করোনাকালে প্রযুক্তিনির্ভরতা বেড়েছে। বেশ কয়েক মাস বন্ধুদের আড্ডা সীমাবদ্ধ ছিল ডিজিটাল মাধ্যমে। বন্ধুদের এই ডিজিটাল আড্ডায় কখনো কখনো খানিক সময়ের জন্য যোগ দিয়েছেন অনেক মা। জীবনধারা এখন অনেকাংশেই ফিরছে স্বাভাবিকতায়। মুখোমুখি আড্ডা, দেখা-সাক্ষাৎ একেবারে বন্ধ নেই। একটু এদিক-ওদিক ঘুরতে যাচ্ছেন অনেকে। ছুটিতে কোথাও সময় কাটাতে পরিবারের সবাইকে যুক্ত করে নিতে পারেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান নেহাল করিম শোনালেন তাঁর ছোটবেলার কথা। একটা বাড়িতেই তখন ছিল অনেক মানুষের বাস। এ ছাড়া সময়-সুযোগ করে প্রায়ই আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা হতো। প্রতিবেশীদের সঙ্গেও সময় কাটাতেন। আজকের প্রযুক্তিনির্ভর পৃথিবীতে এমনটা দেখা যায় না বললেই চলে। মুঠোফোনে কথা বলেই খোঁজখবর নেওয়ার কাজ সারছেন বেশির ভাগ মানুষ। উৎসব আর শোক—এই দুটি ছাড়া যেন কারও সঙ্গে দেখা হয় না আজকাল। সেদিনের সেই সুন্দর সময়গুলো পুরোপুরিভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হলেও পরিবারের জন্য নিয়ম করে সময় রাখার বিকল্প নেই বলে জানালেন তিনি। কোনো কিছুর অভাব না থাকলেও আপনজনদের সময়ের অভাবেই ব্যাহত হয় শিশুর বেড়ে ওঠা, কষ্টে থাকেন বয়োজ্যেষ্ঠরা, নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে মিষ্টি-মধুর পারিবারিক সম্পর্কগুলো।
বাসায় যখন
বয়োজ্যেষ্ঠরা বাড়ির বাইরে সময় কাটাতে স্বস্তি না পেলে মাঝেমধ্যে বাড়িতেই করতে পারেন ঘরোয় কোনো আয়োজন। পরিবারের বাকিদের ডেকে নিতে পারেন বাড়িতে। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতায়াত করা ভালো। এতে মা-বাবা যুক্ত হবেন নির্মল হাসি-আনন্দে। হলোই না হয় বাড়িতে একটু হইচই। কখনো আবার বাড়িতে আত্মীয়দেরও নিমন্ত্রণ জানাতে পারেন। হয়তো তাঁদের বাড়িই গেলেন কোনো দিন মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে, ছোট্ট কোনো চায়ের আড্ডায়।
বাড়িতে অতিথি মানেই কিন্তু বিশাল কোনো রান্নাবান্নার আয়োজন নয়। হালকা খাবারের সঙ্গে চলতে পারে মনের মতো আড্ডা। ছুটির দিনটা সবার সঙ্গে কাটানোটাই বড় কথা। বাড়িতে রান্নার ঝামেলা কমাতে বাইরে থেকে খাবার আনিয়েও নিতে পারেন।
পারিবারিক কিছু সময়
সপ্তাহের প্রতিটি দিনই বাড়ির সব সদস্য অন্তত এক বেলা একসঙ্গে বসে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হবে। বাবা ফিরছেন আর সন্তান ঘুমিয়ে গেছে কিংবা সন্তান স্কুলের জন্য বেরিয়ে গেছে আর বাবা তখন ঘুমে, এমনভাবে সাক্ষাৎহীন দিন যেন না কাটে।
প্রযুক্তিও থাকবে রোজকার জীবনে, সন্তানকে ভালো-মন্দের ফারাক করতে শেখালে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে অভিভাবকের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ঝুঁকি কমবে। এমনকি সন্তানই একটু বড় হওয়ার পর ছুটির দিনগুলোতে মা-বাবাকে পাশে নিয়ে তাঁদের পছন্দমতো কোনো ভিডিও দেখতে পারে, দেখাতে পারে এমন কোনো ছবি, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন চেনা কোনো মানুষ।
মা-বাবা হয়তো প্রতিদিন নিজেরাই হাঁটতে যান সকালে বা বিকেলে, ছুটির দিনটাতে আপনি সঙ্গ দিতে পারেন তাঁদের হাঁটায়। শিশুদের নিয়ে খেলতে পারেন বুদ্ধির খেলা। এগুলো আনন্দ দেবে শিশুদের।
সবাই মিলে সবার কাছে
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাড়ির কাছে ঘুরতে যাওয়া হোক কিংবা দূরে, সঙ্গে নিন বয়োজ্যেষ্ঠদেরও। মা-বাবা যদি অন্য বাড়িতে থাকেন, তাঁদের কাছে গিয়েও সময় কাটাতে পারেন। তবে আপনি যদি নিয়মিত বাইরে যাতায়াত করেন, সে ক্ষেত্রে মা–বাবার সঙ্গে দেখা করতে যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখতে পারেন। তবে এক বাড়িতে থাকলে বাইরে যাওয়ার সময় তাঁদেরকে সঙ্গেই নিয়ে নিতে পারেন। ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে ভালো, তারপরও গাড়িতে ওঠার আগে ঠিকমতো জীবাণুনাশক স্প্রে করে নিন। একসঙ্গে খেতে যেতে পারেন। যতটা সম্ভব, মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়েই আয়েশি দিনগুলো কাটানো উচিত। এতে তাঁদের জীবনেও আসবে বৈচিত্র্য।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. রাসেল আলীর চেষ্টা তেমনই। তাঁর কর্মস্থল ছিল রাজশাহী। গত সপ্তাহে ঢাকায় বদলি হয়েছেন। তাঁর নিজের মা-বাবা এবং শ্বশুর–শাশুড়ির আবাস চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। বন্ধুত্বের আহ্বান তো আছেই, তবে ছুটিছাটা পেলে মা-বাবা ও স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটাতে চেষ্টা করেন তিনি। এখন তিনি একাই আছেন ঢাকায়, স্ত্রী রয়েছেন তাঁর বাবার বাড়িতে। রাসেল চেষ্টা করছেন, নতুন বছরের শুরুতেই ঢাকায় একটা বাসা ঠিক করে স্ত্রীকে সেখানে নিয়ে আসতে। আবারও তখন আগের মতো সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে স্ত্রীর সঙ্গে আলাদা করে সময় কাটাবেন বলে ঠিক করেছেন। আর সময়-সুযোগ করে মা-বাবার সঙ্গে ছুটির দিনগুলো কাটাতে রওনা দেবেন উত্তরবঙ্গের পথে।