জন্ম যদি বঙ্গে তব...

>
কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি
কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি

প্রথম আলো বন্ধুসভায় এ সংখ্যায় ছাপা হলো কয়েকজন কবির বাড়ি নিয়ে ফিচার। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, জীবনানন্দ দাশ, জসীমউদ্দীন, সৈয়দ শামসুল হক ও সুকান্ত ভট্টাচার্যের বাড়ির কথা।
কবি মাইকলে মধুসূদন দত্ত। ‘কপোতাক্ষ নদ’ যাঁর দেশপ্রেমের শ্রেষ্ঠ কবিতা। এই কবির বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে। শৈশব স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে সাগরদাঁড়ি। সাগরদাঁড়ির জমিদারগৃহকে ঘিরেই কবির বাড়ি। সেখানে বসে মধুভক্তদের মিলনমেলা।

১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত সাগরদাঁড়ির জমিদারগৃহে মাতা জাহ্নবী দেবীর কোলজুড়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট আইনজীবী রাজনারায়ণ দত্ত। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে তিনি ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন মৃত্যুবরণ করেন।

মাইকলে মধুসূদন দত্ত (১৮২৪–১৮৭৩)
মাইকলে মধুসূদন দত্ত (১৮২৪–১৮৭৩)

অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী মধুসূদন দত্তের বাড়িতে তাই ভিড় করে দেশ-দেশান্তরের মধুভক্তরা। কবির বাড়ির পুরোটাই জাদুঘর, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর অধিগ্রহণ করেছে। এখানে তৈরি হয়েছে মধুপল্লি। মধুপল্লির ভেতরে রয়েছে কবির বাড়ির একটি অংশ ঠাকুরঘর, মনোমুগ্ধকর দিঘি। আমগাছগুলো সব সময় ছায়া-শীতল পরিবেশ তৈরি করে রাখে। কবিগৃহের প্রবেশদ্বার পার হলেই কবিদের ঠাকুরঘর। এই ঘরের পাশ দিয়েই কবিগৃহে ঢুকলেই কবি পরিবারের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। ঘরগুলো এখনো পুরোনো স্মৃতি বহন করে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে সব সময় স্নিগ্ধ পরিবেশ তৈরি করে রাখে। শেষ প্রান্তে একটি তুলসীগাছ কবির জন্মস্থানকে জানান দেয়। এখানে কবির রচনাবলি সংরক্ষিত আছে। কবির বাড়ির দুই দিক ঘিরে রয়েছে কপোতাক্ষ নদ। যদিও কবির বর্ণনার সেই জৌলুশ এখন আর কপোতাক্ষে নেই। তবে কবির বাড়ির পেছনের অংশে স্মৃতিময় সেই বটগাছ আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছে তার অস্তিত্ব। এই বটবৃক্ষ নিয়ে কবি কবিতা লিখেছিলেন। কবির বাড়ি থেকে বেরিয়ে পশ্চিমে গেলেই আবারও কপোতাক্ষ নদের দেখা মিলবে। কপোতাক্ষ নদের পাশেই জেলা পরিষদের ডাকবাংলো রয়েছে। এই ডাকবাংলোর পেছনেই আছে বিদায় ঘাট। কথিত আছে কবি ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে একবার সাগরদাঁড়িতে আসেন। কিন্তু কঠিন সামাজিক প্রথা এবং জমিদারবাড়ির অনুশাসনের কারণে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে তিনি বজরায় করে আবার ফিরে যান।
কবির শৈশব স্মৃতির অনন্য নিদর্শন হয়ে পাশের শেখপুরা গ্রামের মসজিদটি। এই মসজিদে কবি পারিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি ফারসি শিখতেন।
কবি সম্পর্কে জানতে কবির বাড়িতে প্রতিদিন পর্যটকেরা ভিড় জমায়। প্রতিবছর কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাগরদাঁড়িতে মধুমেলা বসে।
কবি সম্পর্কে জানার জন্য সাগরদাঁড়িতে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে কবি খসরু পারভেজের সংগ্রহশালা মধুসূদন মিউজিয়াম। এখানে কবির দুর্লভ কিছু ছবি, গ্রন্থ, অনুলিপি দলিল শোভা পাচ্ছে।