কতিপয় ক্রিকেটপ্রেমীর ফেসবুকীয় দিনলিপি
ক্রিকেট আমাদের ভালোবাসা, আমরা ক্রিকেটপ্রেমী। আমাদের মধ্যে আছেন আবার কিছু অতি ক্রিকেটপ্রেমী। তাঁরা একাধারে ক্রিকেটবোদ্ধা, নির্বাচক, কোচ, ম্যানেজার, ফিজিওসহ অনেক কিছু। তাঁদের এই প্রতিভাগুলো মূলত ফেসবুককেন্দ্রিক। কেউ কেউ অন্যান্য মাধ্যমেও সক্রিয়।
তো কেমন তাঁদের দিনলিপি? কীভাবে কাটে তাঁদের একটি দিন? খোঁজ নিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছেন রাফি আদনান
সকালে ঘুম ভাঙার পর
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে ঢুঁ মারেন তাঁরা। বিদেশি ক্রিকেটারদের পেজ এবং ক্রিকেটের বিদেশি ট্রল পেজে পায়চারি করেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে যাঁরা ইতিবাচক মন্তব্য করেন, তাঁদের পোস্টে ‘Love From Bangladesh <3’ এবং যাঁরা নেতিবাচক মন্তব্য করেন, তাঁদের ব্রিটিশ ভাষায় প্রতিবাদ জানান (এ ক্ষেত্রে অনেকেই গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্য নেন)।
দুপুরে খাওয়ার আগে
বিছানায় শুয়ে, সোফায় বসে, ব্যস্ত জীবনের এক ফাঁকে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ক্রিকেটপ্রেমীদের শুরু হয় হাহাকার পর্ব। দেশি-বিদেশি সব ক্রিকেটারকে পোস্টে ‘হাহা’ রিঅ্যাকশন দিয়ে তাঁরা পাশে থাকেন। ইনস্টাগ্রামে ‘হাহা’ রিঅ্যাকশন না থাকায় অনেকেই কমেন্টে হাসির ইমো দিয়ে অভাব পূরণ করেন।
দুপুরে খাওয়ার পর
বিছানায় গা এলিয়ে ফেসবুকে ঢুকেই সৃজনশীল জ্ঞানের ভান্ডার খুলে দেন। পড়ন্ত দুপুরের অলস সময়ে তাঁরা দেশীয় ক্রিকেটারদের জ্ঞান বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসেন। দেশের ক্রিকেটারদের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিয়মকানুন সম্পর্কে অবহিত করে পবিত্র দায়িত্ব পালন করেন নিঃস্বার্থে।
সন্ধ্যার পর
সূর্য ডুবে গেলে ইন্টারনেটে ঢুকেই সিংহভাগ ক্রিকেটপ্রেমীর ভেতরে জন্ম নেন একেকজন কোচ, নির্বাচক অথবা ম্যানেজার সত্তা। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোন ব্যাটসম্যানের স্কিলের কী অবস্থা, কোন বোলারের অবস্থা কেমন, এসব নিয়ে ভাবেন এবং মন্তব্য করেন তাঁরা। এ ছাড়া কোন দলের সঙ্গে মিডল অর্ডারে কোন ব্যাটসম্যান ভালো খেলতে পারেন, এমন পরামর্শ দিতেও ভোলেন না কোনো দিন। আর সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ক্রিকেটারদের ফেসবুক পোস্টে নিজের মত জানিয়ে জীবনটাই প্রায় বিলিয়ে দেন কেউ কেউ।
রাতে খাওয়ার আগে
অত্যন্ত ক্ষুধার্ত অবস্থায় বিদেশভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন বাংলাদেশি এই ক্রিকেট–ভক্তরা। রাতের এমন সময়ে তাঁরা সাধারণত এশিয়া মহাদেশের ভেতরেই ভ্রমণ করেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর কোন পেজে আমাদের দেশের ক্রিকেট কিংবা ক্রিকেটারদের সম্পর্কে কটূক্তি করল, তা খোঁজেন। কমেন্টের বিপরীতে কমেন্ট করে প্রতিবাদ জানিয়েই তাঁরা রাতের খাবারের প্রস্তুতি নেবেন ভাবলে আপনি ভুল করছেন। মহাদেশীয় এই কটূক্তিকারীদের ফেসবুক প্রোফাইল রিপোর্ট করে ডিজঅ্যাবল করার প্রক্রিয়া শুরু করে বিজয়ীর বেশে খাবারের প্রস্তুতি নিতে ভালোবাসেন তাঁরা।
রাতে খাওয়ার পর
রিপোর্টকৃত ফেসবুক আইডি সফলভাবে ডিজঅ্যাবল করার পর ক্রিকেটপ্রেমী ফেসবুকাররা নিজেদের রাত্রিকালীন কাজ ভাগ করে নেন। একদল ইউটিউবে, একদল ফেসবুকে এবং একদল ইনস্টাগ্রামে চলে যান। সংখ্যায় ক্ষুদ্র কিন্তু তুলনামূলক স্মার্ট কয়েকজন ক্রিকেটপ্রেমী টুইটারে যান। দেশের ক্রিকেটারদের পারিবারিক, আর্থিক, সামাজিক অনিয়ম সম্পর্কে সচেতন করতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। নিদ্রাহীনতার কারণে উপস্থিত বুদ্ধি লোপ পায় অধিকাংশ ক্রিকেটানুরাগীর। ফলে জীবনঘনিষ্ঠ নিয়মকানুন সম্পর্কে ক্রিকেটারদের সচেতন করতে অনেকেই অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করতে বাধ্য হন।
রাতে ঘুমের ফাঁকে
গভীর ঘুম। অসংখ্য মন্তব্যের পুরস্কারস্বরূপ ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ এসেছেন বাসায়। বাৎসরিক হিসাবমতে ফেসবুকের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চসংখ্যক কমেন্ট করে ফেসবুক নোবেল বিজয়ী হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন এই ক্রিকেটপ্রেমী। আইসিসি তাদের নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে এই ক্রিকেটপ্রেমীকে। কিছুক্ষণ পর নোটিফিকেশনের শব্দে ঘুম ভাঙে তাঁর। কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটি নিতান্ত স্বপ্ন। ভার্চ্যুয়াল কমেন্টযুদ্ধে জড়িয়ে দেশপ্রেমিক এই ক্রিকেট–ভক্তের দুদিন আগে খোলা ফেসবুক আইডি ডিজঅ্যাবল হয়ে গেছে। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল তাঁর। চোখমুখ মুছে আবার উঠে দাঁড়ান তিনি। একটি নতুন শুরুর আশায়। নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করার দিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবেন। সকালে নতুন সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হবে আরেকটি দিন। আরেকটি ক্রিকেটীয় যুদ্ধ শুরুর দিন।
আজকে আব্বা ঝাড়ি দিছে। মেজাজটা খুব খারাপ। তাই ঠিক করছি মুশফিকরে একটু টাইট দিয়া আসুম।
আমার সিজিপিএ কম আসছে। মেজাজ তোর চাইতে বেশি খারাপ। তাই তামিমরে দল থেইকা নট কইরা দিয়া আসি।
দোস্ত, লিটন দাস আইজকা ভাত খাইব কি না, জিগাইতাছে। কী কমু?