ফ্রিডম মানে স্বাধীনতা। নিজের কাজটি নিজের মতো করতে পারা। নিজ ইচ্ছের কথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারা। ফ্রিডম স্যানিটারি ন্যাপকিনের সৌজন্যে, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘স্বাধীন নারীর গল্প: সিজন ২’-এর মাধ্যমে এমনই তিন স্বাধীন নারীর গল্প জানা গেল।
নিজের ভালো থাকাটাই সবচেয়ে জরুরি: কামরুন নাহার ডানা
কামরুন নাহার ডানা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একজন জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর। একটি প্রতিষ্ঠানে কনটেন্ট তৈরির কাজও করেন। মূলধারার কিছুটা বাইরের এই পেশায় নারী হিসেবে অনেক ধরনের বাধা এলেও সব পেরিয়ে তিনি একজন স্বাধীন নারী। দিনের শুরুতে একজন নারী হিসেবে আলাদা রকমের কোনো দায়িত্বের চাপ তিনি অনুভব করেন না। এর জন্য অবশ্য শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের কৃতিত্ব দেন তিনি। ডানা ও তাঁর স্বামী দুজনই ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে কর্মক্ষেত্রে চলে যান। পড়াশোনা ও পেশাগত জীবনের ক্ষেত্রে সফল এই নারী মনে করেন, পরিবারের সহায়ক মনোভাব এবং সহযোগিতা নারীদের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে খুব গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি সামাজিক বাধাবিপত্তিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কাজের প্রয়োজনে একজন নারী নয়টা-পাঁচটার বাইরেও পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন, শহরের বাইরে যাবেন—এ ব্যাপারগুলো সমাজে এখনো সহজভাবে দেখা হয় না। কোনো মেয়ে স্বামী ছাড়া একা কোথাও ভ্রমণে গেলে তো নানা কটুকথা শুনতে হয়। এ ছাড়া কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে একজন পুরুষের তুলনায় নারী হিসেবে তাকে অনেক বেশি নেতিবাচক মন্তব্যের মুখোমুখি হতে হয় অন্তর্জালে। কিন্তু দিন শেষে নিজের কাজ ও মতামতকেই গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষে তিনি। তাঁর মতে, নিজে ভালো থাকাটাই সবচেয়ে জরুরি। তাই নিজের জন্য সময় বের করা, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, বিশ্রাম নেওয়া—এ ব্যাপারগুলোকে তিনি প্রাধান্য দেন। মজাচ্ছলেই ডানা বলেন, ‘বাংলা চলচ্চিত্রে শাবানার চরিত্রের সেই সর্বংসহা, আত্মত্যাগী নারীরূপ তিনি ধারণ করতে চান না।’ শত বাধা আর নেতিবাচকতা আসবেই। এই সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে, পার হয়ে স্বাধীন জীবনযাপনের পক্ষপাতী তিনি।
আবেগ দিয়ে নয়, বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা দিয়ে এগোতে হবে নারীদের: তামান্না চৌধুরী
বাংলাদেশের স্বনামধন্য একজন পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। কর্মদক্ষতা ও আন্তরিকতা দিয়ে বহু মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন তিনি। সদা হাস্যোজ্জ্বল এই সফল ও স্বাধীন নারী অবশ্য নারীদের দায়িত্বের জায়গাটিকে গুরুত্ব দেন বেশি। তিনি মনে করেন, একজন নারী দিনের শুরুতেই দক্ষ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে সারা দিনের রুটিন সাজিয়ে দিতে পারেন। ঘরের রান্না-খাওয়া থেকে শুরু করে যতক্ষণ সেখানে থাকবেন না, তখন কীভাবে কী হবে, তার পুরোটা ঠিক করে নিতে সক্ষম। আর কর্মক্ষেত্রেও শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতা ও সঠিক কর্মপরিকল্পনাই সাফল্যের চাবিকাঠি।
তিনি মনে করেন, নিজের ১৮ বছরের কর্মজীবনে নারী হিসেবে সেভাবে কোনো বাধার সম্মুখীন হননি। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন, সেখানে সুষ্ঠু ও সুন্দর কাজের পরিবেশ পেয়েছেন। পুষ্টি নিয়ে পড়াশোনার নেপথ্যে ছিল তাঁর নিকটাত্মীয় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার উৎসাহ ও পরামর্শ। পরবর্তী সময়ে পড়া শেষ করে তিনি ভারত থেকে ইন্টার্ন করেন। এই পর্যায়ে তিনি প্রকৃত অর্থে বুঝতে পারেন, কোনো গুরুতর অসুস্থ মানুষের জীবনে একজন পুষ্টিবিদের গুরুত্ব কতখানি। অথচ আমাদের দেশে পুষ্টিবিদের কাজ শুধুই রান্নাবান্না–সংশ্লিষ্ট—এমনটাই ভাবা হয়। তামান্না চৌধুরী মনে করেন, নারী-পুরুষ সবার জীবনেই প্রতিবন্ধকতা আসে। নিজেকে অত্যাচারিত বা দুর্বল অবস্থানে না ভেবে নারীকেই দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে নারীকে নিজের বক্তব্য প্রকাশে দক্ষ হতে হবে। শুধু আবেগ দিয়ে নয়, বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে নারীদের।
হাল না ছাড়াই সাফল্যের মূলমন্ত্র: অবন্তী সিঁথি
আরেক স্বাধীন নারী বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী অবন্তী সিঁথি। অবশ্য দিনের শুরুতে একজন পুরুষের থেকে আলাদা করে তিনি কোনো চাপের সম্মুখীন হন বলে মনে করেন না। এর জন্য নিজের পরিবার, মা ও দিদিকে কৃতিত্ব দেন সিঁথি। ঘুম ভেঙে মুঠোফোনে একটু সময় কাটিয়ে রেওয়াজ করার মাধ্যমেই দিন শুরু হয় এই কণ্ঠশিল্পীর। তিনি বিশ্বাস করেন, হোঁচট খেয়ে আবার উঠে দাঁড়িয়ে পথচলাই জীবন।
তাঁর নিজের জীবনে তিনি এর প্রতিফলন দেখেন। সব সময়ই প্রথমবার বাধার সম্মুখীন হয়ে পরেরবার ঠিকই সফল হয়েছেন তিনি। ক্লোজআপ ওয়ানের ২০০৬-এর আয়োজনে অংশ নিয়েও সাফল্য পাননি। বাবা মারা যাওয়ার পর গান করাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরে আবারও সাহসে বুক বেঁধে ২০১২ সালে একই সংগীত প্রতিযোগিতামূলক রিয়েলিটি শোতে অংশ নিয়ে সেরা দশে এসেছেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। নারী হিসেবে সামাজিক প্রতিবন্ধকতাগুলো স্বাভাবিকভাবেই মোকাবিলা করতে হয়েছে অবন্তী সিঁথিকে। আবার বেড়ে ওঠার সময়ে ‘তিন বোনের ভাই নেই’ বলেও হয়েছে অনেক কথা। এগুলোকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ অবন্তী। বরং এগিয়ে যাওয়া ও নিজের পায়ে দাঁড়ানোকেই তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যাপার বলে মনে করেন। নিজের পছন্দ বা প্যাশনের কাজটি বেছে নেওয়া এবং হাল না ছাড়াই তাঁর কাছে সাফল্যের মূলমন্ত্র।