ধন্যবাদ জানাতে এসেছিলেন সেই ইয়াসমিন

ইয়াসমিন
ছবি: প্রথম আলো

অতীতের দুঃসময়ের কথা সুসময়ে ভুলে যাওয়া মানুষের সহজাত। কিন্তু যাঁদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা হয় না, তাঁরাই চমকে দেন। অস্ত্রোপচারের পর প্রথম আলোকে কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছিলেন ইয়াসমিন। ডিজেলের দাম বাড়ায় ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ৬ নভেম্ববাস চলেনি রাজধানীতে। খিলক্ষেত থেকে খানিকটা হেঁটে, তারপর বাড়তি ভাড়া দিয়ে কারওয়ান বাজারে পৌঁছান।

‘পরাজয়েও অপরাজেয় এক ইয়াসমিন’ শিরোনামে গত ১৪ সেপ্টেম্বর নারীমঞ্চে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে তাঁর জন্য কোনো সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়নি। বলা হয়েছিল ২৪ বছর বয়সী একজন সংগ্রামী মেয়ের কথা, যিনি মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে নিয়ে ঢাকা শহরে একা লড়াই করে চলেছেন বছরের পর বছর ধরে। শৈশবের দুঃসময়ের স্মৃতির কথা উল্লেখ করে নোয়াখালী থেকে রাজধানীর খিলক্ষেত পর্যন্ত আসার গল্প ছিল প্রতিবেদনে। স্কুল ছেড়ে বিস্কুট কারখানার শ্রমিক হয়ে যাওয়া মানুষটির এখন দ্বিতীয়বার স্তনের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন উল্লেখ ছিল সেখানে।

এ বছরের মার্চে প্রথমবারের মতো ডান স্তনের টিউমার অপসারণ করা হয়। ইয়াসমিনকে পোশাক কারখানার কাজটি হারাতে হয় এ সময়। দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার করানোর সংগতি ছিল না। প্রতিবেদনের পর এগিয়ে এসেছেন সংবেদনশীল মানুষেরা। গত ১২ অক্টোবর বনানীর একটি ক্লিনিকে দ্বিতীয়বারের মতো অস্ত্রোপচার হয় ইয়াসমিনের ডান স্তনে। মেয়েটির জন্য এগিয়ে আসা মানুষেরা তাঁদের পরিচয় প্রকাশে আগ্রহী নন। প্রতিবেদন পড়ে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ব্যক্তি নিজ দায়িত্বে ইয়াসমিনের পুরো অস্ত্রোপচারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আর্থিক সহায়তা করে ইয়াসমিনের পাশে দাঁড়িয়েছেন কেউ কেউ। যদিও সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত হননি এখনো, তবে মানুষের এই এগিয়ে আসায় আবারও সংগ্রামের শক্তিটা পেয়েছেন। আবার কাজ শুরু করেছেন মেয়েটি। অস্ত্রোপচার–পরবর্তী দুর্বলতা আছে তাঁর। এ পথটুকুর ধকল তাঁকে ক্লান্ত করেছে। চিকিৎসকেরা বলছেন আবারও হতে পারে টিউমার। সেই দুশ্চিন্তা থাকলেও দুঃসময়ে সহযোগিতা পেয়ে প্রথম আলোর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি। অস্ত্রোপচারের ২৫ দিন পর উপস্থিত হয়েছেন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে।

ইয়াসমিন আমাদেরও মনে করিয়ে দিলেন, বিপদের সঙ্গীকে ভুলতে নেই। ইয়াসমিনের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য রইল শুভকামনা।

আরও পড়ুন