চা বিক্রেতার বিদ্যালয়ে পাস করেছে সবাই
>চা বিক্রির টাকায় যে জমি কিনেছিলেন সেখানেই গড়ে তোলেন বিদ্যালয়। চা বিক্রেতা আবদুল খালেকের বিদ্যালয়টি এখন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় আলো ছড়াচ্ছে। এবার এসএসসি পরীক্ষায় এই বিদ্যালয়ের ফলাফল হলো শতভাগ পাস
সময়টা ছিল ১৯৬৫ সাল। চা বিক্রি করে জমানো ৭ হাজার টাকায় ৫২ শতক জমি কেনেন আবদুল খালেক। এরপর ১৯৯৭ ওই জমি বিদ্যালয়ের জন্য দান করেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২২ বছর পর গত বছরের অক্টোবরে এমপিওভুক্ত হয়। কিন্তু ৯০ বছর বয়সী আবদুল খালেকের জন্য আরও বড় চমক এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফল। তাঁর বিদ্যালয়ের ৪৬ জন শিক্ষার্থীর সবাই কৃতকার্য হয়েছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে তিনজন।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার নলুয়া চাঁদপুর গ্রামে অবস্থিত নলুয়া চাঁদপুর উচ্চবিদ্যালয়টি। ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি নলুয়া চাঁদপুর উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে ৪৩৭ জন শিক্ষার্থীর জন্য স্থায়ী শিক্ষক আছেন ছয়জন, খণ্ডকালীন শিক্ষক চারজন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকদের স্পৃহা ছিল ভালো করার। সবার চেষ্টাতেই এই ফল, এই সাফল্য। করোনাকাল না হলে আমরা সবাই মিলে প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে আনন্দ করতাম।’
আলো ছাড়তে চেয়েছিলেন
কয়েক মাস আগে বিদ্যালয়টিতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। আবদুল খালেক তখন বলেন, ‘সে অনেক আগের কথা। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে আমাদের এলাকার হাতে গোনা কয়েকজন তরুণ বিএ পাস করেন। কিন্তু গ্রামের মানুষ ওদের নাম বিকৃত করে উচ্চারণ করত। বিষয়টি আমার মতো একজন চা দোকানদারের মনেও দাগ কাটে। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, গ্রামের মানুষদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে।’
সে ভাবনা থেকেই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। নিজের ৫২ শতক জমি বিলিয়ে দেন প্রতিষ্ঠানের জন্য। গ্রামের নামের সঙ্গে মিল রেখে বিদ্যালয়ের নাম রাখা হলো ‘নলুয়া চাঁদপুর উচ্চবিদ্যালয়’। তিনি বলেন, ‘এখন আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শত শত শিক্ষার্থী। প্রতিদিন বিদ্যালয়ের সামনে বসে চা বানাই, আর শিক্ষার্থীদের হইহুল্লোড় দেখি।’
আবদুল খালেক নিজে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। পারিবারিক টানাপোড়েনের কারণে পড়াশোনা আর এগোয়নি। এরপর এলাকায় চা দোকান দেন।
এসএসসির ফল প্রসঙ্গে আবদুল খালেক বলেন, ‘এবারের ফল আমাকে শান্তি দিয়েছে। এটাই আমার সার্থকতা। এখন আমার চাওয়া এখানে একদিন কলেজ হোক।’