বিশ্ব এখনো ভুগছে করোনায়। যদিও করোনার টিকা অনেকটাই সংক্রমণ কমিয়ে আনতে পেরেছে। তবু নেই স্বস্তি। আতঙ্ক যেন কাটছেই না। করোনার জীবাণু ছড়াতে পারে হাতের মাধ্যমে। তাই নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে হাত ধোয়াকেই প্রতিরোধের তালিকায় ১ নম্বরে রেখেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। হাত ধোয়ার বিকল্প নেই। আজ ১৫ অক্টোবর বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসে জেনে নেওয়া যাক, কেনো ধোব হাত। বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হলো, ‘আওয়ার ফিউচার ইজ অ্যাট হ্যান্ড—লেটস মুভ ফরোয়ার্ড টুগেদার’ (আমাদের হাতে আমাদের ভবিষ্যৎ—চলো একসঙ্গে এগিয়ে চলি)।
আপনার সঙ্গে যা কিছু আছে, এর ভেতর সবচেয়ে জীবাণুযুক্ত কী বহন করছেন? রিসার্চ ডটনেট দিয়েছে সেই উত্তর। সেটি আর কিছুই নয়, মানিব্যাগের টাকা। এই টাকা কোত্থেকে কোথায় আসছে, আর কোথায়ই–বা যাচ্ছে কেউ বলতে পারবেন না। তাই প্রতিবার টাকা স্পর্শ করার পর ভালো করে হাত সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে নিয়ম মেনে ধুয়ে নিন। বা হাত জীবাণুমুক্ত করতে লাগান হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
হাত দিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত মুঠোফোন, মাউস, কিবোর্ড, টিভির রিমোট, দরজার হাতল, লিফটের বোতাম, সিঁড়ির রেলিং, পানির কল, চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ, চাবি, টাকা, কাঁচা মাছ-মাংস, সবজি—প্রতিনিয়ত কত কিছুই না ধরি। এসব জিনিসে লেগে থেকে অসংখ্য জীবাণু। হাত দিয়ে নাক–মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দিলে হাতের সেই জীবাণু পৌঁছে যায় ভেতরে। এরপর হাত না ধুয়ে খাবার খেলে অথবা মুখ–চোখ–নাক স্পর্শ করলেও জীবাণু শরীরে ঢুকে যায়। তাই কেবল করোনার জীবাণু নয়, যে কোনো জীবাণুকে রুখতে দিনে অন্তত ছয়বার হাত ধুতেই হবে।
এ ছাড়া বাড়ির বাইরে থেকে ফিরলে, বাথরুম, কিংবা টয়লেট থেকে বের হওয়ার আগে, যে কারও সঙ্গে হাত মেলানো বা কোলাকুলি করার পর (পারতপক্ষে হাত মেলাবেন না, কোলাকুলিও করবেন না), খাবার রান্নার আগে, পরে, খাওয়ার আগে, পরে (চামচ দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন), অসুস্থ কাউকে সেবা দিলে, শরীরে কোনো কাটা অংশে অথবা ক্ষত স্থানে হাত দিলে, শিশুর ডায়াপার বদলালে, নাক ঝাড়লে, হাঁচি–কাশির সময় মুখে হাত দিলে, পোষা প্রাণীর গায়ে হাত দিলে, খাবার দিলে, জুতায় হাত দিলে বা ময়লা পরিষ্কার করলে অবশ্যই হাত ধোবেন।
ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রধান মো. শহীদুল্লাহ্র কাছ থেকেও এল একই ধরনের পরামর্শ। তিনি বলেন, ‘সাবান-পানি দিয়ে নিয়মিত এবং নিয়ম মেনে হাত ধুতে হবে। তাহলে করোনাভাইরাসসহ যেকোনো জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাইরে থেকে ফিরে ভালো করে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাওয়ার আগে ও টয়লেটের পর অবশ্যই হাত ধুতে হবে। কাঁচা মাছ-মাংস বা পশু–পাখি স্পর্শ করলেও ভালো করে হাত ধুতে হবে। হাত দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে বা হাত দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দিলেও হাত ধুতে হবে। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।’
সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার সময়ে প্রথমে পানি দিয়ে হাত ভেজাতে হবে। তারপর সাবান নিয়ে দুই হাতের উভয় দিকে, আঙুলের ফাঁকে এবং নখের নিচে খুব ভালোভাবে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে ঘষে নিতে হবে। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। সাবান-পানি না থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েও হাত জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া যায়।
কর্মক্ষেত্রে কাজ করার সময় কিছুক্ষণ পর পর হাত ধুতে হবে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরলে কোনো কিছু স্পর্শ কারার আগে, অর্থাৎ সবার আগে হাত ধোয়া নিশ্চিত করুন। হাত যাতে বার বার সাবান পানিতে ধোয়ার ফলে রুক্ষ না হয়ে যায়, সেজন্য প্রতিবার হাত ধোয়ার পর, হাত মুছে বা শুকিয়ে হাতে লোশন বা ময়েশ্চারাইজার জাতীয় কিছু লাগাতে পারেন।
বিজ্ঞাপন বার্তা