দুপুরে খেলাম কিশোয়ারের তৈরি ৫ পদের রান্না
কিশোয়ার চৌধুরী। মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় রানারআপ। বিদেশ বিভূঁইয়ে থেকেও যিনি বাঙলি রান্নাকে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক পরিচিতি, তাঁর বদৌলতেই বাঙালির ফুচকা, জাউ ভাত বা পান মাস্টারশেফের মঞ্চে কুড়িয়েছে প্রশংসা।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী সম্প্রতি দেশে এসেছেন। দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসে প্রথমবারের মতো তাঁর বিশ্বনন্দিত রেসিপি দিয়ে ঢাকাবাসীকে মাতালেন আরেকবার। আর সেখানেই আবার তাঁর হাতের জাদুতে মুগ্ধ হওয়ার সুযোগ পেলাম।
দেশীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও চারুকলাকে দেশে-বিদেশে জনপ্রিয় করে তুলতে নিয়মিত নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বন্ধু দুর্জয় রহমান ও তাঁর স্ত্রী সানিয়া আহসানের আমন্ত্রণে মিলল সেই সুযোগ। তাঁদের আয়োজনে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল দ্য ওয়েস্টিন ঢাকার প্রোগো রেস্তোরাঁয় বিদেশি উপকরণের সঙ্গে বাংলাদেশের আঞ্চলিক বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে রাঁধলেন কিশোয়ার নিজে। যে খাবার আস্বাদের সুযোগ পান দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে আগত অতিথিরা।
মধ্যাহ্নভোজে কিশোয়ারের পরিবেশিত পঞ্চব্যঞ্জনে মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না। বলা ভালো আমন্ত্রিত সবাই মুগ্ধ হয়েছেন।
কী ছিল সেই মেন্যুতে
১. কম্প্রেসড বিটরুট, ফেটা ক্রেমু এবং মাইক্রো হার্ব দিয়ে তৈরি ফুচকা। বিট রুট কুচি আর বিভিন্ন হার্বের সুবাসে মনে হলো—এ জগতে কেউই তুচ্ছ নয়, কিছুই ফেলনা নয়। শুধু সেটার পরিবেশন জানতে হয়। বাংলাদেশের স্ট্রিটফুড হিসেবে ফুচকার স্বাদ আমরা সবাই জানি। চেনা সেই খাবারে কিছু নতুন উপকরণ যোগ করে কিশোয়ার তাঁর পুরো স্বাদটাই যেন করে ফেলেছেন অমৃত।
২. ফুচকার পর টেবিলে হাজির হলো হলুদ লেজের হামাচি (এক প্রকার মাছ)। সবুজ ঝোলে হাফ প্লেটের মধ্যে হামাচির টুকরা যেন অলস শুয়ে আছে। মাছের নিচে উঁকি দিচ্ছে কামরাঙা ও পেপার বেরি (বরই)।
৩. লাউ বাংলাদেশর একটি জনপ্রিয় খাবার। সেই লাউয়ের একটি পদ কিশোয়ারের হাতে খেয়ে মনে হলো এবারই প্রথম লাউ খাচ্ছি। যে ডিশে পরিবেশন করা হলো লাউ আর স্ক্যালপ। এর সঙ্গে মিসো বাটার, জাপানি নোরি এবং এডামামে ও পেঁয়াজকলির কনফি।
৪. লাউয়ের স্বাদ মুখে লেগে থাকতেই টেবিলে এল গরুর অস্থিমজ্জা আর হাঁসের কলিজা দিয়ে তৈরি একটি বিশেষ পদ। সদ্য চুলা থেকে নামানো সেই পদ মুখে দিলেই মাখনের মতো গলে পুরো মুখে ছড়িয়ে পড়ল ফোয়া গ্রা (হাঁসের কলিজা) আর বিউকো (গরুর অস্থিমজ্জা)।
৫. সব শেষ চমক ছিল ‘আফটার ডিনার মিন্ট’। মিষ্টি পানের সঙ্গে মৌরির স্বাদযুক্ত আইসক্রিম, নারকেল, খেজুর, মিষ্টি মৌরি ও গুড়ের ক্যারামেল দিয়ে তৈরি সেই পদ। স্বাদে শতভাগ নিখুঁত এই আইসক্রিমের নাম কিশোয়ার দিয়েছেন ‘আ লাভ লেটার টু ঢাকা’। এই আইসক্রিম তিনি মাস্টারশেফের গ্র্যান্ড ফিনালেতে পরিবেশন করেছিলেন। মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ায় কিশোয়ারকে যাঁরা ফলো করেছেন, তাঁরা জানেন এসব খাবারের প্রশংসা করেছিলেন বিচারকেরাও।
দেশীয় উপকরণকে কীভাবে বিদেশি ঢঙে পরিবেশন করা যায়, তা দেখিয়েছেন কিশোয়ার। আবার বিদেশি উপকরণের সঙ্গে কিছু দেশি উপাদান মিশিয়েও রান্না করছেন নানা স্বাদের সেই পঞ্চব্যঞ্জন। মাস্টারশেফে কিশোয়ারের জাউ ভাত বা আলুভর্তার রেসিপির ভিডিও দেখে অনেক বাংলাদেশি মন্তব্য করতেন, এগুলো আর বিশেষ কী! তবে যাঁরা কিশোয়ারের হাতে এসব চেনা খাবার খাননি, তাঁরা জানেন না, এভাবেও রান্না করা যায়।