এইচআইভি পজিটিভ একজন নারী সন্তান নিতে পারবেন না, এমন কোনো কথা নেই। তবে ঝুঁকি রয়েছে। তিনটি উপায়ে মা থেকে শিশুর শরীরে এইচআইভির সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থা, প্রসব ও বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়। গর্ভাবস্থায় এইচআইভি প্লাসেন্টার মাধ্যমে ভ্রূণে যেতে পারে এবং ভ্রূণকে সংক্রমিত করতে পারে। প্রসবের সময় শিশু মায়ের রক্ত ও অন্যান্য তরলের মাধ্যমে ভাইরাসের সংস্পর্শে আসতে পারে। একইভাবে এইডসে আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধ পান করলে শিশুরও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে অন্তঃসত্ত্বা হলেই সব নারীকে এইচআইভি পরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। এতে আগে থেকেই সতর্ক থাকা যায়। ঝুঁকি এড়ানো যায়। এরপরও এইচআইভি থেকে শিশুর সুরক্ষায় আরও কিছু উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে।
সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায়
যদি পরীক্ষায় অন্তঃসত্ত্বা নারী এইচআইভি পজিটিভ হয়, তবে শিশুর এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে বাড়তি যত্নবান হতে হবে। শিশুর সুরক্ষায় নিরাপদ অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল চিকিৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে শিশুর এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব।
যে নারীরা আগে থেকেই এইচআইভি-এইডসের চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাঁরা সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনার কথা আগাম চিকিৎসককে জানান। তাঁদের দ্রুত চিকিৎসা শুরুর পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এইচআইভির সংক্রমণ প্রতিরোধে শিশুর জন্মের পর চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ওই মায়ের চিকিৎসা দরকার হয়। সঠিক সময়ে ও কার্যকর উপায়ে চিকিত্সা নেওয়া হলে শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ কমে আসে।
সঠিক সময়ে ও কার্যকর চিকিত্সার ফলে অনেক সময় নারীর শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ এতটাই কমে আসে যে, একে ‘আনডেটেক্টেবল’ (আনডেটেক্টেবল ভাইরাল লোড) বলা হয়। এর মানে হলো, এই নারীরা স্বাভাবিক প্রসবের পরিকল্পনা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে প্রসবের সময় শিশুর শরীরে এইচআইভির সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কম থাকে।
এইচআইভি এবং বুকের দুধ খাওয়ানো
এইচআইভি–এইডসে আক্রান্ত মা যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, তবে ওই মাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। এ জন্য শিশুর জন্মের পরপর এইচআইভি পরীক্ষা করা উচিত। এর চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর আবারও পরীক্ষা করা যেতে পারে।
এইচআইভি পজিটিভ একজন নারী সন্তান নিতে পারবেন না, এমন কোনো কথা নেই। তবে ঝুঁকি রয়েছে।
এইচআইভি পজিটিভ নারীদের সেবায় স্বাস্থ্যসেবা খাতে কর্মরত ব্যক্তিদের একটি সমন্বিত দলের প্রয়োজন হয়। এ দলে নার্স, ল্যাবরেটরির প্রযুক্তিবিদ, ফার্মাসিস্ট, সমাজকর্মী ও বিভিন্ন বিষয়ের বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অন্তর্ভুক্ত থাকেন। সঠিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া মা থেকে শিশুর মধ্যে এইচআইভির সংক্রমণ বেশি হয়। এ জন্য প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা।
একজন এইচআইভি আক্রান্ত নারী সন্তান নিতে পারবেন না, এমন কোনো কথা নেই। তবে সন্তান নেওয়ার আগে তাঁর প্রস্তুতি দরকার। শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতির পরিমাণ জানা, গর্ভাবস্থায় কোন ওষুধগুলো বদলাতে হবে, সেসব জানতে নিয়মিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে। প্রসবের মাধ্যম ও সঠিক পরিকল্পনা (এআরটি প্রফিল্যাক্সিস) করতে হবে।
এইচআইভি-এইডস-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, মানসিক স্বাস্থ্য চিকিত্সক ও শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে সমন্বয় করে অন্তঃসত্ত্বা নারীর প্রসব-পরবর্তী সেবা নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালে থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে মা ও শিশু—উভয়ের জন্য এআরটির পদ্ধতিগুলো নির্ধারণ করতে হবে। ভবিষ্যতে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়ে মায়ের কাউন্সেলিং করা প্রয়োজন হতে পারে।