কাপড়চোপড় রাখতে
মৌসুম বদলে গেছে। এসেছে শীতকাল। গরমের সময়কার অনেক কাপড়ই এখন তুলে রাখতে হচ্ছে আলমারিতে, ওয়ার্ডরোব আর ড্রয়ারে ড্রয়ারে। কাপড় সংরক্ষণে ও গুছিয়ে রাখতে ঘরে ওয়ার্ডরোব বা ড্রয়ারের ব্যবহার জরুরি। তাই জরুরি আসবাবের নান্দনিক দিকটাও ভাবতে হবে, তাতে ঘর হবে নান্দনিক।
তৈরির উপকরণে ভিন্নতা
ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহারের জন্য আলমারি তৈরি করা হয় ভিন্ন ভিন্ন উপকরণে। একই সঙ্গে ড্রয়ার তৈরির উপকরণে রয়েছে ভিন্নতা। এ ভিন্নতার কারণে তৈরিতে আভিজাত্য ও রুচির ছাপ থাকে। বাজারে কাঠ, স্টিল, প্লাইউড, প্লাস্টিক থেকে শুরু করে নানা ধরনের ড্রয়ার পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে কাঠ ও প্লাস্টিকের ড্রয়ার বাজারে বেশি পাওয়া যায়। এ ছাড়া পার্টিকেল বোর্ডে তৈরি ড্রয়ার বাজারে পাওয়া যায়। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে পছন্দের ড্রয়ার বেছে নিতে পারেন।
বাহারি ব্যবহার
উপকরণের ওপর ড্রয়ারের ব্যবহার অনেকাংশে নির্ভর করে। স্টিলের ড্রয়ারে সাধারণ ভারী ও মৌসুমি ব্যবহারের উপকরণ রাখার কাজে ব্যবহার করা হয়। কাঠের ড্রয়ারে নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকরণের বেশি রাখা হয়। কারণ কাঠের ব্যবহার সহজ ও আরামদায়ক। বর্তমানে প্লাস্টিকের ড্রয়ারের ব্যবহার বাড়ছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ক্রেতাদের মধ্যে কাঠের পরিবর্তে প্লাস্টিকের ড্রয়ার কেনার আগ্রহ বেড়েছে। রামপুরার আরএফএলের বেস্ট বাই শোরুমে প্লাস্টিকের ড্রয়ার কিনতে এসেছিলেন গৃহিণী রুবানা আক্তার। তিনি জানালেন, ‘চাকরির সুবাদে যাঁদের ঢাকায় বসবাস, তাঁদের জন্য প্লাস্টিকের ড্রয়ারের বিকল্প নেই। এগুলো যথেষ্ট হালকা বলে বাসা পরিবর্তনের সময় কম ঝক্কি পোহাতে হয়। তা ছাড়া প্লাস্টিকের আসবাবগুলো খুব আধুনিক ও আকর্ষণীয়।’
আরএফএলের বাড্ডা শোরুমের বিক্রয় ব্যবস্থাপক মো. রুবেল হোসেন জানান, ‘বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্যবহারের বাহারি নকশার ড্রয়ার পাওয়া যায়। বয়সের ওপর নির্ভর করে এসব ড্রয়ার তৈরি করা হয়। এর মধ্যে ছোটদের জন্য তৈরি ড্রয়ারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।’
চাহিদামতো
রিগ্যাল, পারটেক্স, অটবি, লেগাসি, ব্রাদার্স ফার্নিচারে পাওয়া যাবে ব্র্যান্ডের ড্রয়ার। এগুলোতে কয়েক বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্লাস্টিকের ড্রয়ার পাবেন আরএফএলে। এ ছাড়া চাইলে বানিয়েও নিতে পারেন শখের কাঠের ড্রয়ার। সে ক্ষেত্রে পছন্দমতো নকশাটি মিস্ত্রিকে ধরিয়ে দিলেই হলো। বাকি দায়িত্ব তিনিই পালন করবেন। কাঠ পাবেন কাঠের দোকানে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি জায়গায় কাঠের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম উত্তরা ও বাড্ডা-রামপুরা মেইন রোডের দুই পাশেও রয়েছে কাঠের দোকান ও স-মিল। দোকান বা স-মিল থেকে কাঠ বাসায় নিয়ে এসে ড্রয়ার বানানো ভালো।
বানাতে সতর্কতা
ড্রয়ার বানিয়ে নিতে চাইলে মিস্ত্রি নির্বাচন করতে হবে বুঝেশুনে। আগেভাগেই তাঁর মজুরি নির্ধারণ করে নিন। বাজারের কোনো ড্রয়ারের মডেল পছন্দ হলে তার ছবি মিস্ত্রিকে সরবরাহ করুন। কাঠ যদি শুকানো না থাকে তাহলে সময় নিয়ে তা শুকাতে হবে। কাঠ শুকানো না থাকলে পরে বেঁকে যাওয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। ড্রয়ারের কাজে ফিনিশিংটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালোমতো ফিনিশিং না হলে ড্রয়ারে রাখা মূল্যবান কাপড়চোপড় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ জন্য তৈরির সময় ফিনিশিংয়ের ব্যাপারটা অবশ্যই ভালোমতো খেয়াল রাখতে হবে।
ড্রয়ারের যত্ন
নিয়মিত ড্রয়ারের যত্নও নিতে হবে। ড্রয়ারের ভেতরটা যাতে স্যাঁতসেঁতে হয়ে না যায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ড্রয়ারের ভেতরে যাতে তেলাপোকা, ছারপোকাসহ অন্যান্য পোকামাকড় বাসা বাঁধতে না পারে, সে জন্য নিয়মিত ড্রয়ারের ভেতরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে। পোকা এড়াতে ড্রয়ারের ভেতরে ন্যাপথলিন রাখতে পারেন। এতে যদি কাপড়ে গন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে তবে বিকল্প হিসেবে দারুচিনি বা লবঙ্গ ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে ড্রয়ারের ভেতরে শুকনো নিমপাতাও রেখে দিতে পারেন। এতে পোকার ভয় কমবে।
কাঠের ড্রয়ারে ঘুণ পোকার ভয় থাকে। এ জন্য ড্রয়ারে ভেতরে বার্নিশ বা কেরোসিন দিয়ে নিলে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। মাঝেমধ্যে ড্রয়ার খুলে ঘরের ফ্যান চালু করে দিন। এতে আলমারির ভেতরে বাতাস ঢুকে কাপড়চোপড়কে ভ্যাপসা গন্ধ থেকে রেহাই দেবে।
দরদাম ও যেখানে পাবেন
তৈরির উপকরণের ভিন্নতার কারণে ড্রয়ারের দামের পার্থক্য রয়েছে। ড্রয়ার সাধারণত ৩৫০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। ঢাকা শহরের প্রায় সব এলাকায়ই ড্রয়ার পাওয়া যায়। এ ছাড়া নিউমার্কেট, চকবাজার, পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডের মার্কেটগুলো, গুলশান ডিসিসি মার্কেট, বনানী সুপার মার্কেটসহ দেশের প্রায় সব ছোট–বড় ফার্নিচারের দোকানে ড্রয়ার পাওয়া যায়।