কবি রবীন্দ্রনাথের প্রিয় কিছু খাবার

কবি রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে তাঁকে উৎসর্গ করে তাঁরই কিছু প্রিয় খাবারের রেসিপি দিয়েছেন নাহিদ ওসমান
ছবি : খালেদ সরকার

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রন্ধনপ্রীতি সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। বিভিন্ন ভোজের নিমন্ত্রণ এবং প্রসিদ্ধ রেস্তোরাঁর মেন্যু কার্ড তিনি সংগ্রহ করেছেন এবং সেগুলো নিয়ে এসে ঠাকুরবাড়ির রসুইঘরের ঠাকুরদের দিয়ে দেশি এবং বিদেশি রান্নার ফিউশন করিয়েছেন, যা থেকে জন্ম নিয়েছে নতুন স্বাদের খাবার।

ব্রিটিশ শেফ শন কেনওয়ার্দি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংগৃহীত মেন্যু কার্ডগুলো পুনরায় সংগ্রহ করে তাঁর ভালোলাগা রেসিপিগুলোর ওপর গবেষণা করেন। পরবর্তী সময়ে একই উপকরণ ও মসলা ব্যবহার করে সেসব খাবার তাঁর নিজ ক্যাফেতে পরিবেশন করেন, যেন তার স্বাদ ও সুবাস অপরিবর্তিত থাকে।

আজ ২৫ বৈশাখ, কবির জন্মদিন। এই দিনে তাঁরই কিছু প্রিয় খাবারের রেসিপি দিয়েছেন নাহিদ ওসমান। রেসিপিগুলো প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র ‘নকশা’র ২০১৪ সালের ৬ মে সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।

কুলফি

কুলফি
ছবি : খালেদ সরকার

উপকরণ: ১০ লিটার দুধ, ২ কেজি চিনি, ৫০ গ্রাম এলাচি।

প্রণালি: ১০ লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে ৫ কেজি করে নিন। এবার এতে ২ কেজি চিনি ও ৫০ গ্রাম এলাচি দিয়ে দিন। এরপর এই মিশ্রণ কুলফির ছাঁচে ঢেলে মুখটা ভালোভাবে আটা দিয়ে বন্ধ করে দিন। এবার প্রায় ১০ লিটার ধারণক্ষমতার একটি হাঁড়িতে হাঁড়ির গলা পরিমাণ বরফ দিন। আর সেই কুলফির ছাঁচগুলো বরফের মধ্যে দিয়ে ২-৩ মিনিট ঝাঁকিয়ে নিন, হয়ে গেল মজাদার কুলফি। ছাঁচ থেকে কুলফি বের করে পরিবেশন করুন।

বরফের মধ্যে লবণ দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। বরফে লবণ দিলে বরফ ধীরে গলে। ডিপফ্রিজেও বানাতে পারেন এটি। এই অনুপাতে আরও কম বা বেশি পরিমাণ কুলফি বানাতে পারেন।

দুধ শুক্তো

দুধ শুক্তো
ছবি : খালেদ সরকার

উপকরণ: ১টা কাঁচাকলা, ১ কাপ কাঁচা পেঁপে, ৮-১০টি লাল বা সাদা মুলা, ৯-১০টি শজনে ডাঁটা, আলু ও মিষ্টি আলু ১ কাপ করে, ১ কাপ বেগুন, ১ কাপ পটোল, ১ কাপ ঝিঙা, ১ কাপ মটরশুঁটি, ১ কাপ উচ্ছে, ৩ টেবিল চামচ পোস্ত দানা, ১ টেবিল চামচ হলুদ সরিষা দানা, ১ কাপ বড়ি, আধা চা-চামচ চিনি, ৩ কাপ দুধ, ঘি ৩ টেবিল চামচ, সরিষা তেল ১ কাপ, লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি: পোস্তদানা ও সরিষা পানিতে ঘণ্টা খানেক ভিজিয়ে রেখে ভালো করে বেটে নিন। সবজিগুলো কেটে একপাশে রেখে দিন। উচ্ছে কেটে অল্প লবণ এবং হলুদ দিয়ে মেখে আধা ঘণ্টা রেখে দিন। কড়াই গরম করে তাতে আধা কাপ সরষে তেল ঢেলে দিন। এবার বড়িগুলো বাদামি করে ভেজে একপাশে রেখে দিন। উচ্ছে ৩-৪ মিনিট ভেজে একপাশে রেখে দিন। একই কড়াইয়ে আরও আধা কাপ তেল ঢেলে গরম করে নিন। এবার পাঁচফোড়ন, তেজপাতা, আদা কুচি ঢেলে দিন। পাঁচফোড়ন ফোটার সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছে বাদে সব সবজি ঢেলে দিন। ৭ থেকে ৮ মিনিট মাঝারি আঁচে ভেজে নিন। সবজি নরম হয়ে এলে ২ কাপ পানি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন আর মাঝে মাঝে নাড়াচাড়া করুন। পানি শুকিয়ে এলে তাতে পোস্ত ও সরিষা বাটা দিয়ে দিন। আর একটু নাড়াচাড়া করে ৩ কাপ দুধ ঢেলে দিন। একটু বলক এলে তাতে বড়ি ও উচ্ছেগুলো দিয়ে ৪ মিনিট রান্না করে নিন। এবার স্বাদমতো লবণ ও চিনি দিন এবং তিন টেবিল চামচ ঘি ঢেলে দিন। ২-৩ মিনিট রান্না করে নামিয়ে নিয়ে পরিবেশন করুন ।

ঝিঙে পোস্ত

ঝিঙে পোস্ত
ছবি : খালেদ সরকার

উপকরণ: ঝিঙে (গোল গোল করে কাটা) আধা কেজি, আলু (ছোট ছোট করে কাটা) ১৫০ গ্রাম, কালিজিরা আধা চা-চামচ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ চা-চামচ, সরিষার তেল ও ঘি (মেশানো) আধা কাপ, সরিষার তেল ও ঘি (আলু ভাজার জন্য) ২ টেবিল চামচ, পোস্ত বাটা ২ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ চেরা ৫-৬টা।

প্রণালি: কড়াই গরম করে ২ টেবিল চামচ সরিষার তেল ও ঘি দিয়ে আলু বাদামি করে ভেজে নিয়ে এক পাশে রেখে দিন। একই কড়াইয়ে আধা কাপ সরিষার তেল ও ঘি দিয়ে দিন। গরম হলে কালিজিরা দিন। কালিজিরা ফুটে গেলে একে একে আদা, রসুন ও পেঁয়াজ বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়ার পর পোস্ত বাটা দিয়ে দিন। তেল ও মসলা আলাদা হয়ে এলে ঝিঙে দিয়ে দিন। এবার ভাজতে থাকুন। ঢাকনা দেবেন না, কারণ ঝিঙে থেকে প্রচুর পানি বের হবে। পানি মাখা মাখা হয়ে এলে কাঁচা মরিচ ও আলু ভাজাগুলো দিয়ে নেড়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলুন। এবার পাত্রে ঢেলে তা পরিবেশন করুন।

চিংড়ি মালাইকারি

চিংড়ি মালাইকারি
ছবি : খালেদ সরকার

উপকরণ: চিংড়ি ১ কেজি, নারকেলের দুধ ৩ কাপ, নারকেল বাটা, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, ঘি ১ কাপ, ধনে গুঁড়া ২ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ২ চা-চামচ, তেজপাতা ২টি, এলাচ ৩-৪টি, দারুচিনি ২ ইঞ্চির ১টি, লবঙ্গ ৩-৪টি, আস্ত ছোট পেঁয়াজ আটটি, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ৮টি, চিনি ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি: চিংড়ি ভালো করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে লেজসহ এক পাশে রেখে দিন। এবার চুলায় কড়াই গরম করে নিন। তাতে এক কাপ ঘি ঢেলে দিন। ঘি গরম হয়ে এলে পেঁয়াজ কুচি এবং তেজপাতা ছেড়ে দিন। পেঁয়াজ সামান্য লাল হয়ে এলে তাতে ৩ কাপ পানি দিয়ে দিন। পেঁয়াজ নরম হয়ে এলে এলাচি, দারুচিনি, লবঙ্গ, আদা বাটা, রসুন বাটা, পেয়াজ বাটা, ধনে, জিরা এবং মরিচের গুঁড়া দিয়ে দিন। ভালো করে কষিয়ে নিন। প্রয়োজনে অল্প অল্প নারকেলের পানি দিয়ে কষিয়ে নিতে পারেন। তেল এবং মসলা আলাদা হয়ে এলে তাতে নারকেল বাটা দিয়ে অল্প কষিয়ে নিন। কষানো মসলার মধ্যে আস্ত পেঁয়াজ ও চিংড়ি ছেড়ে দিয়ে ২ মিনিট ভালো করে কষান। এবার নারকেলের ঘন দুধ দিয়ে দিন। ফুটে উঠলে কাঁচা মরিচ দিয়ে ঢেকে দিন। মাঝারি আঁচে রান্না করুন। ২ মিনিট পর ঢাকনা খুলে তাতে স্বাদমতো লবণ, চিনি এবং লেবুর রস দিয়ে নামিয়ে গরম গরম ভাত অথবা পোলাওয়ের সঙ্গে পরিবেশন করুন।