>চাকরি খুঁজছেন? জীবনবৃত্তান্ত তৈরি তো? খুঁটির জোর না থাকলে চাকরিদাতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ওই দু-তিন পাতার জীবনবৃত্তান্তই কিন্তু একমাত্র ভরসা। আর এই দু-তিন পাতা লিখতে গিয়েই অনেকে ভুল করে বসেন। বিসমিল্লায় গলদে প্রাথমিক বাছাইয়েই বাদ পড়ে যান অনেকে।
জীবনবৃত্তান্ত লেখার ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ ভুল প্রায় সবার ক্ষেত্রেই হয়। জীবনবৃত্তান্ত নিখুঁত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ, একটি ভুলই নিয়োগকর্তার ভুরু কুঁচকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আসুন জেনে নিই এমনই কিছু ভুলের কথা, যেগুলো শুধরে নিলে পেয়ে যেতে পারেন সাক্ষাৎকারের টিকিট—
১. কিছু জানাশোনা আছে?
ধরুন, একটি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া বিজ্ঞাপনে নির্দিষ্ট পদে লোক চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনি ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছু না জেনেই গড়পড়তা জীবনবৃত্তান্ত পাঠিয়ে আবেদন করে বসলেন। এতে আপনার জীবনবৃত্তান্তটি আর প্রতিষ্ঠানের উপযোগী থাকে না। কারণ, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকে। একেক প্রতিষ্ঠানের কাজও ভিন্ন। সুতরাং সেই অনুযায়ী যদি জীবনবৃত্তান্তে পরিবর্তন না আনা হয়, তবে তা নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়। তাই একটি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার আগে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরন সম্পর্কে জানতে হবে। কিছুটা জানাশোনার পরই আপনি বুঝতে পারবেন, প্রতিষ্ঠানটি আপনার কাজে কোন দক্ষতা ও জ্ঞান চাইছে। সেভাবেই সাজাতে হবে জীবনবৃত্তান্ত। তবেই যোগ্য আবেদনকারীর ছোট্ট তালিকায় নামে দেখতে পাবেন।
২. বর্তমান কাজের বর্ণনা ঠিক আছে?
বিশ্বায়নের যুগে এক চাকরিতে থাকতে থাকতে আরও ভালো কাজের খোঁজ করা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। সব প্রতিষ্ঠানই অভিজ্ঞ কর্মীদের নিতে চায়। যখন এভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানে নিজের জীবনবৃত্তান্ত পাঠাবেন, তখন অবশ্যই বর্তমান কর্মস্থলে নিজের ভূমিকা উল্লেখ করতে হবে। কেউ কেউ এক বা দুই লাইনে কাজের বর্ণনা লিখে দেন। এর বদলে একটু বিস্তারিত তথ্য দিলে নিয়োগকর্তার বুঝতে সুবিধা হবে।
কেউ আবার অনেক কথা লেখেন ঠিকই, কিন্তু তাতে যৌক্তিক বক্তব্য থাকে না। সুতরাং জীবনবৃত্তান্তে কাজের বর্ণনা বা জব ডেসক্রিপশন দেওয়ার সময় কৌশলী হতে হবে। প্রথমে, নিজের বর্তমান কাজ ও প্রতিষ্ঠানে তার প্রভাব সম্পর্কে যৌক্তিক বর্ণনা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, আপনি কোন ধরনের কর্মকর্তার অধীনে কাজ করেন এবং কীভাবে করেন তা জানাতে হবে। এর পর কর্মক্ষেত্রে নিজের লক্ষ্য ও দায়িত্বের জায়গাগুলো স্পষ্ট করতে হবে। শেষ করতে পারেন নিজের পেশাগত অর্জনের কথা জানিয়ে। তবে খেয়াল রাখবেন, বক্তব্য কখনোই ফুলিয়ে বড় করবেন না এবং অতিরঞ্জিত কিছু লিখবেন না।
৩. দক্ষতার বর্ণনা আছে তো?
জীবনবৃত্তান্তে নিজের দক্ষতা সম্পর্কে জানানো খুব জরুরি। একজন নিয়োগকর্তা যখন দেখবেন যে আপনার মধ্যে থাকা দক্ষতা ও গুণাবলি তাঁর প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য প্রয়োজন, তখনই আপনাকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হবে। সুতরাং নিজের দক্ষতার বিবরণ যতটা সম্ভব স্পষ্ট ভাষায় বোঝাতে হবে।
অনেকেই জীবনবৃত্তান্তে নিজের গুণের পরিচয় দিতে গিয়ে সাধারণ কিছু শব্দবন্ধই ব্যবহার করে থাকেন। যেমন কঠোর পরিশ্রমী, সৃষ্টিশীল ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন, মিশুক ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব গড়পড়তা বিশেষণ আদতে নিয়োগকর্তাদের খুব একটা আকৃষ্ট করে না। এর চেয়ে কাজের সংক্ষিপ্ত উদাহরণ দিয়ে নিজের গুণ বর্ণনা করা উচিত।
৪. বেশি তথ্য দিচ্ছেন?
নিয়োগকর্তারা প্রতিদিন অসংখ্য জীবনবৃত্তান্ত দেখেন। জীবনবৃত্তান্ত বাছাইয়ের জন্য তাঁদের হাতে সময়ও কম থাকে। সুতরাং আপনার জীবনবৃত্তান্ত যদি সাত–আট পৃষ্ঠার হয়, তবে হয়তো তা দেখার আগ্রহই হবে না নিয়োগ কমিটিতে থাকা কর্মকর্তাদের। তাই ক্যারিয়ারের প্রতিটি ধাপের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। জীবনবৃত্তান্ত বড়জোর দুই থেকে তিন পৃষ্ঠার হলে ভালো হয়। সেই সঙ্গে শুধু আবেদন করা চাকরির সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলোই জীবনবৃত্তান্তে থাকা উচিত। যদি জীবনবৃত্তান্ত লেখার পর তা বেশি বড় মনে হয়, তবে নিজেকেই প্রশ্ন করুন কোন বিষয়টি অপ্রয়োজনীয়। এরপর গুছিয়ে সম্পাদনা করে ফেলুন জীবনবৃত্তান্তটি।
৫. কর্মজীবনে বিরতির ব্যাখ্যা আছে তো?
অনেক সময়ই দেখা যায়, কোনো কোনো আবেদনকারীর কর্মজীবনে আছে ছোটখাটো বিরতি। কিছু কিছু সময় বছরখানেকের বিরতিও থাকতে পারে। একে নেতিবাচক ভাববেন না। কিন্তু জীবনবৃত্তান্তে এই বিরতির কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। কারণ ব্যাখ্যা না থাকলে নিয়োগকর্তা ভেবে বসতে পারেন, আপনি হয়তো শুয়ে-বসেই দিন কাটিয়েছেন! আর তাতে সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে বাদও পড়তে পারেন।
কর্মজীবনে বিরতির কারণ জানাতে কখনোই দ্বিধাবোধ করা উচিত নয়। হতে পারে বিরতির সময়টিতে আপনি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছেন বা ব্যক্তিগত কোনো সৃষ্টিশীল কাজ করেছেন, তবে সেটিই জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ করুন। এর ফলে আপনি যে সক্রিয় ছিলেন বা কোনো কাজে জড়িত ছিলেন, সেটি প্রমাণিত হবে। যদি শারীরিক অসুস্থতার জন্য লম্বা সময়ের জন্য বিরতি নিয়ে থাকেন, তবে সেটিও উল্লেখ করুন। মনে রাখবেন, একজন ভালো নিয়োগকর্তা কখনোই অসুস্থতার জন্য আপনার প্রতি বৈষম্য করবেন না।
৬. দয়া করে মিথ্যা বলবেন না
কেউ কেউ আছেন, হাজার সত্যের ভিড়ে জীবনবৃত্তান্তে দু-একটা মিথ্যা তথ্য ঢুকিয়ে দেন। মনে রাখবেন, চোরের দশ দিন আর গৃহস্থের এক দিন। সুতরাং প্রতারণা করলে একদিন না একদিন ধরা পড়বেনই। যদি শুরুতেই ধরা পড়ে যান, তবে শুধু ওই চাকরি নয়, হারাতে পারেন একই প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যতে দেওয়া সব সুযোগ। আর যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে চাকরি পেয়েও যান, পরবর্তী সময়ে সেই মিথ্যা যোগ্যতা আপনার ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে সাধ্যাতীত কর্মনৈপুণ্য প্রদর্শনের চাপ। সেই চাপে চিড়েচ্যাপ্টা হওয়ার চেয়ে সত্য বলাই ভালো।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান ও ফোর্বস