নকশিকাঁথার বর্ণিল ইতিবৃত্ত
বৃহত্তর গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতি বা লোকশিল্পের বিভিন্ন মাধ্যম নিয়ে কম-বেশি গবেষণামূলক গ্রন্থ রচিত হলেও, কেবল নকশিকাঁথা নিয়ে গবেষণা বা সাধারণ আলোচনামূলক গ্রন্থের সংখ্যা সত্যিই অঙ্গুলিমেয়। সেই বিচারে গবেষক ও সমাজসেবী মালেকা খানের লেখা নকশিকাঁথা: বাংলাদেশের নন্দিত শিল্পের স্মারক গ্রন্থটি এ ধারায় নিঃসন্দেহে এক উজ্জ্বল সংযোজন। নকশিকাঁথার উৎস ও ঐতিহাসিকতা, তার নান্দনিকতা, ক্রমবিবর্তন ও আধুনিকতায় রূপান্তরের যে বিবরণ লেখক বইয়ে তুলে ধরেছেন, তা খুবই চমকপ্রদ।
মালেকা খান একজন সাধারণ গবেষকের মতো শুধু তথ্যসূত্র-সহায়ক নানা বইপত্র ঘেঁটেই আলোচ্য বইয়ের তথ্য সংগ্রহ করেননি, গেছেন দেশের অনেক জেলা-উপজেলার গ্রামেগঞ্জে।
কত বিশদভাবে যে নকশিকাঁথা সম্পর্কে লেখা হয়েছে এখানে, সূচিপত্রে উল্লিখিত শিরোনামগুলোই যেন তা বলে দেয়। ‘তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি’, ‘পটভূমি’, ‘বাংলাদেশের নকশিকাঁথা: অতীত ও বর্তমান’, ‘নকশিকাঁথা: পথিকৃৎজন’, ‘নারীর অবদান’, ‘নকশার শ্রেণিবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য’, ‘নকশিকাঁথা: শিল্প ও শিল্পী’, ‘কাঁথার নকশা ও মোটিফে সৃজনশীলতা’, ‘নকশিকাঁথার আধুনিক ব্যবহার ও রূপান্তর’, ‘নকশিকাঁথার বিশ্বভ্রমণ’, ‘কথাসাহিত্যে কাঁথা’, ‘নকশিকাঁথার বিপণন’, ‘কাঁথার ঐতিহাসিক ভূমিকা’ ও ‘একাত্তরে কাঁথার ভূমিকা’—এ শিরোনামগুলো পড়ার পর পাঠককে বইটির অন্দরমহলে প্রবেশ করতে হয়।
আর পাঠ শেষে মনে হয়, নকশিকাঁথা সম্পর্কে এত কিছু জানার বাকি ছিল!
বইটির সবিশেষ বৈশিষ্ট্য এর ‘অ্যালবাম’ অধ্যায়টি। ৪৪ পৃষ্ঠাজুড়ে এখানে তুলে ধরা হয়েছে নকশিকাঁথার বিচিত্র রূপ। প্রতিটি ছবি চার রঙা। পুরো বইটি আর্ট পেপারে ছাপা।
এমন একটি স্মরণীয় বই রচনার জন্য গবেষক মালেকা খান এবং এর পৃষ্ঠপোষকতা করা ও প্রকাশ করার জন্য সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও প্রকাশককে আন্তরিক অভিনন্দন।
নকশিকাঁথা: বাংলাদেশের নন্দিত শিল্পের স্মারক, লেখক– মালেকা খান,প্রকাশক:পাক্ষিক অনন্যা; প্রকাশকাল: ডিসেম্বর ২০১৭, ২৮০ পৃষ্ঠা, দাম: ১৫০০ টাকা।