গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে
পৃথিবীজুড়ে কোন রোগের ওষুধ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় জানেন? গ্যাস্ট্রিক। আমরা সবাই কমবেশি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগি। অনিয়মিত জীবনযাপন, শরীরের প্রকৃতি বা ঋতু না বুঝে খাওয়াদাওয়া, ঘুমের সময় নির্দিষ্ট না থাকা, মানসিক চাপে ভোগা, নানা কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের শরীরে ক্ষতিকারক বায়ু তৈরি হয়, পরে যা বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার প্রতিকারকে আমরা দুইভাবে বিবেচনা করতে পারি। গ্যাস্ট্রিকের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দূরীকরণ এবং হঠাৎ গ্যাস হলে তখন করণীয়—দুই ক্ষেত্রের জন্যই সমাধান আছে যোগব্যায়াম বা ইয়োগাতে। এমন দুটি আসন সম্পর্কে জানা যাক।
পবন মুক্তাসন
যেভাবে করবেন
—দুই পা টান টান করে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন।
—দুটো হাতের আঙুলগুলো পরস্পরের সঙ্গে ফাঁসিয়ে ডান হাঁটুর ওপরে রাখুন।
—শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাঁটুকে বুকের সঙ্গে লাগান এবং মাথা ওপরের দিকে তুলে নাক হাঁটুর সঙ্গে স্পর্শ করুন।
—সামর্থ্য অনুযায়ী ১০-৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত দম আটকে রেখে, এই অবস্থায় শ্বাস নিতে নিতে আবার সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন।
—এরপর বাঁ পায়েও একইভাবে করুন।
—শেষে দুই পা জোড় করে একসঙ্গে করুন।
—একটা পূর্ণ চক্র হলো। এভাবে ৩-৪ চক্র করুন।
—হঠাৎ গ্যাস হলে সেই গ্যাস শরীর থেকে বের করতে ৫-১০ চক্র পর্যন্ত করতে পারেন।
লাভ
এই আসন শরীর থেকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্যাস বের করতে সাহায্য করে।
দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে।
সতর্কতা
কোমর বা ঘাড়ে ব্যথা থাকলে মাথা মাটিতে রেখেই করবেন। হাঁটুকে নাক স্পর্শ করার প্রয়োজন নেই।
মণ্ডূকাসন
যেভাবে করবেন
—বজ্রাসনে বসুন।
—এক হাতের ওপর অন্য হাতের পাতা রাখুন।
—এবার দুই হাতের এই জোড় পাতাকে নাভির ওপর রেখে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সামনের দিকে ঝুঁকুন।
—শ্বাসপ্রশ্বাস ধীরে ধীরে চলবে।
—সাধ্য অনুযায়ী ১০-৩০ সেকেন্ড এভাবেই থাকুন।
—৩ থেকে ৫ বার করুন।
লাভ
— দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে।
— হজমশক্তির উন্নতি ঘটে।
— অগ্ন্যাশয়/প্যানক্রিয়াসকে সক্রিয় করে।
— ডায়াবেটিসের সমস্যা দূর করে।
সতর্কতা
— হঠাৎ গ্যাস হলে তখন এ আসন করবেন না।
— মাসিক চলা অবস্থায় এ আসন নিষেধ।
ধনুরাসন
যেভাবে করবেন
—দুই পায়ের মাঝে হালকা ফাঁকা রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন।
—পা দুটো হাঁটু থেকে মুড়ে পায়ের গোড়ালি নিতম্বের ওপর রাখুন।
—দুই হাত দিয়ে দুই পায়ের গোড়ালির ওপরের অংশ ধরুন।
—শ্বাস নিতে নিতে হাঁটু এবং ঊরু দুটোকে ওপরের ওঠান, যেন হাত সোজা থাকে। একই সঙ্গে বুক, গ্রীবা ও মাথাকেও ওপরের দিকে ওঠান।
—নাভি ও পেটের আশপাশের অংশ মাটির সঙ্গেই লেগে থাকবে এবং শরীরের বাকি অংশ ওপরে।
—আসনে থাকা অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখবেন।
—১০ থেকে ৩০ সেকেন্ড পর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আসন থেকে নেমে আসুন।
—৩ থেকে ৫ বার করুন।
লাভ
—হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়।
—দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে।
—কিডনি ভালো রাখে।
সতর্কতা
—হঠাৎ গ্যাস হলে তখন এটি করবেন না।
—মাসিক চলা অবস্থায় করা নিষেধ।
প্রতিটি আসন একবার যত সময় ধরে করবেন, তারপর ঠিক তত সময় ধরে নিশ্বাস নিন। যেমন মণ্ডূকাসন একবার ৩০ সেকেন্ড করলে ৩০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে আবার শুরু করবেন।