নখ দেখেই রোগ শনাক্ত ও প্রতিরোধ
নখের দিকে ভালো করে শেষ কবে তাকিয়েছেন? এর মধ্যে খেয়াল করে দেখেছেন নিজের নখ? আর নেইল পলিশে ঢাকা থাকলে তো সেভাবে খেয়াল করার কথাও নয়। কিন্তু আপনার শরীরের অসুখ-বিসুখের খোঁজখবর জানান দিতে দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে আপনার নখ। স্বাস্থ্যবান ও রোগহীন মানুষের নখ হবে সাদাটে গোলাপি আভার, কিন্তু ফ্যাকাশে নয়। পুষ্টির ঘাটতি, মানসিক ও শারীরিক চাপ এমনকি শরীরে বাসা বাঁধা নানা রোগের ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে নখ দেখে। তাই জেনে নিন কেমন নখে কোন রোগের আশঙ্কা থাকে আর কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শসহ হাফিংটন পোস্ট-এর প্রতিবেদন।
১. ফ্যাকাশে সাদাটে নখ
সাদা নখের সমস্যাটা কিন্তু অত সাদামাটা নয়। আপনার নখ যদি ফ্যাকাশে বা বিবর্ণ দেখায়, তাহলে আপনি হয়তো অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন। রক্তে লোহিত কণিকার অভাব থাকলে এমন হতে পারে। লৌহ বা আয়রনের অভাব থেকে রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে পারে আর তা থেকে ত্বক ও টিস্যু বিশেষত নখের নিচের টিস্যু বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রচুর পরিমাণে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খান। সবুজ পাতার শাকসবজি, শিমজাতীয় খাবার এবং লাল মাংস থেকে দ্রুত বেশি পরিমাণে আয়রন পেতে পারেন। এ ছাড়া, সাদাটে ফ্যাকাশে নখকে কিডনির রোগ, ডায়াবেটিস ও যকৃতের রোগের আগাম লক্ষণ হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে। এমনটা হলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ জরুরি। প্রচুর পরিমাণে আমিষ, আঁশযুক্ত খাবার, শাকসবজি ও শস্যদানা খেতে হবে।
২. হলদেটে নখ, মোটা নখ
হলদেটে নখ দেখতে যেমন খারাপ লাগে এর নেপথ্য কারণটাও কিন্তু খারাপ। হলদে রঙের হোক বা না হোক, ভারী হয়ে যাওয়া বা মোটা হয়ে যাওয়া নখ ফাঙ্গাস বা ছত্রাক সংক্রমণ থেকে হয়। এ অবস্থায় নখের নিচের টিস্যুও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে শুধু ছত্রাকনাশক ওষুধ দিয়ে তা না-ও সারতে পারে। এ জন্য চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। চিকিত্সক নখে সংক্রমণের মাত্রা দেখে খাওয়ার ওষুধ এবং মাখার ওষুধও দিতে পারেন।
৩. নখে কালো-খয়েরি দাগ
নখে খাড়াভাবে কালো বা গাঢ় খয়েরি দাগ মোটেও হেলাফেলা করার বিষয় নয়। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাবে মারাত্মক মেলানোমায় আক্রান্ত হলে এমনটা হতে পারে। এমন হলে শুরুতেই তা শনাক্ত করে চিকিত্সা প্রয়োজন। এমন দাগ দেখা দিলে নখে একটা পলিশ ব্যবহার করতে পারেন, যাতে সরাসরি সূর্যালোক এই সমস্যাকে আর বাড়াতে না পারে।
৪. ভাঙা ভাঙা, খোদাই করা নখ
নখ দেখে যদি মনে হয়, নখ যেন ভেঙে ভেঙে উঠে আসছে বা খোদাই হয়ে আছে, তাহলে বুঝতে হবে আপনি হয়তো সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত। এই জটিল রোগ নখ ছাড়াও ত্বকে এবং হাড়ের সন্ধিতেও হতে পারে। এমন হলে দ্রুত চিকিত্সকের সঙ্গে দেখা করুন। খাওয়ার ওষুধ, ইনজেকশন বা লাইট থেরাপির সাহায্যে এর চিকিত্সা হতে পারে।
৫. পাতলা, উত্তল বা অবতল নখ
খুবই পাতলা দুর্বল নখ। এটি সামান্য আঘাতেই ভেঙে যায়। এমন হলে বুঝতে হবে আপনার হয়তো থাইরয়েডের সমস্যা আছে। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যার কারণে বা থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যের কারণে চুল পড়ার মতো নখ বৃদ্ধিও প্রভাবিত হয়। এছাড়া ফুলে ওঠা বা অবতল নখ ফুসফুস ও হূিপণ্ডের রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর বেশি মাত্রায় রক্তশূন্যতা ও আয়রন বা লৌহের অভাবে নখ উত্তল হতে বা দেবে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা করা জরুরি।
৬. নখে সাদা সাদা দাগ
নখে সাদা সাদা আড়াআড়ি দাগ খারাপ বিষয়। কিডনি ও যকৃতের রোগের কারণে এবং প্রোটিন ঘাটতির কারণে এমন হতে পারে। দেহের ভেতরে বাসা বাঁধা কোনো রোগের কারণে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়ে এমনটা হতে পারে। শরীরে নির্দিষ্ট পুষ্টির ঘাটতি দূর হলে বা দেহের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লড়াই করে অসুখটা সারাতে পারলে অনেক সময় দুই-তিন সপ্তাহে তা আপনা আপনিই দূর হয়ে যেতে পারে। তা না হলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।
৭. নীল হয়ে যাওয়া নখ
নখ নীল হয়ে যাওয়া মানে আপনার শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হচ্ছে না। শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা এবং হূদরোগ থেকেও এটা হতে পারে। চিকিত্সাবিজ্ঞানে একে বলে সায়ানোসিস। শরীর অক্সিজেন সরবরাহের জন্য প্রাণ খুলে দম নেওয়ার অভ্যাস করুন। ফুসফুস বা হূিপণ্ডের সমস্যা দেখা দিলে সে বিষয়ে সচেতন হন। আর সমস্যাটা দীর্ঘদিন ধরেই থেকে গেলে দ্রুত চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।