টিকটকই ভবিষ্যৎ
অল্প দিনের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে টিকটক। অনেকে বলছেন, সামাজিক এই যোগাযোগমাধ্যমই প্রযুক্তি দুনিয়ার ‘নেক্সট বিগ থিং’। আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে টিকটককে গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে টিকটকে রুচিশীল কনটেন্টের অভাব, এটি তরুণদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে—এমন অপবাদও শোনা যায়। তরুণদের মধ্যেও রয়েছে টিকটক নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। দেশের নানা প্রান্তের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীর কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম টিকটক সম্পর্কে তাদের ভাবনা।
গত এক-দুই দশকে মানুষের মনোযোগের সীমা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। মাইক্রোসফট তাদের এক গবেষণায় বলছে, মানুষ গড়ে মাত্র আট সেকেন্ড এক জায়গায় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে। এই ঘটনার প্রভাব কনটেন্টের জগতেও ব্যাপক। বহু মানুষ এখন আড়াই ঘণ্টার সিনেমার বদলে কয়েক মিনিটের ‘মুভি এক্সপ্লেনেশন ভিডিও’ দেখতে পছন্দ করে। কোনো কনটেন্ট প্রথম কয়েক সেকেন্ডে যদি আপনাকে না টানে, তাহলে আপনি স্ক্রল করে এগিয়ে যান। কারণ, ফেসবুক-ইউটিউব-টিকটকের মতো অ্যাপগুলোতে ভিডিও বা ছবির অভাব নেই।
হুট করে ভাবলে এই পুরো ব্যাপারটিকে আপনার হয়তো আশঙ্কাজনক মনে হতে পারে। ভাবতে পারেন, শশাঙ্ক রিডেমশন কিংবা গডফাদার-এর মতো ‘ক্লাসিক স্লো বার্ন’ কনটেন্টগুলো কি তাহলে হারিয়ে যাবে?
না, এমনটা হবে না। দিন দিন নেটফ্লিক্সের চাহিদা বাড়ছে। এক জরিপে দেখা গেছে, অস্ট্রেলীয়রা সপ্তাহে গড়ে ৪ দশমিক ৩ ঘণ্টা পডকাস্ট শোনার পেছনে সময় দেয়। ফলে এটা নিশ্চিত যে মনোযোগ ধরে রাখার মতো ভালো কনটেন্ট তৈরি হলে মানুষ সময় দেবে।
মুশকিল হলো, মানুষের হাতে সময় আছে কতটুকু। টিকটক এমন একটা প্ল্যাটফর্ম, যেটা শুরুতেই জানিয়ে দিচ্ছে যে তার ভিডিওর দৈর্ঘ্য ছোট। এই অল্প সময় কাজে লাগিয়ে যাঁরা ভালো কনটেন্ট তৈরি করছেন, নিশ্চয়ই তাঁরা দারুণ সৃজনশীল। বিজ্ঞান, সাহিত্য, বই, ব্যবসা—সব বিষয়সংক্রান্ত ভালো কনটেন্টই আপনি খুঁজে পাবেন, যদি চেষ্টা করেন।
তবে এত বড়সংখ্যক ব্যবহারকারীর রুচি পরিবর্তনের দায়িত্ব একটা করপোরেট প্রতিষ্ঠান কীভাবে নিচ্ছে, সেটা দেখার বিষয়। কিন্তু দিন শেষে অনলাইন বিনোদন বা কনটেন্ট তৈরির সম্ভাবনার জগতের কথা যদি বলেন, তাহলে টিকটকই ভবিষ্যৎ।