নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের ‘রেজল্যুশন’ কী
বছরের শুরুতে নিজেকে বদলানোর প্রতিজ্ঞা করার একটা চল আছে। শিক্ষার্থীরা জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন আনার কথা ভাবছেন? কয়েকজনের বক্তব্য শোনা যাক।
যোগাযোগের দক্ষতা বাড়াতে চাই
মুয়াজ বিন জাহিদ, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
আমার বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শুরু হতে না হতেই এল করোনা। কাগজে-কলমে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের দুই বছর পার হতে চললেও ১৮ মাস তো বাসাতেই বসে থাকতে হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে সরাসরি যুক্ত হতে পারিনি। নতুন বছরে তাই বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে নিতে চাই। এ ছাড়া কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ছাত্র হিসেবে নিজেকে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে নতুন বছরের শুরু থেকেই কাজ করতে চাই। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে যোগাযোগের দক্ষতা বাড়াতে চাই। সর্বোপরি নতুন বছরে পুরোনো সব অপ্রাপ্তি ঝেড়ে ফেলে নতুনভাবে স্বপ্নপূরণের পথে চলতে চাই।
এগোতে চাই স্বপ্নের পথে
মধুমিতা চাকমা, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
'পাত্তুরু তুরু নুও বজর' বলে আমরা চাকমা জনগোষ্ঠী সাধারণত নতুন বছরকে বরণ করে থাকি। নতুন বছরের ভাবনায় যোগ হয়েছে নতুন কিছু স্বপ্ন আর শব্দ। শিক্ষা নিয়ে পড়াশোনার কারণে শিক্ষাপদ্ধতি, ক্যারিয়ার শব্দগুলো বেশ চেনা এখন। দীর্ঘ কোভিড মহামারিতে ঘরবন্দী বছর কাটিয়ে স্বপ্নটা আরও প্রবল হয়েছে—বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগ দেব। যেখানে আমি দেশের জন্য কিছু করতে পারব, শিক্ষা–সংস্কৃতির ব্যাপ্তিতে কিছুটা হলেও থাকবে আমার অবদান। সে জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেব। খেলাধুলার নেশাটা ছোটবেলা থেকেই ছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যুক্ত হই হ্যান্ডবল, ভলিবল, অ্যাথলেটিকস টিমে। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে গিয়ে যে অনুপ্রেরণা পেয়েছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগোতে চাই নতুন বছরে।
বই পড়ার অভ্যাস করতে চাই
শুভ সরকার, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি বাংলা কলেজ, মিরপুর
গত দুই বছর করোনা মহামারির জন্য পরিকল্পনামতো কিছু করা হয়ে ওঠেনি। তাই এ বছর আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, পড়াশোনার যে ঘাটতি ছিল, সেটা পূরণ করব। যেহেতু কলেজ খুলছে, তাই বছরের শুরুর কয়েকটা মাস পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। এর পরের সময়টা পুরোপুরি নিজের জন্য। আমি ঘুরতে পছন্দ করি। তাই এ বছর ভেবেছি, বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরব। ভিডিও বানাতে পছন্দ করি, ইউটিউবে একটা চ্যানেলও আছে। এ বছর বেশ কিছু ভিডিও বানানোর ইচ্ছা আছে। আমার বই পড়ার অভ্যাস খুব একটা নেই। তাই নতুন বছরে বই পড়ার অভ্যাসটা করতে চাই। আমার বয়সীরা এখন ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে অনেক সময় নষ্ট করে। নতুন বছরে এটা কমাতে চেষ্টা করব।
আফসোস যেন না থাকে
ঈপ্সিতা কিন্নরী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
আমার বুয়েট–জীবন শেষ হতে বাকি মাত্র তিন থেকে চার মাস। এই কয়েক মাস আনন্দের কোনো কমতি রাখা যাবে না। বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করার মধ্যে দিয়ে শেষ কয়েকটা দিন এমনভাবে কাটাতে চাই, যেন পরে কোনো আফসোস না থাকে। করোনার কারণে যে দুই বছর জীবন থেকে চলে গেল, সেই সময় পুষিয়ে নিতে হবে না? এ ছাড়া ইচ্ছা আছে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটা জেলা ঘুরে বেড়ানোর। ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৫টি ঘোরা হয়েছে, বাকিগুলোও শেষ করতে হবে। এসবের বাইরে ক্যারিয়ার নিয়ে একটু মনোযোগী হওয়ারও পরিকল্পনা আছে। পেশাজীবনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করাই এ বছরের রেজল্যুশন। একটু 'চিল' আর একটু 'সিরিয়াসনেস'–এর মধ্য দিয়ে ২০২২ যেন কাটিয়ে দিতে পারি—এটাই কামনা।
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার ইচ্ছা
আসিফ ইমরান খান, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
আমার সব সময় নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। পড়ালেখার পাশাপাশি প্রোগ্রামিংয়ের টুকিটাকি বিষয়ে আরও কিছু জানার ইচ্ছা আছে। সময়োপযোগী কিছু প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে কাজ করার কথা ভাবছি। সবার জীবনেই কিছু কাজ একবার হলেও করার ইচ্ছা থাকে। অনেকে এটাকে 'বাকেট লিস্ট' বলে। আমার বাকেট লিস্টের একটি হলো কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা। স্নাতকের পড়ালেখা যেহেতু প্রায় শেষ, নতুন বছরে চেষ্টা থাকবে এ ইচ্ছা পূরণ করার। এ ছাড়া সময়ের কাজ সময়মতো শেষ করার অভ্যাস বজায় রাখতে চাই। বছর শেষে মিলিয়ে দেখব, কতটুকু পারলাম আর কতটুকু ব্যর্থ হলাম।
শরীর, মনের খেয়াল রাখব
উম্মে মোতাহারা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
২০২১ সালের ত্রুটিগুলোর উপলব্ধি থেকেই ২০২২ সালের রেজল্যুশন সাজাতে চাই। আমার প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হলো পড়াশোনায় আরও একাগ্র হওয়া, যেন উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ও লক্ষ্য বাস্তবে রূপান্তর করতে পারি। এ স্বপ্ন পূরণ করার তাগিদেই বেশ কিছু দক্ষতা উন্নয়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সেগুলো আয়ত্ত করতে চাই। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি আরও যত্নশীল হতে চাই। এটা অর্জন করতে নির্দিষ্ট সময়ে পর্যাপ্ত ঘুমানো, স্বাস্থ্যকর খাবার ও শরীরচর্চা অনেকাংশেই ভূমিকা রাখে। তাই এই অভ্যাসগুলো রপ্ত করতে চাই নতুন বছরে। ছাত্রাবস্থায় অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার উদ্দেশ্যে স্বল্প পরিসরে নিজস্ব একটি ব্যবসার উদ্যোগ নিয়েছি। ২০২২ সালে ব্যবসাটা এগিয়ে নিতে চাই।