ঘরে থাকুন, আরামে থাকুন
করোনা থেকে রক্ষা পেতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে সবাই বলছেন, ‘ঘরে থাকুন, ভালো থাকুন’। ঘরে থাকার জন্য ঘরের পরিবেশটি হতে হবে আরামদায়ক। তবেই তো মন চাইবে ঘরে থাকতে। গ্রীষ্ম পেরিয়ে সবে শুরু হয়েছে বর্ষাকাল। বৃষ্টি হলেও বেশ গরম পরিবেশে। এ সময় ঘরে আরাম দিতে পারে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র।
এই সময়ে অনেকেই এসি কেনার কথা চিন্তা করেন। এসির বাজারও থাকে চাঙা। কিন্তু এবার করোনার কারণে পরিস্থিতি ভিন্ন। অনেক দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতার আনাগোনা কম। তবে অনলাইনে চাহিদা জানানো ও পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে অনেক এসি বিপণন প্রতিষ্ঠানই।
হরেক রকম
বাজারে দেশি-বিদেশি অনেক ব্র্যান্ডের এসি রয়েছে। ব্র্যান্ডভেদে রয়েছে দামের পার্থক্য। ভিন্নতা রয়েছে ওয়ারেন্টির বেলাতেও। আবার কোনো কোনো ব্র্যান্ডের এসিতে এখন আছে বিশেষ মূল্যছাড়। ভিন্নতা রয়েছে আয়তন ও নকশার ক্ষেত্রেও।
ট্রান্সটেক
ট্রান্সকম ডিজিটালে ট্রান্সটেক ব্র্যান্ডের এসি পাওয়া যাচ্ছে। এক টন থেকে ট্রান্সটেকের এসি শুরু। প্রতিষ্ঠানটির এসি কেনার ক্ষেত্রে ২৭টি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কেনার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ৬ থেকে ৩৬ মাসের কিস্তিতে কেনার সুযোগ রয়েছে। ৬ মাসের কিস্তির ক্ষেত্রে কোনো ইন্টারেস্ট দিতে হবে না। ট্রান্সটেক ছাড়াও ওয়ার্লপুল, প্যানাসনিক ও হিটাচি ব্র্যান্ডের এসি পাওয়া যায় ট্রান্সকম ডিজিটালে।
এলজি
আধুনিক প্রযুক্তির ইনভার্টার এসি নিয়ে এসেছে এলজি। ইনভার্টার এসিগুলো মূলত বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। এলজি ডুয়েল ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বলে তারা বলছে। এ ছাড়া এই এসিগুলোর বিশেষ সুবিধা হিসেবে রয়েছে ওয়াই-ফাই সংযোগ ও মশারোধক ব্যবস্থা। এসিগুলোর কম্প্রেসরের নির্দিষ্ট মেয়াদে ওয়ারেন্টি। সঙ্গে রয়েছে যন্ত্রাংশ ও সার্ভিস ওয়ারেন্টিও। কিস্তিতে কেনার সুবিধাও দিচ্ছে এলজি।
মিনিস্টার
মিনিস্টারের চারটি মডেলের এসি বাজারে পাওয়া যায়—ইনভার্টার, নন–ইনভার্টার, সিলিং ও ক্যাসেট এসি। ইনভার্টার, নন–ইনভার্টার এসি এক, দেড় ও দুই টনের হয়। ক্যাসেট এসি ৩ টন ও সিলিং এসি চার টনের। মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক লিমিটেডের হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন কে এম জি কিবরিয়া জানান, মিনিস্টার ইনভার্টার এসিতে ১২ বছর ও নন–ইনভার্টার এসির ৭ বছরের কম্প্রেসর গ্যারান্টি রয়েছে। ইনভার্টার প্রযুক্তিতে তাই বিদ্যুতের খরচ কম। মিনিস্টার এসির রয়েছে স্মার্ট কন্ট্রোল সিস্টেম। ফলে স্মার্টফোন দিয়ে এসি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
করোনাকালে ক্রেতাদের জন্য মিনিস্টার এসি বিশেষ ছাড় দিচ্ছে। সহজ কিস্তিতে কেনার সুবিধাও রয়েছে। সারা দেশে মিনিস্টারের ৩০০টির বেশি সার্ভিস সেন্টার রয়েছে।
সিঙ্গার
দেশের বাজারে সিঙ্গারের রয়েছে তিন ধরনের এসি। স্ট্যান্ডার্ড, ইনভার্টার ও সেমি কমার্শিয়াল সিরিজ। সিঙ্গার এসিতে থাকছে তিন বছরের ওয়ারেন্টি ও বিনা মূল্যে স্থাপনের সুবিধা।
ওয়ালটন
বর্তমানে ওয়ালটনের রয়েছে বেশ কয়েক ধরনের এসি। এগুলো এক টন থেকে শুরু। মান ও আয়তনের ভিন্নতার কারণে দামেরও ভিন্নতা রয়েছে। ওয়ালটনের ইনভার্টার এসির কম্প্রেসরে ১০ বছরের গ্যারান্টি, ৬ মাসের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি সুবিধা, বিনিময় বা এক্সচেঞ্জ সুবিধায় যেকোনো ব্র্যান্ডের এসির বদলে ওয়ালটনের নতুন এসি কেনার সুযোগ রয়েছে।
ভিশন
আরএফএল ইলেকট্রনিকসের ভিশন ব্র্যান্ডের কয়েক ধরনের এসি রয়েছে। ভিশনের এসিগুলো ১ থেকে ৫ টনের মধ্যে। রয়েছে সাদা, সাদার ওপর সোনালি, রুপালি ও কালোর নকশা।
এলিট
এলিটের বর্তমানে এক, দেড়, দুই, তিন, চার ও পাঁচ টনের এসি বাজারে রয়েছে।
পাওয়া যাবে কোথায়
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অনলাইন বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। তাই বাজারে না গিয়েও অনলাইনে কিনতে পারেন এসি। বর্তমানে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি করছে এসি। এ ছাড়া অন্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটেও বিক্রি হয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এই যন্ত্র।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেট, গুলশান, ধানমন্ডি, বসুন্ধরা, বনানী, রামপুরা, কাকরাইল, পুরান ঢাকা, শ্যামলী, মিরপুর, উত্তরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমে এয়ারকন্ডিশনার পাওয়া যায়। এখন বিকেল চারটা পর্যন্ত খোলা থাকে বাজার বা দোকান।
কেনার আগে
বাজারে বাসাবাড়ি বা অফিসে ব্যবহারের জন্য আলাদা এসি রয়েছে। ঢাকার রামপুরার তালুকদার স্টোরের বিক্রয় ব্যবস্থাপক সবুজ মিয়া বলেন, ভালো ব্র্যান্ডের এসি দেখেশুনে কিনতে পারলে সেটি প্রায় এক যুগের বেশি সময় টিকে যায়। ধুলাবালুমুক্ত পরিচ্ছন্ন স্থানে এসি বসানো উচিত। দক্ষ লোকের মাধ্যমে সঠিকভাবে এসি স্থাপন করতে হবে। এসির ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। ইনডোর ও আউটডোর ইউনিটের সামনে পর্যাপ্ত খালি জায়গা রাখতে হবে, যাতে করে প্রতিটি কোনায় বাতাস ছড়াতে পারে।
এসি কেনার আগে দেখেশুনে কিনতে হবে। কোথায় কতটুকু ঘরে ব্যবহার করবেন, ঘরে কী পরিমাণ আসবাব আছে, সে অনুযায়ী এসি কিনতে হবে। আগে থেকে ধারণা রাখতে হবে দরদামের ওপরও। বাড়তি জানালা থাকলে কিনতে পারেন উইন্ডো এসি। এ ধরনের এসি ভেতরের গরম হাওয়া বাইরে বের করে দেয়। সিঙ্গেল হোসের চেয়ে ডুয়েল হোসের এসি ঘর ঠান্ডা রাখতে বেশি কাজ দেবে। এসি কেনার আগে নিজের ঘরের আয়তন সম্পর্কে ভালো করে ধারণা নিন। নিজের ঘরের আয়তন অনুযায়ী এসি যদি কেনেন, তাহলে ঘর অনেক ভালোভাবে ঠান্ডা হবে।
করোনাকালে ঘরে এসি চালানো
আপনার এসি ২৫ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড অর্থাৎ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় চালাতে পারেন। এটা শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু জ্বর বা কাশি থাকলে ব্যবহার না করাই ভালো। আর করোনায় আক্রান্ত হলে এসি কম ব্যবহার করতে হবে।
যদি ঘরে কেউ আইসোলেশনে থাকেন, তাহলে এসি না চালানোই ভালো। সবচেয়ে বড় কথা হলো, সতর্কভাবে এসি ব্যবহার করতে হবে, যাতে ঘরে থাকা মানুষের কোনো সমস্যা না হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সাধারণ তাপমাত্রায় এসি চালালে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে ঘরে কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তা চালাতে হবে। আর সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা উচিত।
ডা. রাকিবুজ্জামান
চিকিৎসক, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা
সতর্কতা ও যত্ন
l বছরের বেশ কয়েক মাস এসি বন্ধ থাকে বা প্রায় চালানোই হয় না। তাই নতুন করে এসি চালানোর আগে একবার পেশাদার টেকনিশিয়ান দিয়ে চেকআপ এবং সার্ভিসিং করে নেওয়া ভালো। এসির এয়ার ফিল্টারে কোনো ময়লা জমেছে কি না, বৈদ্যুতিক সংযোগ ঠিক আছে কি না, ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত হয়ে এসি চালানো উচিত। তা ছাড়া দেশে প্রচুর ধুলাবালু বলে এসির যত্নটাও বেশি করে নেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য অন্তত মাসে একবার ফিল্টার পরিষ্কার করা ভালো।
l এসির বৈদ্যুতিক লাইন, সকেট, ফিল্টার—এসবের লোডটা ঠিকমতো পরীক্ষা করতে হবে। লোডশেডিংয়ের পর বৈদ্যুতিক শক্তি যে পরিমাণ আসার কথা, সে পরিমাণ না এসে যদি কম আসে, তাহলে বৈদ্যুতিক যন্ত্র নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ জন্য অনেক দিন বন্ধ থাকার জন্য অবশ্যই এসির লাইন পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। অনেক দিন বন্ধ থাকার পর এসির ভেতরে শব্দ হতে থাকে। আবার এসি অনেক দিন বন্ধ করলে পানি পড়তে পারে।
l অনেক দিন বন্ধ থাকলে এসির ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হয় কুলিং বা ঠান্ডা করার ক্ষমতা কমে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে এসির ভেতরের নেট খুলে ধুলা পরিষ্কার করে নিতে হবে। ব্যবহারকারী নিজেই সাধারণ উপায়ে এসির ইনডোর খুলে নেট ওয়াশ করে নিতে পারেন।
l ঠান্ডা হওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে বুঝতে হবে এসির ভেতরে গ্যাস ফুরিয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসেবা প্রদানকারী প্রতিনিধিদের মাধ্যমে গ্যাস রিফিল করে নিতে পারেন। বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদানের সময় পার হয়ে গেলে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে।