বর্তমানে পতিসরে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি নিদর্শনের অন্যতম হচ্ছে কাছারি বাড়ি। একতলা কাছারি বাড়িটি সাদা রঙের, জানালাগুলো সবুজ। কাছারি বাড়িটির মূল দরজা (সিংহদুয়ার বা ফটক) আলপনা করা। এর বেশ উঁচুতে মাথার দুপাশে সিংহমূর্তি। একটি বাথটাব, একটি নোঙর, বিশাল আয়না, আরাম কেদারা, ওয়ার্ডরোব, ঘড়ি, সিন্দুক, খাজনা আদায়ের টেবিল, খাট, আলমারি, দরজার পাল্লা, জানালা ইত্যাদি রয়েছে বাড়িতে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৯০ সালে এ কাছারি বাড়িটির দায়িত্ব গ্রহণ করে। বর্তমানে এটি রবীন্দ্র জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কাছারি বাড়ির দক্ষিণ দিকে রথীন্দ্রনাথ কৃষি ইনস্টিটিউশনের মাঠ। একেবারে দক্ষিণ দিকে মাঠের কোল ঘেঁষে ইতিহাসখ্যাত নাগর নদ। আত্রাই উপজেলা পরিষদের অনুমতি নিয়ে দর্শনার্থীরা এখানে অবস্থান করতে পারবেন।
কাছারি বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ মিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে কবির বড় ছেলে রথীন্দ্রনাথের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ কৃষি ইনস্টিটিউশন (১৯৩৭)’ অবস্থিত। এই ইনস্টিটিউশনে শুরু থেকেই কৃষিবিষয়ক পাঠ্যসূচি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বর্তমানে সেখানে আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হলেও এখনো সে সময়কার মাটির তৈরি দুটি ভবন রয়েছে।
এ ছাড়া পতিসরে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ অ্যাথলেটিক ক্লাব (১৯৩৭) ও রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য পরিষদ (১৯৮৬)।
পতিসরকে গড়ে তুলতে রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে বড় কাজ নানামুখী সমবায় ও পতিসর কৃষি ব্যাংক।
প্রজাদের জন্য চাষব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর জন্য ১৯০৬ সালে কবির একমাত্র পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমেরিকার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষির ওপর পড়াশোনার জন্য পাঠিয়েছিলেন। রথীন্দ্রনাথ বিদেশে পড়াশোনা শেষে দেশে এসে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে শেখান প্রজাদের। তিনি পতিসরে কলের লাঙল দিয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি শুরু করেন।
পতিসরে বসে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে’; ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে’ প্রভৃতি শিশুপাঠ্য কবিতা। কাব্যনাটিকা বিদায় অভিশাপ এখানে লিখেছেন। চৈতালী, কল্পনা ও কণিকা কাব্যের অনেক কবিতা নাগর নদে পদ্মার বোটে (বজরা) বসে লেখা। এ ছাড়া ছোটগল্প ‘প্রতিহিংসা’ ও ‘ঠাকুরদা’ এবং ঘরে-বাইরে ও গোরা উপন্যাসের অংশবিশেষ পতিসরে লেখা।
পতিসর রবীন্দ্র জাদুঘরের মূল ফটকের সামনে একটি ফলকে পতিসরে রবীন্দ্র–রচনার তালিকা দেওয়া রয়েছে।
লেখক: সদস্য, নওগাঁ বন্ধুসভা
সহযোগিতায়: নওগাঁ প্রতিনিধি ওমর ফারুক