তাঁরা আয়রনম্যান
>জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে অনুষ্ঠিত আয়রনম্যান ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশি দুই প্রতিযোগী আরাফাত ও সুমিত। সাঁতার, সাইক্লিং ও দৌড়—প্রতিযোগিতার এই তিন ধাপে মোট ২৩১ কিলোমিটারের দুঃসাহসিক যাত্রা সম্পন্ন করে দুজনই পেয়েছেন সনদ।
আরাফাত কেন আয়রনম্যান আয়োজনকে এগিয়ে রাখছেন, তার আঁচ পাওয়া গেল প্রতিযোগিতাটি সম্পর্কে জেনে। প্রতিযোগিতার নাম—আয়রনম্যান ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। সাঁতার, সাইক্লিং ও দৌড়—প্রতিযোগিতার তিনটি ধাপ। শুরুতে ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার সাঁতার কাটতে হয়, সাঁতার শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই সাইকেল চালিয়ে যেতে হয় ১৮৫ কিলোমিটার এবং শেষটা করতে হয় ৪২ দশমিক ২ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড়ের মাধ্যমে। সব মিলে ২৩১ কিলোমিটার পথটুকু পাড়ি দিতে হয় ১৫ ঘণ্টার মধ্যে।
রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের এই আয়োজন এবার ছিল জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে। ৩০ জুনের সেই আয়োজনে মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাতের মতো আরও একজন জার্মানপ্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নিয়েছিলেন। তিনি সুমিত পাল। ১৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট সময় নিয়ে সুমিত পালও আয়রনম্যান সমাপ্তকারী হিসেবে পদক ও সনদ পান। এই তথ্যটুকুও জানালেন আরাফাত। ৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বসে তাঁর সঙ্গে আলাপ।
সেই আলাপেই রোমাঞ্চকর আয়রনম্যান অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছিলেন আরাফাত, ‘সাঁতার শুরু হবে ফ্রাঙ্কফুর্টের ল্যাঙ্গার ওয়াল্ডসি হ্রদে। আগে থেকেই সে জায়গা আমাদের জানা। সাঁতার শেষে সেখান থেকেই আবার শুরু হবে সাইক্লিং। এ জন্য আগের দিন সেখানে সাইকেল রেখে আসি। কিন্তু বিপত্তি বাধল সেখানে যাওয়ার সময়টায়।’ সুমিত পালসহ একসঙ্গেই যাচ্ছিলেন আরাফাত। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কারণে পুলিশ তাদের অন্য রাস্তা ব্যবহার করতে বলে। জার্মান ভাষা না বোঝার কারণে আরাফাতেরা দলবলে গুগল ম্যাপে ভরসা করে অন্য পথে যান। আরাফাত বলছিলেন, ‘ঘুরেফিরে আবার যখন আগের জায়গাতেই ফিরে আসি, তখন বুঝলাম পথ ভুল করেছি। প্রতিযোগিতা শুরুর প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে আমরা বাসা থেকে বেরিয়েছিলাম। ভুল পথের কারণে ততক্ষণে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়।’
পথ ভুল করার আফসোস নিয়েই পানিতে নামেন আরাফাত ও সুমিত। শুরু হয় ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার পেরোনোর চ্যালেঞ্জ। এভাবে ধাপে ধাপে ১৮৫ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে এবং ৪২ দশমিক ২ কিলোমিটার দৌড়ে আয়রনম্যান খেতাব জিতে নেন দুজন। আরাফাত বলছিলেন, ‘আয়রনম্যান প্রতিযোগিতায় আমি আগেও অংশ নিয়েছি। ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ার সেই আয়োজনে ১২ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট সময় নিয়ে ধাপগুলো শেষ করেছিলাম। তাই এবার অংশ নিয়েছিলাম অনেকটা আগের সময়কে অতিক্রম করার জন্যই।’
নিজের আগের রেকর্ড ভেঙে ২৯ মিনিট কম সময় নিয়ে নতুন মাইলফলক গড়েছেন আরাফাত। আর এর পেছনে রয়েছে এক বছরের কঠিন অনুশীলন। পেশাগত জীবনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক আরাফাত। নিয়মিত কাজের ফাঁকেই অনুশীলন করেছেন। প্রতিদিনের অনুশীলন ছাড়াও কখনো গেছেন কক্সবাজারে সাঁতার কাটতে, কখনো সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। রোমাঞ্চপ্রিয় আরাফাত জার্মানির আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে চলে গিয়েছিলেন ১২ দিন আগেই। সেখানে গিয়েও অনুশীলন করেছেন। সেই অনুশীলনের সুফলও পেয়েছেন। তাই আরাফাত প্রমাণ করেছেন ইচ্ছা আর চেষ্টা থাকলে কিছুই অধরা থাকে না।
সেই জয় করার স্বপ্নই তিনি ছড়িয়ে দিতে চান তরুণদের মধ্যে। সাঁতার, সাইক্লিং, দৌড়ের মতো আউটডোর স্পোর্টসে অংশ নিতে তরুণদের উদ্বু্দ্ধ করতে চান। আরাফাত বলছিলেন, ‘এই খেলাগুলো শারীরিক ও মানসিক শক্তি বাড়ায়। জয় করার অদম্য শক্তি তৈরি করে। তাই আমি তরুণদের মধ্যে এই খেলাগুলো জনপ্রিয় করার পাশাপাশি সম্মিলিতভাবে আয়োজনও করতে চাই।’