অনেকই বলেন, ‘বিয়ের রাতেই বিড়াল মারতে হয়।’ আমি এই কথাটা চিন্তা করেছি অনেকবার, কেন মানুষ এমন কথা বলে! এটা একটা অনিশ্চয়তার বার্তা। একই সঙ্গে এটি একজনের ওপর আজীবন প্রভাব খাটানোর (ডমিনেট) ট্র্যাডিশনাল বার্তা, যাতে একতরফা বাকিটা জীবন একজন মানুষই বারবার জিতে যান আর অন্যজন বশ মেনে গুটিসুটি হয়ে থাকেন। কিন্তু কেন! বিয়ে এক নির্মল পবিত্র বন্ধন। শান্তি আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সেখানে এমন বার্তা মোটেও সুখকর জীবনের ইঙ্গিত দেয় না।
বিয়ের রাতে অনেক ধরনের কথাই হতে পারে সঙ্গীর সঙ্গে। পরিস্থিতি বা পরিবেশই সেটা তৈরি করে দেয়। আগে থেকে চেনাজানা বা ভালোবাসা থাকলে এই রাতের কথা যেমন ভিন্ন রকম হতে পারে। তবে অপরিচিত একজন মানুষ আপনার জীবনে এলে, পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিয়ে হলে দুজনের মানসিক অবস্থা থাকে দুই রকম। এই বিশেষ মানসিক অবস্থার মধ্যে পড়ে একজন চাইলেই পরিস্থিতি বদলাতে পারেন না। দুজনকেই এগিয়ে এসে কথা বলতে হবে। একজন আরেকজনকে জানা-বোঝার এই তো শুরু। সহজ আর স্বাভাবিক কথা দিয়ে শুরু করুন। আজকের দিনের ভালো দিকগুলোই আলাপ শুরু হোক।
১. দুজনের আত্মবিশ্বাস যাতে মজবুত হয়, এমন বাক্য বিয়ের রাতেই বলতে হবে তা নয়, কিন্তু আশ্বস্ত করাতে হবে যে আপনি তাঁকে পছন্দ করে বিয়ে করেছেন। এই বিয়েতে আপনার যথেষ্ট মত ছিল। যত ধরনের ভালো কথাবার্তা বলা যায়, ততই সম্পর্কটা সহজ হবে দুজনের মধ্যে। কথায় যেন একজন আরেকজনকে সহযোগিতা করার মনোভাব প্রকাশ পায়।
২. দুজনের পরিবার সম্বন্ধে ও তাদের পছন্দ-অপছন্দগুলো নিয়ে আলাপ করতে পারেন, যাতে পরদিন সকালে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বা ভুল করে না ফেলেন অন্যজন। পরিবারের সেনসিটিভ মানুষ, সম্মানিত মানুষ এবং আদরের মানুষ সম্পর্কে কোনো একটা সময় বলে নিতে পারেন। তাতে পরদিন যখন তার সঙ্গে কথা বলবেন, তখন সেই মানুষটাও আপনাকে ভালোবেসে ফেলবে। আনন্দ নিয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
৩. যৌথ পরিবারের ক্ষেত্রে স্বামী কীভাবে স্ত্রীকে তাঁর পরিবার আপন করে নিতে পারবেন, এমন বিষয়ে কথা বলা যেতে পারে, তবে বিধিনিষেধ ধরনের বার্তা থাকলে অন্যজন ভয় পেয়ে যেতে পারেন। মন খারাপ হয়ে যেতে পারে, তাই তাঁকে সময় দিন। মন জয় করার চেষ্টা করুন।
৪. জরিপ বলছে, বিয়ের রাতে এশিয়ান দেশগুলোতে স্বামীদের কথাবার্তা বেশি থাকে, বউ কথা বেশি বললেও অনেকে ভয় পান। স্ত্রী কম বলবেন, সামাজিকভাবে এটাই অনেকে ধরে নেন। তবে এটা ঠিক নয়। দুজনকেই কথা বলতে হবে। পারিবারিক বিয়ের ক্ষেত্রে বিয়ে পছন্দ হলে আর চঞ্চল বউ হলে বেশি কথা বলতেই পারেন। এতে সঙ্গী যদি মানসিকভাবে সুস্থ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি খুশি হবেন। তবে মানসিক গ্রুমিং ঠিকমতো না হলে বা পারিবারিক সংকীর্ণতা থাকলে স্বামী বিরক্ত হতে পারেন। তখনই আসলে দম্পতি বুঝে যান পাশের মানুষটার পছন্দ কী বা কেমন। তিনি কী চান।
স্ত্রী যদি হাসিমুখে থাকেন, তাহলে আপনার কথায় তাঁর ভালো লাগছে ধরে নিতে পারেন। নিজেদের দূরত্ব কমানোর কথা চিন্তা করতে পারেন। সঙ্গীর পছন্দের মতো কথা বলে তাঁর মনের অনেক কাছে চলে যেতে পারেন। এ জন্য তাঁর প্রশংসার, তাঁর পরিবারের প্রশংসার বিকল্প নেই। কোনো কথা বা কাজে জোরজবরদস্তি করা একদম যুক্তিসংগত নয়। সময় নিন। উপভোগ করুন ভালো সময়কে।
৫. আর যদি বহুদিনের অপেক্ষমাণ বিয়ে হয়। তবে এই সময়ে কীভাবে পুরোটা ভালোভাবে কাটাতে চান, তার পরিকল্পনা আগেই করুন। কোন কোন কথায় দুজনই খুশি হন, সেসব ছাড়া অন্য কথা উঠলেই নিজের মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা করুন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কত প্রতিকূলতা ও অনিশ্চয়তার মাঝেও এত দিনের অপেক্ষা সার্থক হয়েছে, সেটা ভেবে কৃতজ্ঞ থাকুন।
লেখক: বিয়েবিষয়ক পরামর্শক