই। শুক্রবার পুরস্কার ঘোষণার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
সাইবার টিনস অ্যাপের মাধ্যমে নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিমউদ্দিনকে সরাসরি জানানো হয় সাইবার বুলিং বিষয়ে। এটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেন পুলিশ সুপার। সাইবার টিনসে অভিযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে পুলিশ সুপার ভিডিও চিত্রও দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন বলেন, ‘সাদাত তার উপলব্ধিকে মনের মধ্যে না রেখে সমাজের জন্য এগিয়ে এসেছে। তার ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমরা কাজ করেছি।’
অনলাইনে শান্তি ও সুরক্ষা খাতে প্রযুক্তিগত সমাধানের ধারণাবিষয়ক একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছিল জাতিসংঘ। সারা বিশ্ব থেকে অংশ নেওয়া প্রতিযোগীদের মধ্যে গত ২১ সেপ্টেম্বর তিনটি প্রতিষ্ঠানকে সেরা ঘোষণা করা হয়, সেখানে স্থান পায় সাদাতদের ‘সাইবার টিনস’। পুরস্কার মূল্য ছিল পাঁচ হাজার ডলার (চার লাখ টাকার বেশি)। এ ছাড়া ২০২১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাবে সাদাতের সংগঠন—নড়াইল ভলান্টিয়ার্স। অপরাজিতা নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি তৈরি করেছিল সংগঠনটি, পেয়েছে নানা পুরস্কার। ২০১৮ সালে জয়বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পায় নড়াইল ভলান্টিয়ার্স। একশনএইডের ‘ইয়ুথ ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ-২০১৯’ সম্মাননাও আছে তাদের ঝুলিতে। আছে জাতীয় পর্যায়ের আরও নানা অর্জন। নড়াইল আবদুল হাই সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান মল্লিক বলেন, ‘অত্যন্ত বিনয়ী ও সৃজনশীল মনের মানুষ আমাদের এই ছাত্র। সামাজিক কাজ নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে সে। ওর অর্জনে আমরা গর্বিত।’