দুটি জোকস, একটি ফাও
নাম: করোনা
পদবি: ভাইরাস
ডাকনাম: কোভিড
বয়স: নাইনটিন
মা: চায়না
কারেন্ট বয়ফ্রেন্ড: ইউএসএ
এক্স বয়ফ্রেন্ড: ইতালি, ইরান, স্পেন।
ইহা একটি জোকস। গোপাল ভাঁড় কিংবা নাসিরউদ্দিন হোজ্জার নয়। উনিশের লাস্যময়ী করোনা সুন্দরীকে নিয়ে একালের কোনো রসিকের বানানো জোকস। এমন হাজারো জোকস, ভিডিও, মিম ঘুরে বেড়াচ্ছে ইন্টারনেটের দুনিয়ায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, হোয়াটসঅ্যাপে।
এই নিদেনকালে যখন উঠতে–বসতে বউয়ের সঙ্গে, স্বামীর সঙ্গে ক্যাচরম্যাচর লেগেই আছে বলে আপনি উদাস হয়ে যাচ্ছেন ঘন ঘন, যখন একটা স্ট্যাটাস লিখে দেশ-জাতিকে উদ্ধার করে দেবেন বলে মনস্থির করলেন আর অমনি দেখলেন ঘন হয়ে আসছে এক নারীমূর্তি কিংবা পুরুষ মূর্তি; যখন কষে একখানা কবিতা লিখবেন বলে ঠিক করলেন আর ঠিক সেই অসময়ে আপনার বছর দুই বয়সের সন্তান ঘাড়ে উঠে সুসু করে দিয়ে খিকখিক করে হাসতে থাকবে; তখন পৃথিবীকে বড় নিষ্ঠুর, বড় নির্দয়, বড় পাষাণ মনে না হয়ে যাবে না আপনার।
মহামতী বুদ্ধ কেন জোছনা দেখে ঘর ছেড়েছিলেন, সেই মহারহস্যময় প্রশ্নের উত্তর আপনি খুঁজতে থাকবেন—সে নারী কিংবা পুরুষ যে–ই হোন না কেন। আপনি তখন ভাবতে থাকবেন, এই মায়াময় পৃথিবী আপনাকে মহাপুরুষ হতে দিল না। রাস্তার আধন্যাংটা পাগলটার মতোও স্বাধীন হতে পারলেন না আপনি। তখন, ঠিক সেই মাহেন্দ্রক্ষণে আপনার কেতাদুরস্ত মুঠোফোনখানা টিং করে উঠবে। আপনি চমকে উঠে তাকিয়ে দেখবেন, আপনারই মতো আপনার কোনো উদাস বন্ধু আপনাকে পাঠিয়েছেন লিক হয়ে যাওয়া কারও গোপন ভিডিও। অথবা কোনো...থাক সেসব কথা। আপনি সেগুলো দেখতে দেখতে ভাববেন, পৃথিবীতে উইকিলিকসের প্রয়োজন আছে।
এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আপনার ম্যাসেঞ্জার ইনবক্স উপচে পড়া উইকিলিকসের ফাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে আপনি হঠাৎ আবিষ্কার করবেন, এক ভীষণ সৃষ্টিশীল মানুষ করোনাকালে করোনার এক সৃষ্টিছাড়া সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। আপনি সেটা শুনতে শুনতে বা পড়তে পড়তে হো হো করে হেসে উঠবেন।
যখন বিবিধ চাপে আমরা হাসতেই ভুলে গেছি, তখন এক সৃষ্টিছাড়া মানুষ আমাদের হাসিয়ে দিয়ে গেলেন, এটা এক অসাধারণ ব্যাপার। তার মানে এই অস্থির সময়ে কেউ না কেউ আছেন, যিনি আমাদের মতন গোমরা মুখে বসে নেই। এসব যখন ভাবছি, তখন আমার কেতাদুরস্ত মুঠোফোনখানা পিং করে উঠে জানান দিল, আমার কোনো এক উদাসী বন্ধু আমায় স্মরণ করেছেন। তিনি আমাকে একখানা ছবি পাঠিয়েছেন। তাতে লেখা, ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি। আপনাদের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে এই বছরটা মনে হয় লুঙ্গিতেই কাটিয়া যাইবে। তাই সপ্তাহে অন্তত একবার প্যান্ট বাহির করিয়া তাহার চেইনে দু ফোঁটা করে তেল দিবেন। তাহা না হইলে বছর শেষে লকডাউন খুলিয়া গেলেও প্যান্টের চেইন আর খুলিবে না।’ লুঙ্গির কথায় আমার মনে পড়ে গেল, কে যেন বলেছিলেন, ভাগ্য আর লুঙ্গি একই রকম। কখন যে খুলিয়া যাইবে, তাহা কেহ কহিতে পারে না। কাজেই প্যান্টের চেইনে তেল মাখিয়া রাখাই ভালো।
২.
করোনাকালে তৈরি হওয়া এই জোকসগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশের প্রধান চরিত্রে আছেন কে? ঠিক ধরেছেন। করোনার কারেন্ট বয়ফ্রেন্ড যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কেন তিনি নায়ক, সে প্রশ্নের বহু বহু ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণ করা সম্ভব। এই মুহূর্তে সেটা করার চাপ শরীর নিতে পারবে না বলে বাদ দেওয়া হলো। তবে এটা কিন্তু বলাই যায়, যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রেসিডেন্ট কেনেডি সাহেবের সঙ্গে যদি কখনো ট্রাম্প সাহেবের দেখা হয়, কেনেডি সাহেব নিশ্চয়ই চোখ টিপে বলবেন, ডুড, আমার টাইমেও ফার্স্টলেডি চ্যাতা ছিল, তোমার টাইমেও! ব্যাপার কী?
এসব ব্যাপার খোঁজার জন্য আপনারা ফেলু মিত্তির কি মাসুদ রানা যাকে ইচ্ছা হায়ার করুন। আমি শুধু এটুকুই বলব, ফার্স্টলেডি চ্যাতা না থাকলে কোনো পুরুষ মানুষের পক্ষে সূর্যে অভিযাত্রী পাঠানোর কথা কল্পনাও করা সম্ভব নয়। কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ অর্থাৎ ফুটবল মাঠে ভিজতে থাকা ক্রোয়েশিয়ার সেই প্রেসিডেন্টের ফার্স্ট পারসন চেতে গেলে তিনি কোথায় অভিযাত্রী পাঠাতে চান, সেটা জানার ইচ্ছা আমার বহুদিনের।
৩.
ফাও বা ফাউ শব্দটার সঙ্গে আমাদের পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ডাইনিংয়ে খাওয়ার সূত্রে। তখন ছাত্র রাজনীতি এক বিরাট ব্যাপার। আমরা গ্রাম বা মফস্বলে পত্রিকার পাতায় পড়তাম, অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ের তমুক হলের ডাইনিংয়ে ফাউ খেতে গিয়ে সংঘর্ষ, এমন শিরোনামের সংবাদ। তখন থেকে এখন পর্যন্ত এই ফাউ বা ফাও শব্দটি আমাদের কাছে ভয়ংকর শব্দ হিসেবে পরিচিত।
আমাদের ছোটবেলায় অজানা জগতের রহস্যময় খবর শুনিয়ে আমাদের সমৃদ্ধ করতেন যে মানুষটি, তাঁর নাম শান্ত। সম্পর্কে আমাদের পাড়াতুতো কাকা। তিনি ছিলেন আমাদের মাঠের পরের দূরের দেশের গল্প কথক। যতই বড় হই, ততই তাঁর গল্পের ঝাঁপি রহস্যময় হতে থাকে। এমনি এক দিনে তিনি ক্লান্ত, বিধ্বস্ত হয়ে কোথা থেকে ফিরে, সন্ধেবেলা, কিন্তু তখনো ঠিক সন্ধ্যে হয়নি, এমন সময় গাঢ় স্বরে বললেন, ডাবল টাকা দিলাম। কিন্তু…একটা ফাউও দিল না!