জেনে নিন তেতো কেন খাবেন
তিতা খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। বিশেষ করে গরম পড়ার সময়টায় ছোটদের তিতা খাওয়ানোর জন্য ঘরে ঘরে চলে জোরাজুরি। হয় নিম, না হয় করলা—কিছু না কিছু একটা মেনুতে থাকবেই।
তিতা সবজি খাওয়ার এই ব্যাপারটা কিন্তু কেবল এ দেশে নয়, বিদেশেও আছে। অনেক দেশে কেল নামে শাকজাতীয় একটি উপাদান মেলে, যা সালাদে মিশিয়ে খাওয়া হয়। সেটিও তিতকুটে। বাবা–মায়েরা পুষ্টিগুণের দোহাই দিয়ে বাচ্চাদের সেটি খেতে বাধ্য করেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, তিতা খাওয়াটা জরুরি কেন? প্রথম কারণ হচ্ছে, এটি মুখের স্বাদ বদলাতে সাহায্য করে। কাজ করে প্রাকৃতিক প্যালেট ক্লিনজার হিসেবে। প্রথম পাতে তিতা খেলে বাকি সব খাবারই সুস্বাদু লাগবে। সাধারণত তিতা শাকসবজি হজমের পক্ষে সহায়ক হয়, বাড়ায় বিপাকক্রিয়ার হার। আর গরমকালে যেহেতু ক্রমেই মন্দগতি পায় বিপাকের হার, তাই তিতা খাওয়াটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। লক্ষ করলেই দেখবেন, প্রকৃতিতেও এই সময়ে অনেক তিতা শাকসবজি মেলে। শজনের ফুল, কচি নিমপাতা, উচ্ছে, করলা, পাটশাক আরও কত কী। তাই নিয়মিত তিতা খাওয়ার অভ্যাস থাকা ভালো।
নিমপাতা
নিমের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণ নিয়ে তো নতুন করে কিছু বলার নেই। আয়ুর্বেদে মনে করা হয়, নিম নিয়মিত সেবন করলে শরীরের ‘বাত’দোষের খণ্ডন হয়, সেরে যায় সব নিউরোমাসকিউলার সমস্যা। সুস্থ থাকে
ত্বক-চুল, বাড়ে লিভারের কর্মক্ষমতা। নিয়মিত নিমপাতা খেলে ক্ষুদ্রান্ত্রের ব্যাকটেরিয়াও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
উচ্ছে বা করলা
খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম করলা বা উচ্ছের মধ্যে জলীয় অংশ আছে ৯২.২ গ্রাম, আমিষ ২.৫ গ্রাম, শর্করা ৪.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম, আয়রন ১.৮ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১৪৫০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি ওয়ান ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি টু ০.০২ মিলিগ্রাম, অন্যান্য খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম ও খাদ্যশক্তি ২৮ ক্যালরি। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ বাড়ায় প্রতিরোধক্ষমতা, কমায় পেটফাঁপা, নিয়ন্ত্রণে থাকে ব্লাডসুগার। করলা এডিনোসিন মনোফসফেট অ্যাকটিভেটেড প্রোটিন কাইনেজ নামক একধরনের এনজাইম বৃদ্ধি করে শরীরের কোষগুলোর চিনি গ্রহণের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। করলার রস শরীরের কোষের ভেতর গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়াও বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ কমে যায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত করলার রস খেলে উপকার পাবেন। করলায় আছে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে বিটা ক্যারোটিন খুবই উপকারী। নিয়মিত করলা খাওয়ার অভ্যাস করলে সর্দি, কাশি, মৌসুমি জ্বর ও অন্যান্য ছোটখাটো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
পাটশাক
পাটশাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, অ্যালকালয়েড, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, প্রোটিন, লিপিড, কার্বোহাইড্রেট ও ফলিক অ্যাসিড আছে। দেশীয় অন্যান্য শাকের তুলনায় পাটশাকে ক্যারোটিনের পরিমাণও থাকে অনেক বেশি। ১০০ গ্রাম পাটশাকে ক্যালরি থাকে ৭৩। এতে আমিষ থাকে ৩ দশমিক ৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৯৮ মিলিগ্রাম, লোহা ১১ মিলিগ্রাম ও ক্যারোটিন ৬৪০০ (আইইউ)। পাটশাকে রুচি বাড়ে। মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনে। এতে থাকা ভিটামিন সি ও ক্যারোটিন মুখের ঘা দূর করতে সাহায্য করে। রাতকানা রোগের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতাও এতে আছে। কোষ্ঠকাঠিন্যে যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা নিয়মিত পাটশাক খেতে পারেন। যাঁদের বাতের ব্যথা আছে, তাঁদের জন্যও উপকারী। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় যাঁরা দীর্ঘদিন ভুগছেন, পাটশাকে সমাধান খুঁজতে পারেন। রক্ত পরিষ্কারক হিসেবেও পাটশাক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
পাটপাতায় টিউমার ও ক্যানসাররোধক পুষ্টি উপাদান আছে। হাড় ভালো রাখার জন্যও খেতে পারেন। দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সাহায্য করে পাটপাতা।
মেথি
মেথিশাক আর মেথির দানা, দুটোই খুব উপকারী। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে, হজমশক্তি বাড়াতে এর কোনো বিকল্প নেই। বুকে-গলায় জ্বালাভাব ও অ্যাসিড রিফ্লাক্সের থেকে মুক্তি পেতেও মেথি সাহায্য করতে পারে।