করোনাকালে চাকরি হারিয়েছেন, এখন ফ্রিল্যান্সিং করে লাখ টাকা আয় মেহেদীর
কখনো বিদেশি ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ বুঝে নিচ্ছেন। কখনোবা অনলাইনে দিচ্ছেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ। স্কুলের মতো ঘণ্টা হিসেবে চলে ক্লাস। এভাবে ব্যস্ততায় কাটছে মেহেদী হাসানের প্রতিটা দিন। মাদারীপুরের এই তরুণ এখন ঘরে বসেই মাসে আয় করেন লাখ টাকা।
বিনা মূল্যে শেখান ফ্রিল্যান্সিং
স্নাতক শেষে চাকরির পেছনে না ছুটে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নিজেই ‘ড্রিমস আইটি সল্যুশন’ নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন মেহেদী হাসান। শুরুতে এ প্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে তাঁর লক্ষ্য ছিল প্রশিক্ষণ দিয়ে আয় করা। কিন্তু শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই দেশে আসে করোনাভাইরাস। কাজ হারিয়ে নিজেই তখন বিপাকে পড়েন মেহেদী। তবে দমে যাননি তিনি। মেহেদী বলেন, ‘করোনা শুরু হওয়ার পর ঘরবন্দী হয়ে চিন্তা করলাম, ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজ করার চেষ্টা করি। তারপরই অনলাইনে ইন্টারন্যাশনাল ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ওপর একটি কোর্স করে যাত্রা শুরু করি। দ্রুতই ফাইভার মার্কেটপ্লেসে টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার ব্যাজ অর্জন করি। পাশাপাশি আপওয়ার্কেও কাজ করছি।’
নিজে যেহেতু এই কাজের মাধ্যমে ভাগ্য বদলেছেন, তাই অন্য তরুণদেরও এ ধরনের সুযোগ সম্পর্কে জানাতে চান মেহেদী হাসান। দুই বছরে প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, জানালেন মেহেদী। বিনা মূল্যে মেহেদীর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করছেন দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। তাঁদেরই একজন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিন তিশা। বললেন, ‘ক্যাম্পাসের বাইরে চাকরি করতে গিয়ে অনেক সময় নানা হয়রানির শিকার হয়েছি। এর পর থেকেই চিন্তা ছিল, নিজে কিছু করে চলব। পরে বন্ধুদের মাধ্যমে ড্রিমস আইটি সল্যুশন থেকে ফ্রি ফ্রিল্যান্সিং কোর্সের সন্ধান পাই। পরে তিন মাস অনলাইনে ক্লাস করে অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফাইভারে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাই। এখন প্রতি মাসে যা আয় হয়, তা দিয়ে আমার সব খরচ সুন্দরভাবে চলে যায়।’
যেভাবে শেখানো হয়
ডিজিটাল মার্কেটিং–সংক্রান্ত কাজ করতে চাইলে একজন ফ্রিল্যান্সারকে প্রথমে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে একটি কোর্স করতে হয়। দক্ষতা অর্জনের পর কোনো ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে কাজের জন্য আবেদন করা যায়।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ মূলত কী? মেহেদী হাসান বলেন, ‘এটা মূলত অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় কিংবা কোনো সেবা বা প্রতিষ্ঠানের প্রচার-প্রসার করার কাজ। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে কোনো অ্যাপ বা ওয়েবসাইটকে গুগলে টপ র্যাঙ্কিং করা, ই–মেইল মার্কেটিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, সিপিএ মার্কেটিং, ভিডিও মার্কেটিং, কনটেন্ট মার্কেটিংসহ নানা কিছু এ কাজের অন্তর্ভুক্ত। এই কাজ শিখে ফাইভার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসে কাজ করে ভিনদেশ থেকে আয় করা যায়।’
ঘরে বসে চাকরি
বাংলাদেশ সরকারের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের প্রশিক্ষক হিসেবে এরই মধ্যে তিন হাজার মানুষকে অনলাইনে ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন মেহেদী হাসান। এখন তিনি নতুন করে ‘ফিউচার আইটি ইনস্টিটিউট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ৪টি ব্যাচে ২৪০ জন শিক্ষার্থীকে অনলাইনে ক্লাস করান। এখানেও ডিজিটাল মার্কেটিং শেখান তিনি। চারটি ক্লাস করিয়ে প্রতি মাসে মেহেদী হাসান ফিউচার আইটি ইনস্টিটিউট থেকে পান ৭০ হাজার টাকা। এ ছাড়া গল্প ফাউন্ডেশন নামে আরও একটি ফেসবুক গ্রুপে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখাচ্ছেন মেহেদী হাসান। জানালেন, যত দিন সম্ভব, বিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাবেন তিনি।