ঢেউখেলানো সীমানাপ্রাচীর। আম, কাঁঠাল ও তালগাছের শীতল ছায়াঘেরা পরিবেশ। এটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ি।
কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর তীরে শিলাইদহ কুঠিবাড়ির অবস্থান। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে এই কুঠিবাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছ থেকে জানা গেল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষেরা নাটোরের জমিদার পরিবারের কাছ থেকে শিলাইদহের জমিদারি কিনে নেন। জমিদারি পরিচালনার জন্য তাঁরা প্রথম দিকে পদ্মার তীরঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা শেলি সাহেবের নীলকুঠি ভবনটি ব্যবহার করতেন। সেই সুবাদে রবীন্দ্রনাথ তাঁর তরুণ বয়স থেকেই শিলাইদহের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু পদ্মার ভাঙনে নীলকুঠি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ১৮৯২ সালে ঠাকুর পরিবার শিলাইদহে কুঠিবাড়ি তৈরি করেন। বাড়িটি তৈরির দায়িত্ব ছিল কবির ভ্রাতুষ্পুত্র নীতীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর। ১৩ বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত এই কুঠিবাড়ির মাঝামাঝি অংশে ছয় বিঘা জমি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। সেই অংশের কেন্দ্রে আড়াইতলা ভবনটি কুঠিবাড়ি। এটি এখন শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি নামে পরিচিত।
জমিদারি লাভের পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বারবার এই বাড়িতে আসতেন। তিনি পরিবারসমেত বেশ কয়েকবার দীর্ঘদিন কুঠিবাড়িতে বসবাস করেছেন। এই বাড়িতে বসেই তিনি নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতাঞ্জলির অংশবিশেষসহ বহু কালজয়ী লেখা লিখেছেন।
কুঠিবাড়ি ও পদ্মাবোটে বসে যেসব কবিতা রচিত হয়, সেগুলোর মধ্যে শৈশব সন্ধ্যা, উর্বশী, দিনশেষে, দুইবোন, আবেদন, মানস সুন্দরী, নববর্ষা, আষাঢ়, বিরহ, পথ চাওয়া, মিলন, বিচ্ছেদও উপহার উল্লেখযোগ্য। নাটকের মধ্যে চিরকুমার সভা, গোড়ায় গলদ (প্রহসন), চিত্রাঙ্গদা, রাজা, অচলায়তন; গল্পের মধ্যে কঙ্কাল, শান্তি, সমাপ্তি, ফেল, শুভদৃষ্টি ও নষ্ট নীড় উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া কবি শিলাইদহে অসংখ্য গান লিখেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো আমার এই পথ চাওয়াতে, কে গো বিদেশি, তুমি একটু কেবল বসতে দিয়ো কাছে, এবার তোরা আমার যাবার বেলাতে, যদি জানতেম আমার কিসের ব্যথা ইত্যাদি। এখানে বসেই কবি ১৯১২ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন।
লেখক: সভাপতি, কুষ্টিয়া বন্ধুসভা
সহযোগিতা করেছেন কুষ্টিয়া প্রতিনিধি তৌহিদী হাসান