কী করব, বুঝতে পারছি না

অধ্যাপক মেহতাব খানম
অধ্যাপক মেহতাব খানম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা
সম্পর্কের শুরু ২০১৩ সালের শেষে এসে। এক দিন কথা না বলে আমরা থাকতে পারতাম না। তাকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি। সে-ও বাসত। এভাবেই চলছিল। প্রেমের ক্ষেত্রে যা হয়, তার সব আমাদের মধ্যে হয়েছিল। হাতে হাত রেখে কথা দিয়েছিলাম, কেউ কাউকে কখনো ছেড়ে যাব না। কিন্তু ২০১৭ সালের এপ্রিলে হঠাৎ নিজের মতের বিরুদ্ধে তার বিয়ে হয়ে যায়। দুজনে অনেক চেষ্টা করেও বিয়েটা ঠেকাতে পারিনি। প্রায় এক বছর হয়ে গেল তার বিয়ের। আমি কিছুতেই তাকে ভুলতে পারি না। এখনো আমরা কথা বলি, দেখা করি। সবকিছু ভাগাভাগি করি। আমি লক্ষ করেছি, এ জন্য আমার শারীরিক-মানসিক অনেক ক্ষতি হচ্ছে। পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারি না। কোনোমতে এবার স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দিলাম। কী যে করব, বুঝতে পারছি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

পরামর্শ
তোমাদের দুজনের সম্পর্কটি অনেক দিনের। একে অপরের প্রতি একধরনের নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে। তোমরা সহপাঠী ছিলে কি না, তা জানাওনি। দুজনে একই বয়সের হলে অনেক সময় মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা যখন সম্পর্কের কথা জানতে পারেন, তখন তাঁরা তাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ ক্ষেত্রে কি তা-ই হয়েছে?

মেয়েটি যেহেতু তোমার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না, তার কিন্তু আরও জোরালোভাবে পরিবারের কাছে আবেদন জানানো প্রয়োজন ছিল। সে যদি দৃঢ়তার সঙ্গে তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকত, তাহলে কোনো একসময় হয়তো তাঁরা নমনীয় হতেন। মনে হচ্ছে সে এতটা দৃঢ় চিত্তের নয় বলে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। তুমিও কীভাবে বিয়ে ঠেকাতে চেয়েছ, জানি না। তবে অনেক সময় ভুল কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে হিতে বিপরীত হয়।

মেয়েটির বিয়ে হওয়ার এক বছর পরও তোমরা যে দেখা করে সবকিছু আলোচনা করছ, তাতে কিন্তু পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তোমাদের বর্তমান সম্পর্কটিকে সংজ্ঞায়িত করা কি কঠিন হয়ে পড়ছে না? মেয়েটির জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছে এবং নতুন একজন মানুষের সংযোজন ঘটেছে। শুধু তা-ই নয়, স্বামীর পরিবারও তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তোমরা যে এখনো পরস্পরের সঙ্গে কথা না বলে থাকতে পারছ না, সেটি জানাজানি হলে যে পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা সামলানো কি মেয়েটির পক্ষে সম্ভব? তার স্বামীর সঙ্গে তো এ ক্ষেত্রে প্রতারণাও করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিয়ে যেহেতু একটি ধর্মীয়, সামাজিক ও আইনগত বন্ধন, এটির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোও আমাদের একটি নৈতিক দায়িত্ব। এর পবিত্রতা রক্ষা করতে না পারলে আমাদের মনস্থির করতে হবে, আমরা কি বিয়ের সম্পর্কটি এভাবে চালিয়ে যাব, নাকি এটা থেকে বেরিয়ে আসব?

আমি বুঝতে পারছি, মেয়েটি আবেগের সঙ্গে লড়তে গিয়ে হেরে যাচ্ছে, তবে একই সঙ্গে দুটো সম্পর্কে সে থাকবে কি না, তা তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তোমরা দুজনেই বাস্তবতাগুলো মাথায় না রেখে আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছ। প্রতিনিয়ত দেখা হওয়া ও কথা বলা অব্যাহত থাকায় এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসাও অসম্ভব হয়ে পড়ছে। যেহেতু তুমি ক্রমশ শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছ, দুজনেই চেষ্টা করো কিছুদিন একেবারেই কম যোগাযোগ করতে এবং নিজেদের মনের যত্ন নিতে। ধীরে ধীরে এটিকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে পারলে ভালো হয়। এটি বাস্তবায়ন করতে পারস্পরিক সহযোগিতা খুব প্রয়োজন। প্রথমে খুব কষ্ট হলেও আশা করি জীবনের অন্য চাহিদাগুলো পূরণ করার ফলে হয়তো একসময় বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া সম্ভব হবে। জীবনের একটি লক্ষ্য স্থির করাও খুব প্রয়োজন বলে সেটিকেও গুরুত্ব দাও, কেমন?