এই পাঁচ অভ্যাসে বদলে যাবে জীবন

ছোট ছোট অভ্যাসেই আমূল বদলে ফেলা যায় জীবন। শিখে নেওয়া যাক এ রকম পাঁচটি অভ্যাস।  

১. বিছানায় মোবাইল নয়


আমাদের ব্যস্ত জীবনে সবচেয়ে কম গুরুত্ব পায় ঘুম। অন্য কাজে যাতে ছাড় দিতে না হয়, এ জন্য ঘুমের বরাদ্দ থেকে সময় কেড়ে নিতে আমরা পিছপা হই না। আর কম ঘুমের প্রভাব পড়ে আমাদের কাজে, শরীরে, মনেও। ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখে কাজ করতে কার ভালো লাগে! কম ঘুমের কারণে মেজাজ থাকে খিটখিটে, কাজে মন বসানোটাও হয়ে ওঠে চ্যালেঞ্জিং। এখানেই শেষ নয়। কম ঘুম উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, এমনকি স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে বহুগুণ।


আর ঘুমানোর সময় মোবাইল চালালে মোবাইলের স্ক্রিনের আলো প্রভাব ফেলে আমাদের মেলাটোনিন হরমোনের ওপর। এই হরমোন আমাদের ঘুমাতে যাওয়ার এবং ঘুম থেকে ওঠার চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। তাই নিজেকে একটা পরিপূর্ণ ঘুমের স্বাদ দিতে ঘুমানোর ঘণ্টাখানেক আগে থেকে মোবাইল দূরে রাখুন। তার চেয়ে বরং ঘুমানোর আগে পাঁচ মিনিটের জন্য ধ্যান করে নিতে পারেন। দেখবেন, সব দুশ্চিন্তা কোথায় যেন মিলিয়ে গেল! আর আপনি শান্ত আর স্থির মনে ঘুমাতে পারছেন।

২. বিকেলের পর ‘নো’ চা–কফি

 দিন হোক বা রাত—চা বা কফি খেতে কেউ ডাকলে আমরা সানন্দেই রাজি হই। কখনোবা রাতেও নিজের জন্যই বানিয়ে নিই এক কাপ চা। তবে যেকোনো সময় চা-কফি খেয়ে আমরা নিজের অজান্তেই নিজের ক্ষতি করে বসি। চা–কফিতে থাকা ক্যাফেইন আমাদের মানসিকভাবে সজাগ থাকতে সাহায্য করে। কর্মশক্তি বাড়ায়। তবে অতিরিক্ত চা-কফি আমাদের অবসন্ন করে। ঘুম কমিয়ে দেয়। দুশ্চিন্তা বাড়ায়। আর এই ক্যাফেইনের প্রভাব আমাদের শরীরে রয়ে যেতে পারে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত। তাই বিকেলের পর চা-কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

৩. লক্ষ্যগুলো লিখে রাখুন

ধরুন, আপনি একটা নতুন ভাষা শিখতে চান। সে জন্য প্রথমে নিজে কোন অবস্থায় আছেন, সেটা বুঝে নিন। নতুবা আপনি কতটুকু শিখতে চান, ঠিক করতে পারবেন না। তারপর ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন নিজেকে। নিজেই হিসাব রাখুন কতটুকু এগোলেন।  
যখন আমরা কাজের তালিকা বানাই এবং কতটুকু এগোতে পেরেছি সেই হিসাব রাখি, তখন আমাদের ভেতর সচেতনতা তৈরি হয়। আমরা নিজে থেকেই বুঝতে পারি কোথায় পিছিয়ে আছি, কেন কাজটি করতে পারিনি। এভাবে নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারি। ফলে পরে লক্ষ্য স্থির করার ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়ে যায়।

৪. সবার আগে সবচেয়ে কঠিন কাজ


অনেক দিন ধরে কোনো কাজ জমিয়ে রেখেছেন, গড়িমসি করে করাই হচ্ছে না, অথচ কাজটা না করলেই নয়, এমন যদি হয় আপনার দশা, তবে ঘুম থেকে উঠে পড়ুন একটু আগেভাগেই। মুঠোফোন দূরে সরিয়ে রেখে একমনে করে ফেলুন সে কাজ। দেখবেন যতটুকু কঠিন ভেবেছিলেন, ততটা কঠিন আর লাগছে না। চাইলে আপনি এই অভ্যাসটিকে বানিয়ে নিতে পারেন আপনার প্রতিদিনের সঙ্গী।


সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ওই সময়টায় আমাদের মস্তিষ্ক সবচেয়ে বেশি সতেজ থাকে। দিনের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ সময়টা আমরা শান্তভাবে যেকোনো কিছু চিন্তা করতে পারি। তাই দিনের প্রথমভাগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে নিন। অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন অনেক গুণ। আর সারা দিন আপনাকে ‘না করা সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজে’র ভার বয়ে বেড়াতেও হবে না।

৫. কাজে লাগান ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ মোড

আমরা কেউই এখন আর মুঠোফোন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়া চলার কথা আর ভাবতে পারি না। সারাটা দিনই আমাদের ফোনে আসতে থাকে নানা মেসেজ আর নোটিফিকেশন।


ধরুন, মনোযোগ দিয়ে কোনো কাজ করছেন। এই সময় মেসেজের একটা ‘টুং’ শব্দেই নষ্ট হয়ে যায় আপনার মনোযোগ। আর মেসেজ চেক করতে যে–ই ফোনটা হাতে তুলে নিয়েছেন, তারপর আর সময়ের দিকে খেয়াল থাকে না। কখনো ফোনের স্ক্রিনে আমরা এতই বুঁদ হয়ে যাই যে ভুলে যাই কেনইবা ফোনটা হাতে নিয়েছিলাম! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা গেমিং অ্যাপগুলোতে আমাদের টেনে রাখার জন্য নানা ধরনের অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। যে কারণে আমরা মুঠোফোনে আসক্ত হয়ে পড়ি। একটানা কাজে মনোযোগ দিতে পারি না, ক্লান্ত হয়ে যাই। তাই এখনকার সময়ে মুঠোফোনকে বলা হয় সৃজনশীলতার চরম শত্রু!

তাই কাজে বসার আগে মুঠোফোনে চালু করে রাখুন ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ মোড। আবার বন্ধ করে রাখতে পারেন ফোনের ইন্টারনেট কানেকশনও। এতে মনোযোগ দিয়ে যেমন কাজ করতে পারবেন, তেমনি ডেডলাইনের আগে কাজ শেষ করার ব্যাপারেও থাকবেন চাপমুক্ত।