প্রতিদিনের ব্যস্ত এই জীবনে কর্মজীবীরা একটু ছুটির আশায় থাকেন সব সময়। কোনো একটি উৎসব এলে বা টানা কয়েক দিন ছুটি পেলে দল বেঁধে সবাই ছোটেন চেনাজানা পরিসর ছেড়ে। কিন্তু এমন ছুটিও আছে, যেটা কেউই চান না। অসুস্থতাজনিত দীর্ঘ ছুটি এমন। একে ‘অসুখী ছুটি’ বলা যায়।
সাধারণ ছুটি কখন শুরু হয়ে শেষ হয়ে যায়, সেটা বোঝা যায় না। আর অসুখী ছুটি কাটতেই চায় না। সারা দিন শুয়ে-বসে থাকতে কত দিন আর ভালো লাগে? এই সময় অনেকে কাজে লাগান প্রচুর বই পড়ে, গান শুনে কিংবা টিভি-সিনেমা দেখে। অসুখ শরীরে, মনের খাবার দিয়ে সেটা বেশি দিন ভুলে থাকা যায় না। কেউ কেউ আশপাশটা ঘুরে আসেন এই সময়। নিজের গ্রামের বাড়িতেও চলে যান। কারও বা আড্ডা দিতে ভালো লাগে। যাঁর যে ব্যাপারে আগ্রহ, তেমন কিছুই করা উচিত এ সময়।
একটা ব্যাপার অনেকে খেয়াল করেন না, অসুস্থতাজনিত ছুটি তাঁর সামনে একটা বড় সুযোগ এনে দেয়। এই সময় জীবনটাকে নতুন করে দেখা যায়। যাপিত জীবন যেমন চলছে, সেভাবেই চলবে? নাকি নতুন কিছু করার আছে এই জীবনে? এই সময়ে অসুস্থ ব্যক্তি ভাবতে পারেন, যে অভ্যাস বা স্বভাবগুলোর দাস হয়ে আছেন তিনি, সেগুলোর কোনোটার পরিবর্তন কি করতে হবে? যদি তেমন বাজে কোনো অভ্যাস বা স্বভাব পাওয়া যায়, যদি কেউ সেটা বুঝতে পারেন, তাহলে সেটা পরিবর্তনের চেষ্টা করতে পারেন।
জীবনে পরিবারের, বিশেষ করে বাবা-মা বা জীবনসঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা সামনে চলে আসে এরকম ছুটিতে। নিজের জীবন সুন্দর করার ভাবনা অনেকে এমনিতেও ভাবতে পারেন। কিন্তু অন্যের জীবনে কী করে ভালো কিছু করা যায়, সে ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে অসুস্থতার দিনগুলোতে। একটু সুন্দর ব্যবহার, একটু সমানুভূতি, একটা ভালো উদ্যোগ বদলে দিতে পারে আরও অনেকের জীবন। ছোট ছোট বিষয় নিয়ে অনেক তো ভাবা হলো জীবনে, এবার একটু বড় করে ভাবা যাক।
জীবনটা যে খুব সুন্দর একটা উপহার, এর অর্থ বোঝা যায় অসুখী ছুটির দিনগুলোতে। মূল কাজ কিন্তু অসুস্থতা সারার পর। যে পরিবর্তন আর পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো জীবনে করতে চেয়েছেন সে সময়, সেগুলো করার চেষ্টা করতে হবে তখন।